আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ উনিশ-বিশ শতকের বাঙালি সারস্বত-সমাজের প্রথিতযশা পুরুষ। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ পূর্বসূরিদের মধ্যে তিনিই প্রথম বাঙালি মুসলমান, যিনি সর্বমহলে পণ্ডিতরূপে স্বীকৃতি ও সমাদর পেয়েছিলেন।  

সাহিত্যবিশারদের জন্ম ১৮৭১ সালে, মতান্তরে ১৯৬৯ সালে কর্ণফুলীর দক্ষিণে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার সুচক্রদণ্ডী গ্রামে। আবদুল করিমের শৈশব-কৈশোর কেটেছিল মূলত হিন্দু-মুসলমানের রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরুর বহু আগে একটি অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে। এ সম্পর্কে তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘সূচকদণ্ডী পটিয়া থানাসংলগ্ন একটি বর্ধিঞ্চু গ্রাম। ৩০–৩৫ ঘর মুসলমান ছাড়া এই গ্রামের সবাই হিন্দু। তন্মধ্যে ব্রাহ্মণ, বৈদ্য ও কায়স্থই প্রধান। তাঁহাদের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিধারী অনেক লোক আছেন। মুসলমানদের মধ্যে একঘর ভিন্ন আর শিক্ষিত লোক নাই।’ 

সাহিত্য-সাধক-চরিতমালার অন্তর্গত সাহিত্যবিশারদের জীবনীতে (খণ্ড ২২, ১৪১২ সং) পাওয়া যায়, ‘লেখাপড়া চর্চার পারিবারিক ঐতিহ্যের মধ্যে আবদুল করিম বেড়ে ওঠেন। তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে আরবি-ফারসি চর্চার পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজি ভাষা শিক্ষারও চল ছিল। বাড়ির ‘দহলিজে’ই সাহিত্যবিশারদের আরবি-ফারসি বাংলায় হাতেখড়ি।’

তখনকার মুসলমান পরিবারগুলোতে অভিভাবক বা মৌলভিদের তত্ত্বাবধানে ঘরে ঘরে আরবিশিক্ষার প্রাথমিক বই এবং কোরআন পাঠের শিক্ষা দেওয়া হতো নিয়মিত। এরপর যাঁরা আরবি ধারার শিক্ষা নিতে চাইতেন, তাঁদের জন্য বহুসংখ্যক মক্তব-মাদ্রাসা-দরাস প্রভৃতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। আবার এই অঞ্চলে এরই মধ্যে গড়ে উঠেছিল পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থার অনুকরণে প্রাথমিক (ফ্রি স্কুল), মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়।  

সাহিত্যবিশারদও ঘরে শেখেন আরবি-ফারিস। পরে প্রথমে ভর্তি হন সুচক্রদণ্ডী (মিডল) স্কুলে। সেখান থেকে মাধ্যমিক শেষ করে পটিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন (১৮৯৩)। এই স্কুলেই দ্বিতীয় ভাষারূপে সংস্কৃত অধ্যয়ন করেন আবদুল করিম। ওই বছরই তিনি এফএ ক্লাসে (বর্তমান এইচএসসি) ভর্তি হন ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম কলেজে। দুঃখের বিষয়, এফএ পরীক্ষার আগে সন্নিপাত রোগে গুরুতরভাবে আক্রান্ত হলে তিনি পরীক্ষা দিতে পারেননি। তবে ইতিমধ্যে তিনি আয়ত্ত করে ফেলেছেন আরবি-ফারসি, বাংলা-সংস্কৃত, ইংরেজিসহ আধুনিক বিষয় ও ভাষা। তাঁর এই অধ্যয়ন এবং পরিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ ও শিক্ষা পরবর্তীকালে মনীষী আবদুল করিমকে গড়ে তুলেছিল। সাহিত্যবিশারদের ১২ বছরের কনিষ্ঠ পটিয়ার পার্শ্ববর্তী আনোয়ারানিবাসী জীবেন্দ্রকুমার দত্ত আবদুল করিমের ছাত্রজীবনের একটি চমত্কার বর্ণনা দিয়েছেন, ‘আবদুল করিম বিনয়ী ও কতকটা মেধাবী ছিলেন.

..। সংস্কৃত ভাষা শিক্ষায় তাঁর আগ্রহ অত্যধিক প্রবল ছিল। বিদ্যালয়ের সাময়িক পরীক্ষায় তিনি সর্বদাই সংস্কৃতে প্রথম স্থান অধিকার করিতেন। স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে (বর্তমানে নবম) উন্নীত হইয়া অবধি তিনি বাঙ্গালা পুস্তক ও পত্রিকাদি পাঠ করিতে মনোযোগী হন।’  

আবদুল করিম জন্মের আগেই পিতৃহারা হন এবং ১৭ বছর বয়সে মাতৃহারা হন। মা বেঁচে থাকতেই ১১–১২ বছর বয়সে পরিবারের উদ্যোগে তাঁর বিয়ে হয় চাচাতো বোনের সঙ্গে। সন্নিপাত থেকে আরোগ্য লাভের পর তিনি আর কলেজে যাননি। ১৮৯৫-৯৬ এই দুই বছর তিনি স্কুলে শিক্ষকতা করেন—প্রথমে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুলের শিক্ষক ও পরে সীতাকুণ্ড (মিডল) ইংলিশ স্কুলের অস্থায়ী প্রধান শিক্ষক। পরের দুই বছর কাজ করেন আদালতে—চট্টগ্রাম সাবজজ আদালত এবং পরে পটিয়ার দ্বিতীয় মুনসেফ আদালত।   

অক্ষয়চন্দ্র সরকার সম্পাদিত পূর্ণিমা (অগ্রহায়ণ ১৩০৬) পত্রিকায় মধ্যযুগের সাহিত্য নিয়ে আবদুল করিমের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে তা পার্শ্ববর্তী থানা রাঙ্গুনিয়ার খ্যাতনামা কবি নবীনচন্দ্র সেনের নজরে আসে। ‘অপ্রকাশিত প্রাচীন পদাবলী’ শীর্ষক রচনার মাধ্যমে সাহিত্যবিশারদ প্রকৃতপক্ষে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের ইতিহাস নবনির্মাণের কাজটি শুরু করেন। নবীনচন্দ্র সেন চট্টগ্রাম কমিশনার অফিসে বদলি হয়ে এলে তিনি আবদুল করিমকে ওই দপ্তরে করণিকের পদ দেন। কিন্তু জ্যোতিঃ পত্রিকার একটি বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরে কমিশনার দপ্তরের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নবীন সেন কুমিল্লায় বদলি হন; সাহিত্যবিশারদ চাকরি হারান। কিছুদিন পর (১৮৯৯) আবদুল করিম আবার শিক্ষকতায় ফিরে যান আনোয়ারা (মিডল) ইংলিশ স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে। এর অর্ধযুগ পরে (১৯০৬) তিনি চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্কুল ইন্সপেক্টর অফিসে দ্বিতীয় কেরানি পদে যোগ দেন এবং ২৮ বছর পর ওই দপ্তর থেকে অবসর নেন। এরই মধ্যে পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি কলিকাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষক নিযুক্ত হন। অবসর জীবনে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ ও ঋণ সালিসি বোর্ডের মতো স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়ে জনসেবায় ব্রতী হন। অন্যদিকে পূর্ব বাংলার সব প্রগতিশীল সাহিত্য-সাংস্কৃতিক উদ্​যোগে সক্রিয় অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন। 

আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ছিলেন ঐতিহ্যসাধক। তিনি মনে করতেন, ‘সংস্কৃতি…পরিবেশ নিরপেক্ষ নহে’ এবং ‘এই পরিবেশের প্রধান উপাদান ঐতিহ্য’। সাহিত্যবিশারদের জীবনকালেই বাঙালির ঐতিহ্য নিয়ে—বিশেষত হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে—দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। সমগ্র মধ্যযুগে ভারতবর্ষজুড়ে পাশাপাশি বাস করার পরও বিশ শতকে এসে প্রথমে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব ও পরে রক্তক্ষয়ী সংঘাত সাহিত্যবিশারদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। তাঁর ভাষায় এটি হচ্ছে ‘ভেদ–জ্ঞান’। বিশ শতকের শুরুতেই (পৌষ ১৩১০) তিনি লেখেন, ‘ভেদ-জ্ঞান জগতের সমস্ত অনর্থের মূল। এই ভেদ-জ্ঞানে ভারতের যথেষ্ট ক্ষতি হইয়াছে। এখনও যে ভারতের হিন্দু-মুসলমান পরস্পরকে ভেদদৃষ্টিতে দেখিয়া শিহরিয়া উঠেন, ইহা অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়।’ 

