ঈদুল ফিতরে ভূয়া তালিকা করে ভিজিএফ’র চাল আত্মসাত
Published: 15th, April 2025 GMT
দিনাজপুরের হাকিমপুরে উপজেলার খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপনের বিরুদ্ধে দুস্থদের ভিজিএফ’র চাল বিতরণে অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এর কয়েকজন ইউপি সদস্য জড়িত আছেন বলেও অভিযোগ। প্রায় ১৮০০ জনের নামে-বেনামে ভূয়া তালিকা করে ১৮ মেট্রিকটন চাল আত্মসাত করেন তারা। এমন কি মৃত ব্যক্তিরও নাম রয়েছে ওই তালিকায়।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, এই পবিত্র ঈদুল ফিতরে খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়নের ৪ হাজার ১৬৯ জনের ভিজিএফ চালের তালিকা করেন ওই প্যানেল চেয়ারম্যান। এ তালিকায় একজনের নাম একাধিকবার তোলেন। এক ওয়ার্ডের তালিকাভুক্তদের অন্য ওয়ার্ডের তালিকায়ও নাম ওঠান। এমনকি ওই তালিকায় মৃত ব্যক্তিরও নাম রয়েছে। এভাবে চাল আত্মসাত প্রক্রিয়ায় প্যানেল চেয়ারম্যান স্বপনের সঙ্গে ৩ ইউপি সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন- ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শাহানুর রহমান, ৭নং ইউপি সদস্য আবুল কাশেম ও ৮নং ওয়ার্ড সদস্য জাহাঙ্গীর আলম।
এ ঘটনায় প্রায় ৩০০ জন বঞ্চিত সুবিধাভোগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ইউনিয়নের মংলা বাজারের বাসিন্দা তাহাজ্জত আলী বলেন, “আমার প্রতিবেশী মৃত রবিউল ইসলামের নাম ভিজিএফ তালিকায় রয়েছে। কিন্তু তিনি গত ৩ বছর আগে মারা গেছেন। এক বছর পূর্বে তার স্ত্রীর অন্যত্র বিয়েও হয়েছে। চেয়ারম্যান চাল আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ভিজিএফের তালিকায় এই মৃত ব্যক্তির নাম তালিকাভুক্ত করেছেন।”
অভিযোগকারী মাধবপাড়া গ্রামের কাশেম আলীর স্ত্রী বেগম জানান, ভিজিএফএর তালিকায় তার নামের সিরিয়াল ২৩৭৬। অথচ কয়েকবার চেয়ারম্যানের নিকট ভিজিএফ চালের জন্য গেলে তার নাম তালিকায় নেই বলে ফিরিয়ে দেন।
তিনি জানান, শুধু তাকে নয় এরকম আরও অনেক মেয়ে মানুষকে চাল না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
অভিযোগকারী ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, তার মাস্টার রোলের সিরিয়াল নম্বর ২১০। তালিকায় তার নাম নেই বলে তাকেও ওই দিন চাল না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা গরীব মানুষ ঈদের আগে ভিজিএফের চালের অপেক্ষায় থাকি। সেই চাল যদি চেয়ারম্যান খেয়ে ফেলেন তাহলে তো গরীবের তো আর বাঁচার পথ নাই। সরকারের উচিত গরীবের চাল মেরে খাওয়া চেয়ারম্যানকে শাস্তি দেওয়া।”
লিখিত অভিযোগকারী সাইমুমুর রহমান ডলার জানান, ১নং ওয়ার্ডের ৮৬ জন , ২নং ওয়ার্ডের ৭৫ জন, ৩নং ওয়ার্ডের ৬৩ জন, ৪নং ওয়ার্ডের ৫৬ জন, ৫নং ওয়ার্ডের ১১১ জন, ৬নং ওয়ার্ডের ১৩১ জন, ৭নং ওয়ার্ডে ৯২ জন, ৮নং ওয়ার্ডের ১০৯ জন ও ৯নং ওয়ার্ডের ৮৩ জনের মোট ৮০৬ জনের নাম অন্য ওয়ার্ডের মাস্টার সিরিয়ালে একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে। চেয়ারম্যান ও তার লোকেরা এসব নামের বিপরীতে বরদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ করেছেন।
এ ব্যাপারে প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, “ভিজিএফ এর চাল বিতরণে সময় ট্যাগ অফিসারসহ সব ওয়ার্ডের মেম্বাররা উপস্থিত ছিলেন। আমি সব চাল সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করেছি।”
এবিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত রায় বলেন, “খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়ন প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভিজিএফ’র চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। পিআইওকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/মোসলেম/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ জ এফ র চ ল ম ধবপ ড় সদস য ব তরণ
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।