Samakal:
2025-11-02@21:16:53 GMT

সাত বছর খননেও মিলছে না ফল

Published: 15th, April 2025 GMT

সাত বছর খননেও মিলছে না ফল

পদ্মার অন্যতম শাখা নদী গড়াই। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ও সদরের হরিপুরে এর উৎসমুখ। ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোরসহ কয়েকটি জেলা হয়ে সুন্দরবন দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নদীটি। বনে মিঠাপানি সরবরাহ, লবণাক্ততা কমানো, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদীটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গেও এর গভীর সম্পর্ক। কিন্তু দখল, দূষণ আর ভরাটে নাব্য হারাচ্ছে, অনেক স্থানে পড়েছে চর। কিছু স্থানে সরু খালের মতো পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এক সময়ের প্রমত্তা নদীটির নাব্য ফেরাতে টানা সাত বছর ধরে খননকাজ চলছে। এরপরও শুষ্ক মৌসুমে অনেক স্থানে গড়াই নদীতে পানি নেই। বর্ষায় উজান থেকে আসা পলি জমে পানিপ্রবাহ নেই কুষ্টিয়ার অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ নদীটিতে। খননের পরও উৎসমুখ থেকে শুরু করে পাঁচটি স্থানে জেগে উঠছে চর। সুন্দরবনে মিঠাপানির সরবরাহ বাড়ানো ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদীটি বাঁচাতে নতুন পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মত গবেষকের।
সরেজমিনে নদীর হরিপুর সেতুর পূর্ব পাশের এলাকায় দেখা গেছে, বড় অংশজুড়ে চর পড়েছে। মানুষ হেঁটেই পার হচ্ছেন। অনেকে গোসলসহ কাপড় ধোয়ার কাজ করছেন জমে থাকা অল্প পানিতে। বাঁধ এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের ভাষ্য, এবার বেশি চর পড়েছে, পানি কমেছে। কোনো রকমে গোসল করা যাচ্ছে। শেফালী খাতুন বলছিলেন, ‘আমরা বাঁধে থাকি। নদীর পানি দিয়ে সব কাজ করি। পানি একেবারে কমে গেছে। আগে বড় নৌকা ও ট্রলার চললেও এখন ছোট নৌকা চলে। মাছও পাওয়া যায় না।’
নদী সারাবছর সচল রাখা ও পানিপ্রবাহ বাড়াতে টানা কয়েক বছর ধরে চলছে খননকাজ। এরপরও চর জেগে ওঠায় স্বাভাবিক গতি ফেরেনি। এতে নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবিকায় টান পড়েছে। বড় চর পড়েছে তালবাড়িয়া-হরিপুর উৎসমুখ, রেনউইক বাঁধ, ঘোড়াইঘাট, মাসউদ রুমী সেতু ও কুমারখালী এলাকায়। এরই মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীন গড়াই খনন প্রকল্পের কাজও চলমান। 
পাউবো জানিয়েছে, চলতি বছর নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা খনন করে ৪৪ দশমিক ৫৮ লাখ ঘন কিউসেক বালু অপসারণ করা হবে। ২০১৮ সালে শুরু হয় খননকাজ। সাত বছর মেয়াদি প্রকল্প শেষ হবে চলতি বছরের জুনে। এতে খরচ হচ্ছে ২৩২ কোটি টাকা।
প্রকল্প অফিসের সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত মেয়াদ ছিল। এরপর দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত করা হয়েছে। ৪ কোটি ১৬ লাখ কিউসেক ঘনমিটার বালু উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৯২ লাখ কিউসেক ঘনমিটার উত্তোলন করা হয়েছে। প্রকল্পের শুরুর দিকে বালু ব্যবস্থাপনা, খননে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।
শুরুর দিকে খননের নকশা প্রণয়ন এমনভাবে করা হয়, যাতে নদীকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হচ্ছিল বলে এক প্রতিবেদনে উঠে আসে। খননের পরও পানিপ্রবাহ না বাড়া, ড্রেজিংয়ের বালু ব্যবস্থাপনায় সঠিক পরিকল্পনা না থাকাসহ নানা অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সে সময় পাউবো নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে। উৎসমুখে ৩৫০ মিটার চওড়া ও পানির উপরিভাগ থেকে পাঁচ মিটার গভীর করে খনন শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তা কমে ১২০ মিটার চওড়া ও তিন মিটার পর্যন্ত গভীর করে খননকাজ চলছে। এতে নদীতে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকলেও সরু খালে পরিণত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নদীতে যাত্রী পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করেন জসিম উদ্দিন। খননের পরও গরমের সময়ে এসে খুব একটা সুবিধা মিলছে না বলে অভিযোগ তাঁর। তিনি বলছিলেন, ‘আমরা কষ্টে আছি।’ স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি নদীতে পড়ছে। এতে দূষণ বাড়ছে। এ পানিতে গোসল করে শরীরে ঘা, পাঁচড়া হচ্ছে অনেকের।
গড়াই নদীর সঙ্গে কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলার মানুষের গভীর সম্পর্ক। এ নদী বাঁচাতে নতুন পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করেন গবেষকরা। আগের ভুলত্রুটি ও অনিয়ম-দুর্নীতি শুধরে নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল কুষ্টিয়ার সভাপতি খলিলুর রহমান মজু। তিনি বলেন, গড়াই খনন করেও শুষ্ক মৌসুমে তেমন সুবিধা মিলছে না। এর সঙ্গে সুন্দরবনের সম্পর্ক আছে, নদীটি বাঁচিয়ে রাখতে হবে। পদ্মায় পানি কমায় গড়াইয়ে প্রভাব পড়ছে। দীর্ঘ মেয়াদে সুফল পাওয়া যায়, এমন প্রকল্প হাতে নিলে সুন্দরবনসহ এ অঞ্চলের মানুষের জন্য ভালো হবে।
চলতি বছর নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গড়াই খনন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈকত বিশ্বাস। তিনি বলেন, বর্ষায় কয়েকটি পয়েন্টে লাখ লাখ কিউসেক ঘনমিটার বালু পড়ে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সুন্দরবন রক্ষাসহ পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে হলে খনন ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা কঠিন।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ প ন প রব হ প রকল প র ন প রকল প স ন দরবন খননক জ নত ন প খনন র

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • সুন্দরবনের বড় গেছো প্যাঁচা