এর কয়েক বছর পরের বঙ্গভঙ্গ সাহিত্যবিশারদের সমর্থন পায়নি। তিনি স্বদেশি আন্দোলনে মুসলমান সমাজের অংশগ্রহণের পক্ষে কলম ধরেছিলেন। বঙ্গভঙ্গ রদের দুই বছর পরে (শ্রাবণ ১৩২১) তাঁর বক্তব্য, ‘বঙ্গদেশ হিন্দু ও মুসলমানের দেশ এবং হিন্দু ও মুসলমান লইয়াই বাঙ্গালী জাতি গঠিত।...হিন্দু–মুসলমানের মধ্যে সম্মিলন-সাধনের প্রয়োজন কি, তাহা বোধ হয় এখন আর কাহাকেও বুঝাইয়া বলিতে হইবে না।’

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নতুন দেশ পাকিস্তানে নতুন সাহিত্য গড়ে ওঠার আশাবাদ ব্যক্ত করে সতর্ক করেছেন, ‘তাহা যেন খাঁটি সাহিত্য হয়।’ এই প্রসঙ্গেই তাঁর দীপ্ত উচ্চারণ:

‘মানুষের যেমন মনুষ্যত্বই বড় পরিচয় (হেট কোট, আসকান পায়জামা, ধুতি চাদর বাহিরের রূপসজ্জা মাত্র…। সেক্সপিয়ারের রচনা যদি শুধু খৃষ্টানী সাহিত্য হইত, তাহা হইলে ইংরাজী সাহিত্য কি দরিদ্র হইয়া পড়িত না? তেমনি হাফেজ, রুমী, জামীর রচনা যদি শুধু ইসলামী সাহিত্য হইত, তাহা হইলে তাহার মূল্যও অন্তত বারো আনা কমিয়া যাইত। রবীন্দ্রনাথের রচনা যদি শুধু হিন্দু পাঠকদেরই তৃপ্তির কারণ হইত, তাহা হইলে রবীন্দ্রনাথকে কেহই বিশ্ব-কবি বলিয়া অভিহিত করিত না।’

‘মুসলমানী বাঙ্গালা’ বলে বাংলা ভাষার একটি পৃথক ধারা সৃষ্টির চেষ্টা তাঁর কাছে আমল পায়নি। সাহিত্যবিশারদের বিবেচনায় ওটি ‘মেরুদণ্ড-বিহীন-খিচুড়ী ভাষা’। কেননা তিনি মনে করেন (শ্রাবণ ১৩২১), ‘বাঙ্গালা দেশে বাঙ্গালা ভাষাই বাঙ্গালীর মাতৃভাষা। বঙ্গদেশবাসী হিন্দুর ন্যায় বঙ্গদেশবাসী মুসলমানদিগকেও বাঙ্গালী ভিন্ন আর কিছু বলা যাইতে পারে না। হিন্দুগণের মত পুরুষানুক্রমে মুসলমানেরাও বাঙ্গালা ভাষাই ব্যবহার করিয়া আসিতেছেন।’

তিনি মনে করতেন (১৩২৫), বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষার সব স্তরে ‘শিক্ষার বাহন (medium) মাতৃভাষা বাঙ্গালাই উচিত...’।

আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের সমকালে বাংলায় সাহিত্য সৃষ্টি এবং সাহিত্যের ইতিহাস রচনায় হিন্দু-মুসলমান বিভেদের ছায়া পড়েছিল। তিনি সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতার এই ধারার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। কলকাতায় অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলনের (মে ১৯৩৯) মূল সভাপতির অভিভাষণ তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট:

‘সাহিত্যে জাতি-ধর্ম্মে গণ্ডী আমি কখনও স্বীকার করি নাই, এখনও করি না; কিন্তু ইহার বৈচিত্র্য স্বীকার করি। সাহিত্য হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খৃষ্টান যে-জাতিরই হউক, ইহা সাহিত্য পদবাচ্য হইলেই সার্ব্বজনীন হইয়া থাকে। এই সার্ব্বজনীনতা নানা বৈচিত্র্যের মধ্য হইতেই উদ্ভূত হয়।...’

‘সাহিত্যে সৌন্দর্য্যের পরিসর বহুবিস্তৃতির সম্ভাবনায় পূর্ণ। শুধু জাতি-ধর্ম্মের ক্ষুদ্র গণ্ডীতে ইহাকে আবদ্ধ করিয়া রাখিলে ইহার পরিসর সীমাবদ্ধ হয়, সৌন্দর্য্যের সকল দিক স্বতঃস্ফূর্ত্ত হইতে পারে না। মুসলমানের সাহিত্য সার্ব্বজনীন সাহিত্যিক সৌন্দর্য্যের বিচিত্র ভঙ্গীর একদিক মাত্র। হিন্দুর সাহিত্যও তদ্রূপ আর একদিক। এইজন্যই আধুনিক বঙ্গের সাহিত্যিক জাগরণকে আমি ভীতির চক্ষে দেখি না,—বরং প্রীতির নয়নেই নিরীক্ষণ করিয়া থাকি। কারণ অখণ্ড বাঙ্গালা সাহিত্যের প্রতি আমার শ্রদ্ধা সুগভীর এবং পরিচয় প্রাচীন।’

‘বঙ্গীয় মুসলমানদের বর্ত্তমান সাহিত্যিক জাগরণ এই সম্প্রদায়ের প্রগতির পরিচায়ক ত বটেই, সঙ্গে সঙ্গে অখণ্ড বাঙ্গালা সাহিত্যেরও বৈচিত্র্য এবং সম্পদ বৃদ্ধির একটি প্রধান চিহ্ন। বাঙ্গালা সাহিত্য শুধু বাঙ্গালী হিন্দুর কিম্বা বাঙ্গালী মুসলমানের সাহিত্য নয়; ইহা উভয়েরই সম্মিলিত সাহিত্য। উভয় জাতি এই সাহিত্যকে আপন ধর্ম্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতা দিয়া সৌষ্ঠবশালী করিয়া না তুলিলে এই সাহিত্য যে নিতান্তই একদেশদর্শী হইয়া পড়িবে, তাহাতে আর সন্দেহ কি।...’

‘এ কথা আমি জোর করিয়া বলিতে পারি, মুসলমানেরা আপন জাতীয়, ধর্ম্মীয়, সংস্কৃতি ও সভ্যতাগত বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্য লইয়া বাঙ্গালা ভাষার সেবা করিলে বাঙ্গালা ভাষা ও সাহিত্য অপ্রতুল ও অনুপমেয় মূর্ত্তি ধারণ করিবে। যাঁহারা মুসলমানদের বর্ত্তমান সাহিত্যিক প্রগতির পরিপন্থী, তাঁহারা বাঙ্গালা সাহিত্যের মিত্রতার মুখোস পরিয়া তত্প্রতি শত্রুতাই সাধন করেন মাত্র; কেননা তাঁহারা বাঙ্গালা সাহিত্যকে একটি ক্ষুদ্র গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ করিয়া ইহাকে ইহার স্বাভাবিক স্ফূরণের ও সম্প্রসারণের বৈচিত্র্য হইতে বঞ্চিত রাখিতে চেষ্টা করেন।’ 

‘বাঙ্গালা ভাষা ও সাহিত্য একা হিন্দুরও নয়, একা মুসলমানেরও নয়’ বলে মন্তব্য করে সাহিত্যবিশারদ পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ করেন:

‘এ পর্যন্ত (১৩৫০) যে সকল ইতিহাস রচিত হইয়াছে, তাহা একালেরই ইতিহাস মাত্র, অপরাঙ্গের অর্থাৎ মুসলমান সাহিত্যের ইতিহাস অদ্যপি লিখিত হয় নাই।

মোসলিম সেবিত সাহিত্যের আকারও হিন্দু সাহিত্যের ন্যায় বিরাট বিস্তৃত। তাহার ভগ্নাংশ মাত্র…জীবীত আছে…।’

বর্তমানে পুঁথিভিত্তিক মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের যে বিশাল জগৎ, বাংলা সাহিত্যের প্রথম দিকের ইতিহাসগুলোতে তার আলোচনার অবকাশ ছিল সামান্য। দীনেশচন্দ্র সেনের বঙ্গভাষা ও সাহিত্য (১৮৯৬) গ্রন্থের প্রথম কয়েকটি সংস্করণে মুসলমান লেখকদের উল্লেখ থাকলেও যথাযথ আলোচনা সম্ভব ছিল না। সুকুমার সেনের বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস গ্রন্থেও মুসলমান লেখকেরা যথাযথ স্থান পাননি। পরে সুকুমার সেন ইসলামি বাংলা সাহিত্য (১৩৫৮) গ্রন্থে এর অভাব মোচনে প্রয়াসী হয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মুসলমান লেখকেরা আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ও মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং আরও পরে মুহম্মদ এনামুল হক ও আহমদ শরীফের লেখনীর মাধ্যমেই যথাযথ স্থান পেয়েছিলেন। এই পুনর্নির্মাণ সম্ভব হয়েছিল মূলত আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের উদ্ধার করা পুঁথির কারণেই।

