Samakal:
2025-04-30@22:38:57 GMT

সাত বছর খননেও মিলছে না ফল

Published: 15th, April 2025 GMT

সাত বছর খননেও মিলছে না ফল

পদ্মার অন্যতম শাখা নদী গড়াই। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ও সদরের হরিপুরে এর উৎসমুখ। ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোরসহ কয়েকটি জেলা হয়ে সুন্দরবন দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নদীটি। বনে মিঠাপানি সরবরাহ, লবণাক্ততা কমানো, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদীটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গেও এর গভীর সম্পর্ক। কিন্তু দখল, দূষণ আর ভরাটে নাব্য হারাচ্ছে, অনেক স্থানে পড়েছে চর। কিছু স্থানে সরু খালের মতো পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এক সময়ের প্রমত্তা নদীটির নাব্য ফেরাতে টানা সাত বছর ধরে খননকাজ চলছে। এরপরও শুষ্ক মৌসুমে অনেক স্থানে গড়াই নদীতে পানি নেই। বর্ষায় উজান থেকে আসা পলি জমে পানিপ্রবাহ নেই কুষ্টিয়ার অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ নদীটিতে। খননের পরও উৎসমুখ থেকে শুরু করে পাঁচটি স্থানে জেগে উঠছে চর। সুন্দরবনে মিঠাপানির সরবরাহ বাড়ানো ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদীটি বাঁচাতে নতুন পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মত গবেষকের।
সরেজমিনে নদীর হরিপুর সেতুর পূর্ব পাশের এলাকায় দেখা গেছে, বড় অংশজুড়ে চর পড়েছে। মানুষ হেঁটেই পার হচ্ছেন। অনেকে গোসলসহ কাপড় ধোয়ার কাজ করছেন জমে থাকা অল্প পানিতে। বাঁধ এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের ভাষ্য, এবার বেশি চর পড়েছে, পানি কমেছে। কোনো রকমে গোসল করা যাচ্ছে। শেফালী খাতুন বলছিলেন, ‘আমরা বাঁধে থাকি। নদীর পানি দিয়ে সব কাজ করি। পানি একেবারে কমে গেছে। আগে বড় নৌকা ও ট্রলার চললেও এখন ছোট নৌকা চলে। মাছও পাওয়া যায় না।’
নদী সারাবছর সচল রাখা ও পানিপ্রবাহ বাড়াতে টানা কয়েক বছর ধরে চলছে খননকাজ। এরপরও চর জেগে ওঠায় স্বাভাবিক গতি ফেরেনি। এতে নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবিকায় টান পড়েছে। বড় চর পড়েছে তালবাড়িয়া-হরিপুর উৎসমুখ, রেনউইক বাঁধ, ঘোড়াইঘাট, মাসউদ রুমী সেতু ও কুমারখালী এলাকায়। এরই মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীন গড়াই খনন প্রকল্পের কাজও চলমান। 
পাউবো জানিয়েছে, চলতি বছর নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা খনন করে ৪৪ দশমিক ৫৮ লাখ ঘন কিউসেক বালু অপসারণ করা হবে। ২০১৮ সালে শুরু হয় খননকাজ। সাত বছর মেয়াদি প্রকল্প শেষ হবে চলতি বছরের জুনে। এতে খরচ হচ্ছে ২৩২ কোটি টাকা।
প্রকল্প অফিসের সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত মেয়াদ ছিল। এরপর দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত করা হয়েছে। ৪ কোটি ১৬ লাখ কিউসেক ঘনমিটার বালু উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৯২ লাখ কিউসেক ঘনমিটার উত্তোলন করা হয়েছে। প্রকল্পের শুরুর দিকে বালু ব্যবস্থাপনা, খননে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।
শুরুর দিকে খননের নকশা প্রণয়ন এমনভাবে করা হয়, যাতে নদীকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হচ্ছিল বলে এক প্রতিবেদনে উঠে আসে। খননের পরও পানিপ্রবাহ না বাড়া, ড্রেজিংয়ের বালু ব্যবস্থাপনায় সঠিক পরিকল্পনা না থাকাসহ নানা অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সে সময় পাউবো নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে। উৎসমুখে ৩৫০ মিটার চওড়া ও পানির উপরিভাগ থেকে পাঁচ মিটার গভীর করে খনন শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তা কমে ১২০ মিটার চওড়া ও তিন মিটার পর্যন্ত গভীর করে খননকাজ চলছে। এতে নদীতে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকলেও সরু খালে পরিণত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নদীতে যাত্রী পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করেন জসিম উদ্দিন। খননের পরও গরমের সময়ে এসে খুব একটা সুবিধা মিলছে না বলে অভিযোগ তাঁর। তিনি বলছিলেন, ‘আমরা কষ্টে আছি।’ স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি নদীতে পড়ছে। এতে দূষণ বাড়ছে। এ পানিতে গোসল করে শরীরে ঘা, পাঁচড়া হচ্ছে অনেকের।
গড়াই নদীর সঙ্গে কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলার মানুষের গভীর সম্পর্ক। এ নদী বাঁচাতে নতুন পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করেন গবেষকরা। আগের ভুলত্রুটি ও অনিয়ম-দুর্নীতি শুধরে নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল কুষ্টিয়ার সভাপতি খলিলুর রহমান মজু। তিনি বলেন, গড়াই খনন করেও শুষ্ক মৌসুমে তেমন সুবিধা মিলছে না। এর সঙ্গে সুন্দরবনের সম্পর্ক আছে, নদীটি বাঁচিয়ে রাখতে হবে। পদ্মায় পানি কমায় গড়াইয়ে প্রভাব পড়ছে। দীর্ঘ মেয়াদে সুফল পাওয়া যায়, এমন প্রকল্প হাতে নিলে সুন্দরবনসহ এ অঞ্চলের মানুষের জন্য ভালো হবে।
চলতি বছর নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গড়াই খনন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈকত বিশ্বাস। তিনি বলেন, বর্ষায় কয়েকটি পয়েন্টে লাখ লাখ কিউসেক ঘনমিটার বালু পড়ে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সুন্দরবন রক্ষাসহ পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে হলে খনন ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা কঠিন।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ প ন প রব হ প রকল প র ন প রকল প স ন দরবন খননক জ নত ন প খনন র

এছাড়াও পড়ুন:

কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।

খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।

উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।

সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।

উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের মধুসহ ২৪ পণ্য পেল জিআই সনদ
  • সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যাওয়া ব্যক্তির লাশ উদ্ধার, মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা
  • ‘তোর সময় শেষ’ লেখা চিঠির সঙ্গে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে সাংবাদিককে হুমকি
  • চারঘাটে পদ্মা নদীর পাড়ে অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন
  • কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
  • সৌন্দর্যের সন্ধানে সুন্দরবনের গহীনে : দ্বিতীয় পর্ব
  • সুন্দরবনে অস্ত্রসহ বনদস্যু আটক
  • উপকূল রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ধস, প্লাবনের আশঙ্কা সুন্দরবন তীরবর্তী জনপদে