যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল আইফোন তৈরিতে ‘বিরল মৃত্তিকা ধাতু’ আমদানি করে চীন থেকে। যদিও চীন থেকে ভবিষ্যতে এই বিরল খনিজ পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চীনা পণ্যে উচ্চহারে যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তার পাল্টা হিসেবে চীন নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। সেসব পদক্ষেপের একটি হলো যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া অথবা বিধিনিষেধ আরোপ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে ১৩ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি চুম্বকসহ বিরল মৌলের রপ্তানি বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর ফলে প্রচুর মৌল জাহাজীকরণের অপেক্ষায় বন্দরে পড়ে আছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ অনুমতি ছাড়া চীন থেকে এ ধরনের পণ্য রপ্তানি করা যাবে না। সামারিয়াম, ডোলিনিয়াম, টারবিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, লিউটেনিয়াম, স্ক্যানডিয়াম, ইট্রিয়ামমের মতো প্রায় ১৭টি বিরল মৌলের অভাবে আমেরিকার প্রতিরক্ষাশিল্প বড় সংকটে পড়তে পারে।

বিরল খনিজ শুধু আইফোনের মতো মুঠোফোন তৈরি নয়, তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক যেকোনো যন্ত্র বা সরঞ্জাম তৈরিতেই তা কাজে লাগে। সামরিক সরঞ্জাম ও আধুনিক অস্ত্র তৈরিতেও এখন ব্যবহার করা হয় বিরল খনিজ। বিশেষ করে বিরল খনিজ লাগে চিপ তৈরিতে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিরল খনিজের লড়াই একুশ শতকের ভূ-অর্থনৈতিক যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই লড়াইয়ে চীনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ভাঙতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট বিকল্প সরবরাহশৃঙ্খল গড়ে তুলতে সক্রিয়।

এদিকে বাংলাদেশে বিরল খনিজের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন। দেশের গবেষকেরা বলছেন, নদী অববাহিকার বালু, জেগে ওঠা চর, সৈকত বালু এবং কয়লাখনি থেকে বিরল খনিজের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে দেশে সন্ধান পাওয়া এই মূল্যবান খনিজের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কতটুকু, তা পর্যালোচনা করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজক্ষেত্র। মাউন্টেন পাস, ক্যালিফোর্নিয়া.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