কোলজুড়ে ফুটফুটে শিশু, চোখে আনন্দ অশ্রু
Published: 16th, April 2025 GMT
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২; সোমবার সকাল ৯টা। শেরপুর শহরের বেসরকারি একতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থেকে তোয়ালে মোড়া সদ্যোজাত এক শিশুকে বের করে নিয়ে এলেন চিকিৎসক। নতুন পৃথিবীর নতুন আলোতে তখনও ছেলে শিশুটি ধাতস্ত হতে পারেনি; চোখ পিটপিট করছে তার। সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের ধকলে শিশুটির মা জামেনা খাতুন তখনও অচেতন। চিকিৎসক অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অপেক্ষারত বাবা মো.
শেরপুর সদর উপজেলার বলাইয়েরচর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে প্রত্যন্ত গ্রাম পাইকারতলার বাসিন্দা মিজান ও জামেনা। জেলার সবজিভান্ডার হিসেবে খ্যাত এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষের পেশা কৃষিকাজ। এর বাইরে রাজমিস্ত্রি ও টাইলস মিস্ত্রির কাজ করেন অনেক যুবক। শিক্ষায় অনগ্রসর এ গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব ভালো না। যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক। প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্যসেবার সুব্যবস্থা না থাকায় যেতে হয় শহরে। ফলে অনেকেই গ্রামের ধাত্রী বা দাই দিয়ে প্রসব করান। এতে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার এ গ্রামে বেশি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান মেম্বার। তবে পেশায় রাজমিস্ত্রির সহকারী মিজান সংসারে শত অভাবের মধ্যেও স্ত্রী জামেনার ব্যাপারে ছিলেন সচেতন।
মিজান জানান, রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে দৈনিক ৬০০ টাকা বেতন পান। তাঁর বাবা জালাল উদ্দিনও একই কাজ করেন। বাবা-মাকে নিয়ে তাদের যৌথ পরিবার। সংসারে অভাব অনটন লেগে আছে। তাদের প্রথম সন্তান জোবায়েদের বয়স ৫ বছর। স্ত্রী দ্বিতীয়বারের মতো যখন অন্তঃসত্ত্বা হলেন, তখন নানা অভাব অনটন সত্ত্বেও তাঁকে সর্বোচ্চ যত্নে রেখেছিলেন। প্রত্যন্ত গ্রামে অন্তঃসত্ত্বাদের স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ খুব কম। তাই স্ত্রীকে শেরপুর নিয়ে নিয়মিত চেকআপ করিয়েছেন। গর্ভধারণের পর টিকাসহ চিকিৎসকের পরামর্শে সব ধরনের চিকিৎসা ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। সীমিত আয় থেকে একটু একটু সঞ্চয় করে সিজারের জন্য টাকা জমিয়েছেন। এসব করতে গিয়ে কষ্ট হয়েছে। এখন সেসব ভুলে গেছেন সন্তানের মুখ দেখে।
মিজান আরও জানান, রোববার রাত ২টার দিকে জামেনা খাতুনের প্রসব বেদনা ওঠে। প্রতিবেশী এক আত্মীয়ের ইজিবাইক ভাড়া করে ফজরের নামাজের সময় স্ত্রীকে নিয়ে রওনা হন শেরপুরের উদ্দেশে। সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন, তাঁর স্বামী ও জ্যাঠাতো ভাইয়ের বউ। প্রায় ১৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তিনি যান নারায়ণপুরের একতা হাসপাতালে। ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিক সকাল ৯টায় সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করায়।
দুই ছেলেকেই মাদ্রাসায় লেখাপড়া করানোর ইচ্ছা পোষণ করে মিজান বলেন, তাঁর স্বপ্ন ওরা দু’জনই ভবিষ্যতে নামকরা আলেম হবে। শিশুর কি নাম রেখেছেন জানতে চাইলে মিজান জানান, তাঁর ছোট ভাই মাদ্রাসার হুজুরের সঙ্গে কথা বলে নাম ঠিক করবেন। বাড়ি যাওয়ার পর নাম রাখা হবে।
মিজানের মা রোকেয়া বেগম সোমবার বিকেলে এসেছিলেন নাতি দেখতে। ফুটফুটে নাতিকে কোলে নিয়ে বলছিলেন, ‘ছেলের চেহারা আমার শ্বশুরের মতো হয়েছে। তিনি খুব ভালো মানুষ আছিলেন। নাতি আমার খুব ভাগ্যবান হবো। বছরের প্রথম দিন জন্ম নিছে। এইডা আল্লাহর রহমত। আল্লাহ ওরে সুস্থ রাখুক এই দোয়া করি।’
সোমবার রাতে কথা হয় জামেনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি জানান, সোমবার যে বৈশাখের প্রথম দিন অর্থাৎ নববর্ষ ছিল জানতেন না। জ্ঞান ফেরার পর যখন নার্সের কাছে শুনলেন, নতুন বছরের প্রথম দিনে তিনি ওই হাসপাতালে প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তখন কুব ভালো লেগেছে। মাশাআল্লাহ বলে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন।
জামেনা আরও বলেন, অভাবের সংসারে তাঁকে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি অনেক যত্নে রেখেছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর কোনো বাড়তি কাজের চাপ দেননি। সময় মতো ডাক্তার দিয়ে চেকআপ করেছেন। সবজির পাশাপাশি কষ্ট হলেও ডিম, দুধ, কলা খেয়েছেন নিয়মিত।
হাসপাতালের চিকিৎসক মাহবুবা কবীর স্বপ্না বলেন, মা ও শিশু দু’জনই ভালো আছে। শিশুটির ওজন হয়েছে ৩ কেজি ৭০০ গ্রাম। মায়ের জ্ঞান ফেরার পর শিশুকে শাল দুধ খাওয়ানো হয়েছে। চারদিন পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র প রথম স মব র প রসব
এছাড়াও পড়ুন:
১০ দিনের ছুটি শেষে বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু
ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ১০ দিনের সরকারি ছুটি শেষে আজ রোববার সকাল থেকে বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হয়েছে।
তবে পেট্রাপোল কাস্টমসে সার্ভার বিকল থাকায় পণ্য আমদানি হয়েছে কম এবং বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে বেশি।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী সমকালকে জানান, ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস অফিসে সার্ভার বিকল থাকায় এক্সপোর্টের ডকুমেন্টের লিও হচ্ছে না। ফলে পণ্য রপ্তানির অনুমোদন করতে পারছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অনলাইন জটিলতা নিরাসন হলেই পূর্বের ন্যায় পণ্য রপ্তানি হবে।
বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবর রহমান জানান, ‘টানা ১০ দিনের ছুটি শেষে আজ সকাল থেকে বেনাপোল বন্দরে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হয়েছে। তবে পেট্রাপোল কাস্টমসে সার্ভার বিকল থাকায় পণ্য আমদানি হয়েছে কম ও রপ্তানি আগের মতো চলমান আছে। বেনাপোল বন্দর ও কাস্টমসে ধীরগতিতে কার্যক্রম চলছে। বন্দর থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের চেকপোস্ট কার্গো শাখার রাজস্ব অফিসার আবু তাহের জানান, ১০ দিনের ছুটি শেষে বেনাপোল বন্দরে আমদানি রপ্তানি শুরু হয়েছে। পণ্য আমদানির জন্য ৪৫০ কনসাইনমেন্টের কার্পাস (গেট পাস) হয়েছে। তবে ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমসে সার্ভার বিকল থাকায় তারা পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ৭ ট্রাক এবং রপ্তানি হয়েছে ৫১ ট্রাক পণ্য। স্বাভাবিকভাবেই বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম চলছে।