দিন যাচ্ছে আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের নতুন নতুন ফ্রন্ট খোলা হচ্ছে। শুল্কযুদ্ধের নতুন পদক্ষেপ হিসেবে চীন দুর্লভ খনিজ, প্রাকৃতিক চুম্বক (ম্যাগনেট) সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করবে না তারা।

চীনের এই পদক্ষেপের কারণে বিরল ধাতু, মৌল ও চুম্বকের সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধাক্কা লাগবে—এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে গাড়ি, অ্যারোস্পেস, সেমিকন্ডাক্টর ও সামরিক শিল্প বড় সমস্যায় পড়তে পারে। চীনের এই সিদ্ধান্তে কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্য দেশগুলোও সমস্যায় পড়তে পারে।

প্রতিবেদনে জানা যায়, চুম্বকসহ বিরল মৌলের রপ্তানি বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর জেরে প্রচুর মৌল জাহাজীকরণের অপেক্ষায় বন্দরে পড়ে আছে। বিশেষ অনুমতি ছাড়া চীন থেকে এ ধরনের পণ্য রপ্তানি করা যাবে না। বেইজিংয়ের এ সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র বিপদে পড়বে বলেই আশঙ্কা। সামারিয়াম, ডোলিনিয়াম, টারবিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, লিউটেনিয়াম, স্ক্যানডিয়াম, ইট্রিয়ামমের মতো প্রায় ১৭টি বিরল মৌলের অভাবে আমেরিকার প্রতিরক্ষাশিল্প বড় সংকটে পড়তে পারে।

বিষয়টি হলো গাড়ি থেকে ড্রোন, রোবট থেকে মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র—এই সবকিছুর অ্যাসেম্বলিং বা সংযোজনের জন্য শক্তিশালী চুম্বক খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক মোটর তৈরিতে এই চুম্বকের প্রয়োজন হয়। ওই সব মোটর ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল, ড্রোন, রোবট, মিসাইল, স্পেসক্রাফ্ট তৈরির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু ক্রিটিক্যাল কাজে চুম্বকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি বিভিন্ন সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরিতে বিরল কিছু মৌলের দরকার পড়ে। সেগুলো খুবই দুর্লভ। বিশ্বের খুব কম দেশেই তা পাওয়া যায়। লাইট এমিটিং ডায়োড থেকে ক্যাপাসিটর, কম্পিউটার চিপ থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সার্ভার তৈরি—নানা কাজেই এসব মৌলের দরকার হয়। চীন এসবের সরবরাহ বন্ধ করলে বিভিন্ন ক্ষেত্রের শিল্প অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা খাতের বিভিন্ন কাজও এর জেরে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিটিক্যাল মিনেরালস অ্যাডভাইজারি কমিটির চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল প্ল্যাকার্ড বলেছেন, চীন বিরল মৌল রপ্তানি বন্ধ করার যুক্তরাষ্ট্রে গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। দেশটির খনিশিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রথম সারির এক কোম্পানির বড় কর্মকর্তা বলেছেন, ড্রোন ও রোবোটিকস ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠবে। এসব যুদ্ধাস্ত্র তৈরির উপাদানের সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হলে চিন্তার কারণ আছে। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র এসব বিরল মৌল উত্তোলনের কাজ শুরু করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমির কাছে কিছু বিরল মৌলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আধুনিক প্রযুক্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশ্নাতীতভাবে সারা বিশ্ব থেকে এগিয়ে। কিন্তু এসব মৌলের অভাবে এই জয়যাত্রাও স্তব্ধ হতে পারে। শুল্ক নিয়ে অনড় ট্রাম্পে কীভাবে এসব বিষয়ের মোকাবিলা করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

২ এপ্রিল ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের ঘোষণার দিন থেকেই হাজারো সমস্যার সূত্রপাত। ২ এপ্রিলের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়াতে বাড়াতে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। জবাবে চীনও পাল্টা ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর চীন ছয়টি অতি বিরল মৌলের রপ্তানি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। এসব মৌলের রপ্তানি নিয়ে নতুন নীতি প্রণয়ন করবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এসব বিরল মৌলের ৯০ শতাংশই চীনে উৎপাদিত হয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এ ক্ষেত্রে চীনের ওপর নির্ভরশীল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরবর হ ব চ ম বক

এছাড়াও পড়ুন:

বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম

ঈদের বন্ধের আমেজ কাটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো। ক্রেতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে বেড়েছে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। পেঁয়াজ, রসুন ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও নিম্নমুখী।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর নগরের কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায়। ফলে দাম ছিল কিছুটা বাড়তি। গত রোববার ও সোমবারের দিকে নগরের আড়তগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। অধিকাংশ সবজির দামও ৪০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে গত মঙ্গলবার থেকে আবারও বাজারে পুরোদমে সবজির সরবরাহ শুরু হয়েছে। যার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।

আজ শুক্রবার নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি আড়তে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে। বেশির ভাগ সবজির দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে খুচরা বাজারগুলোতে প্রায় দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা যায়। নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, সাব এরিয়া ও কাজির দেউড়ি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ টাকার বেশি। লাউ, মিষ্টিকুমড়া ও ফুলকপির দাম কিছুটা কম। এসব সবজির দাম ৫০ টাকার আশপাশে। খুচরা বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। পরিবহন খরচ ও আগে কেনার অজুহাতে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার নুরুল ইসলাম বলেন, বাজারে সব সবজির দাম কম। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। আড়তের দামের দ্বিগুণ দামে তাঁরা সবজি বিক্রি করছেন।

সবজির বাজারের পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন ও চালের দামও নিম্নমুখী। খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে আজ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫২ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। অন্যদিকে রসুনের কেজি আড়তে ছিল ৮৫ থেকে ১১০ টাকা। খুচরায় সেটি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।

পাহাড়তলী চালের আড়তে মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে জিরাশাইল ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত তিন দিন আগ থেকে চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম কমেছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের সরবরাহ যথেষ্ট আছে। চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই এখন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুপেয় পানির সংকট, কাজে আসছে না কোটি টাকার প্রকল্প
  • নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
  • সুপারম্যানের কাছে আছে পৃথিবীর শক্তি সংকটের সমাধান
  • ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কী কী ঘটতে পারে?
  • ইরান–ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা রূপ নিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে
  • ইরানে হামলার আগে গোপনে ইসরায়েলে হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
  • ভারত থেকে আইফোন রপ্তানি কেন বাড়ছে
  • সুনামগঞ্জে তাজা গ্রেনেড উদ্ধারের পর নিষ্ক্রিয় করল সেনাবাহিনী
  • কমেছে সবজির দাম
  • বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম