‘হার্ভার্ড এইচএসআইএল হ্যাকাথন ২০২৫’ ইউআইইউতে অনুষ্ঠিত
Published: 14th, April 2025 GMT
‘হার্ভার্ড এইচএসআইএল হ্যাকাথন ২০২৫’-এর বাংলাদেশ রাউন্ডের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান গত শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) নিজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউআইইউর ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ, ইনোভেশন, ইনকিউবেশন অ্যান্ড কমার্শিয়ালাইজেশন (আইরিক) এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টি এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের হেলথ সিস্টেমস ইনোভেশন ল্যাবের (এইচএসআইএল) যৌথ সহযোগিতায় এ আয়োজন চলে দুই দিন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো.
হার্ভার্ড টি এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের হেলথ সিস্টেমস ইনোভেশন ল্যাব (এইচএসআইএল), হ্যাকাথনটি এ বছর তার ষষ্ঠ সংস্করণটি পরিচালনা করেছে যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল, ‘উচ্চ মূল্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার’। ২০ দেশের ৩ হাজার জনের বেশি অংশগ্রহণকারী ছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম কেন্দ্রগুলো হলো হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট্র), সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় (অস্ট্রেলিয়া), কিংস কলেজ লন্ডন (যুক্তরাজ্য), কোচ বিশ্ববিদ্যালয় (তুরস্ক), সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় (চীন) এবং এনটিইউ (সিঙ্গাপুর) ও আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ, ইনোভেশন, ইনকিউবেশন এবং কমার্শিয়ালাইজেশন (আইরিক) সফলভাবে এবারের বাংলাদেশ রাউন্ড ফাইনাল আয়োজন করেছে।
আরও পড়ুনআমেরিকা ও ইউরোপের বাইরে এশিয়ার সেরা ৫ বিশ্ববিদ্যালয় এগুলো৩১ মার্চ ২০২৫বাংলাদেশ রাউন্ডের বিজয়ী হয়েছে ২টি দল। এগুলো হলো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা শনাক্তকরণ ও সমাধানে ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রযুক্তি ব্যবহার করার স্মার্ট পদক্ষেপের জন্য টিম ‘নিউরিক্স’ এবং নারী রোগীদের মধ্যে এন্ডোমেট্রিওসিস-জনিত উদ্বেগ এবং জটিলতা এড়াতে বাস্তবসম্মত সমাধানের জন্য টিম ‘স্মার্ট-এন্ডো’। উভয় দল পুরস্কার হিসেবে নগদ অর্থ, সার্টিফিকেশন এবং হার্ভার্ড এইচএসআইএল ভেঞ্চার ইনকিউবেশন প্রোগ্রামে আরও ১৯টি দেশের বিজয়ীদের সঙ্গে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে।
বাংলাদেশ রাউন্ডের জুরি প্যানেলে ছিলেন রুই লিউ-স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক), ফাহিমা চৌধুরী-পরিচালক (অ্যাডকম), আরিফ মাহমুদ গ্রুপ মেডিকেল ডিরেক্টর (এভারকেয়ার হাসপাতাল), শাহ আলী আকবর আশরাফী-পরিচালক (এমআইএস), মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম-স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগ, সুইডেন দূতাবাস এবং অধ্যাপক খন্দকার এ মামুন-পরিচালক (আইরিক), ইউআইইউ। বিজ্ঞপ্তি
আরও পড়ুনভারতের সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ, মাসে ২৪৫০০ রুপি, আবেদন যেভাবে০৩ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
মুহাম্মদ ইলিয়াসের তাবলিগি দর্শন
মানুষের হৃদয়ে ঈমানের আগুন জ্বালানোর প্রয়াসে শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভী (১৮৮৫-১৯৪৪) গড়ে তুলেছিলেন জামায়াতে তাবলিগ, যা বিশ্বব্যাপী দাওয়াতের এক অপূর্ব নজির। তাঁর বাণী ও উপদেশের সংকলন ‘মালফুজাত’ নামে আরবি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে, যা তাঁর দাওয়াতি দর্শন ও তরবিয়তি পদ্ধতির এক জীবন্ত দলিল। দামেস্কের দারুল কলম থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থ, শায়খ আদিল হাররাজি আল-ইয়ামানি আন-নাদভির তত্ত্বাবধানে সম্পাদিত, তাবলিগ জামায়াতে মূল দর্শনের প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধু মুহাম্মদ ইলিয়াসের বাণীর সংকলন নয় বরং একটি ঐতিহাসিক ও দাওয়াতি দলিল, যা আধুনিক ইসলামি আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্মূল্যায়নের দাবি রাখে।
‘মালফুজাত’-এর শিক্ষা
শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াসের মজলিস মালফুজাত সংরক্ষণ করেছেন তাঁর শিষ্য মুহাম্মদ মানজুর। তাবলিগ জামায়াতে ছয়টি মূলনীতি—কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকর, ইকরামুল মুসলিমিন, ইখলাস ও নিয়ত এবং আল্লাহর পথে বের হওয়ার ভিত্তিতে গ্রন্থটি রচিত। তিনি তাওহিদকে (আল্লাহর একত্ব) নাজাতের মূল ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তাওহিদের দুর্বলতা মুসলিমদের অধঃপতনের কারণ’। তিনি ফরজ ইবাদতের প্রাধান্য, জিকিরের প্রাচুর্য এবং তাকওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ফরজগুলোর মর্যাদা নফলের চেয়ে অনেক উঁচুতে। নফলের উদ্দেশ্য ফরজগুলোর ঘাটতি পূরণ করা’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
তাঁর দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল সরল কিন্তু গভীর। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে আত্মশুদ্ধির মাধ্যম হিসেবে দেখতেন, যা তাবলিগের একটি বৈশিষ্ট্য। তিনি রিয়া (লোকদেখানো) ও বিতর্ক এড়ানোর পরামর্শ দেন, বলেন, ‘ইখলাস (খাঁটি আল্লাহর জন্য) ছাড়া কোনো কাজ কবুল হয় না।’ তাঁর দৃষ্টিতে, দাওয়াতের লক্ষ্য হলো আল্লাহর আদেশকে মানুষের স্বভাবে পরিণত করা, যাতে নিষিদ্ধ কাজ তার কাছে অপছন্দনীয় হয়। তিনি জিকিরকে এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচনা করতেন।
শায়খ ইলিয়াসের দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল তাওয়াজ্জুহ বা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের পরিবর্তে তাজকিয়া (আত্মশুদ্ধি) ও ইখলাসের ওপর কেন্দ্রীভূত। তিনি জটিল তাত্ত্বিক আলোচনার পরিবর্তে সরল নসিহতের ওপর জোর দিতেন। তাঁর মতে, দাওয়াত হবে এমন, যেন ‘আল্লাহর আদেশ মানুষের স্বভাব হয়ে যায়’। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে তুলনা করতেন সাহাবিদের ত্যাগের সঙ্গে, যা দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক উন্নতি আনে। তিনি বলেন, ‘দাওয়াতে আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার ফরজ, কিন্তু কতজন এই ফরজ পালন করে?’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
আরও পড়ুনসুরা হুমাজাতে চারটি পাপের শাস্তির বর্ণনা০৬ মে ২০২৫ঐতিহাসিক পটভূমি
মুহাম্মদ ইলিয়াস ভারতের কান্ধলায় একটি আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দেওবন্দি সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে তাঁর শৈশব কাটে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন, সাধারণ মুসলিমদের ধর্মীয় অজ্ঞতা এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ তাঁর দাওয়াতি চিন্তার পটভূমি। তিনি বিশ্বাস করতেন, শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মুসলিমদের সংস্কার করতে পারবে না। তাই তিনি একটি জনগণভিত্তিক, বিকেন্দ্রীকৃত আন্দোলন শুরু করেন, যেখানে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা দাওয়াতে অংশ নেয়। তিনি নবীর (সা.) মক্কার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হন, যেখানে তিনি ঘুরে ঘুরে মানুষকে দাওয়াত দিতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মক্কায় তাওয়াফ করে মানুষকে হকের দাওয়াত দিতেন’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
গ্রন্থের গঠন ও সম্পাদনা
মালফুজাত তাঁর মজলিসের সংকলন হলেও এটি একটি সুশৃঙ্খল দাওয়াতি দলিল। সম্পাদনা করেছেন আবুল হাসান আলী নাদভি (রহ.)-এর শিষ্য শেখ আদিল হাররাজি। মুফতি মুহাম্মদ তকী উসমানী, ড. খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানি ও নূরুল হাসান রাশিদ কান্ধলভী প্রমুখের মতো পাকিস্তান ও ভারতের শীর্ষস্থানীয় ইসলামবেত্তাদের ভূমিকা গ্রন্থটিকে মহামূল্য করে তুলেছে। তাদের ভূমিকাগুলো গ্রন্থের দাওয়াতি ও ঐতিহাসিক পটভূমি বুঝতে সাহায্য করবে। আলী নাদভির সঙ্গে মুহাম্মাদ ইলিয়াসের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক এবং তাবলিগের বিশ্বব্যাপী প্রভাবও এতে তুলে ধরা হয়েছে।
আজ যখন মুসলিম বিশ্ব নানা সংকটের মুখোমুখি, এই গ্রন্থ আমাদের তাওহিদ, ইখলাস ও তাজকিয়ার প্রতি ফিরে যেতে আহ্বান জানায়। এটি প্রতিটি দাঈ ও মুসলিমের জন্য একটি পাঠ্য, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ‘দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনকে জীবন্ত করে তুলতে হবে।’
সূত্র: আল-জাজিরা ডটনেট
আরও পড়ুন সুরা ইউসুফের সারকথা১৫ জুলাই ২০২৪