জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে সমুদ্রের তাপমাত্রাও। এর ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ ও বড় বড় হিমবাহও দ্রুত গলে যাচ্ছে। আর তাই দীর্ঘদিন ধরেই বরফ গলে যাওয়ার হার নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা। বরফ গলে যাওয়ার সম্ভাব্য ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সতর্কও করেছেন তাঁরা।
যদি পৃথিবীর সব বরফ গলে যায়, তবে আমাদের গ্রহের ছবি বদলে যাবে। মহাকাশ থেকে যে নীল গোলক দেখা যায়, তা আর দেখা যাবে না। সব বরফ গলে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কতটা বাড়বে আর তা কোন কোন অঞ্চলে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীর সব বরফ গলে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ মিটার বেড়ে যাবে। এই বিপুল পরিমাণ জলরাশি উপকূলীয় অঞ্চল ও নিচু দ্বীপরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেবে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলার বর্তমান যে হার, তা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক শতাব্দীতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুনবরফশূন্য হওয়ার ঝুঁকিতে উত্তর মেরু০৬ মার্চ ২০২৪ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের বিভিন্ন প্রতিবেদনেও বরফ গলে যাওয়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিকার বিশাল বরফের স্তূপ গলে গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে। যদি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৭০ মিটার পর্যন্ত বাড়ে, তবে বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং জনবহুল এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ মালদ্বীপ, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এ ছাড়া ভেনিস, নিউইয়র্ক, লন্ডন, টোকিও, সাংহাই ও মুম্বাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরে প্রভাব দেখা যাবে। বিভিন্ন দ্বীপরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। মালদ্বীপ, কিরিবাতি, টুভালুর মতো অনেক ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্র মানচিত্র থেকে চিরতরে মুছে যাবে।
আরও পড়ুনসাগরে বরফের পরিমাণ দ্রুত কমছে, কারণ কী১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫শুধু শহর বা দ্বীপরাষ্ট্র নয়, উপকূলীয় কৃষিজমি ও মিঠা পানির উৎসও লবণাক্ত পানির কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেবে। এতে পৃথিবীর অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামোকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে। যদিও এই মহাবিপর্যয় একদিনে ঘটবে না। বরফ গলে যাওয়ার বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
সূত্র: আর্থ ডট অর্গ, ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ব পর ষ ট র
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।