সাহিত্যবিশারদ চট্টগ্রাম-নোয়াখালী অঞ্চলে বছরের পর বছর হিন্দু-মুসলমানের বাড়ি ঘুরে ঘুরে দুই সহস্রাধিক পুঁথি সংগ্রহ করেন। এর প্রথম বিবরণ পাওয়া যায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকায় (১৩২০) তাঁর বাঙ্গালায় প্রাচীন পুঁথির বিবরণ প্রবন্ধে। পরে আহমদ শরীফ সম্পাদিত পুঁথি পরিচিতি গ্রন্থে এই পুঁথিগুলোর আরও বিবরণ প্রকাশিত হয়।

আবদুল করিম সংগৃহীত পুঁথিগুলোর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস অনেকটা পূর্ণতা পায়। অনেক নতুন মুসলমান লেখক ইতিহাসে উপস্থাপিত হন। অনেক পরিচিত লেখকের নতুন রচনা পাওয়া যায়। মুসলমান লেখকেরাও যে ধর্মীয় পরিচয়ের সীমানা পেরিয়ে বৈষ্ণব পদাবলি ইত্যাদি রচনা করেছিলেন, তা নতুন করে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। রোমান্সমূলক প্রণয়োপাখ্যান নামে পরিচিত ধারাটি পুষ্ট হয়। অন্যদিকে বাংলা সাহিত্যের ভৌগোলিক পরিধি যে আরাকান বা রোসাঙ্গ রাজসভা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, তা সবাই স্বীকার করে নেন। আলাওল, দৌলত কাজী, মাগন ঠাকুর প্রমুখ সাহিতবিশারদের উদ্​যোগের ফলেই বাংলা সাহিত্যে যথাযথ স্থান পান।

আবদুল করিম নিজে তাঁর সংগৃহীত পুঁথির ১১–১২টি সম্পাদনা করেন এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংস্থা তা প্রকাশ করে। পরে আহমদ শরীফসহ অন্য পণ্ডিতেরা আরও কিছু পুঁথি সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন। এসব পুঁথি নিয়ে আবদুল করিম বহু মূল্যবান প্রবন্ধ এবং মুহম্মদ এনামুল হক সহযোগে আরাকান রাজসভায় বাঙ্গালা সাহিত্য (১৯৩৫) শিরোনামে আকরগ্রন্থ প্রকাশ করেন।

সাহিত্যবিশারদের কৃতীর আর একটি বড় দিক ফোকলোর ও লোকসাহিত্যের সংগ্রহ ও সংকলন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগ্রহে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকায় লোকসাহিত্য-সংগ্রহ প্রকাশের ক্ষেত্রে ঠাকুরের পরেই আবদুল করিমের নাম অগ্রগণ্য। চট্টগ্রাম ও সন্নিহিত অঞ্চলের ছড়া, ধাঁধা, প্রবাদ, লোকগীতি, ব্রতকথা, বারোমাস্যা, উপকথা, বচন, হকিয়ত প্রভৃতি সংগ্রহ করে তিনি প্রকাশ করেন। এর দু–একটি উপকরণ শুধু তাঁর সংকলনেই পাওয়া যায়। কয়েক শ লোকছড়া ও ধাঁধার সঙ্গে ৩০টি ব্রতকথাসহ আবদুল করিমের এই সংগ্রহ অত্যন্ত মূল্যবান। চট্টগ্রাম অঞ্চলের হিন্দু-মুসলমাননির্বিশেষে যে লোকাচার, তার দলিল হিসেবেও এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। লোকসাহিত্য সংগ্রহের অপরিহার্যতা, এর সমাজ ও ভাষাবৈশিষ্ট্য প্রভৃতি নিয়েও আলোকপাত করেছেন তিনি। তাঁর সংগ্রহগুলোর মধ্যেও বাঙালি জাতির একটি সমন্বিত জাতীয় সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়।  

বাংলাদেশের মানুষকে, বিশেষত বাঙালির জাতীয় সংস্কৃতি এবং এর বিভাজন নিয়ে যাঁরা বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ বা মুহম্মদ শহীদুল্লাহর চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গি তাঁদের পথ দেখাতে পারে। 

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল কর ম র ম সলম ন র পর ক ষ ক র কর পর ব শ য হইত ই বছর র একট প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