লুইস এনরিকে ২০২৩ সালে পিএসজির কোচ হিসেবে আনা হয়েছিল। স্প্যানিশ কোচের কাছে ফরাসি ক্লাবটির একটায় দাবি ছিল, চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা এনে দেওয়া। সেই লক্ষ্যে ভালোই এগুচ্ছে এনরিকের শিষ্যরা।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দিবাগত রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে ৩-২ গোলে হেরে যায় পিএসজি। তবে ঘরের মাঠ প্রিন্স দে পার্কে ৩-১ গোলের সুবিধা নিয়ে ৫-৪ গোলের অগ্রগামিতায় সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল ফরাসি জায়ান্টরা। ম্যাচ হারার পরও কোচ এনরিকে দলকে বিশ্বের সেরা স্কোয়াড বলে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।

অন্যদিকে ১৯৮২ সালের পর চ্যাম্পিয়নস লিগের এত কাছাকাছি গিয়েও সেমিফাইনালে উঠতে না পারার কষ্টে চোখের জলে বুক ভাসিয়েছে ভিলার খেলোয়াড় ও সমর্থকরা। ম্যাচটি ৫-৫ সমতায় গড়াতে পারতো।  এমনকি ভিলার জয়ও সম্ভব ছিল যদি পিএসজি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা দ্বিতীয়ার্ধে একের পর এক অবিশ্বাস্য সেভ না করতেন।

আরো পড়ুন:

‘ভিলা পার্ককে আমাদের দুর্গে পরিণত করার চেষ্টা করব’

ছয় ম্যাচ হাতে রেখেই পিএসজির শিরোপা জয়

ম্যাচ শেষে এনরিকে বলেন, “আমি মনে করি আমার বিশ্বের সেরা স্কোয়াড রয়েছে, শুধু গোলরক্ষক নয়। পিএসজির মতো ক্লাবে আপনি অনেক মানসম্পন্ন খেলোয়াড় পাবেন। দুই লেগ মিলিয়ে আমরা জয়ের যোগ্য ছিলাম। আমি খুব খুশি, কারণ আমি সমর্থকদের আরেকটি সেমিফাইনাল উপহার দিতে পারছি।”

এনরিকে ভিলার খেলার মান এবং দ্বিতীয়ার্ধে তাদের দারুণ গতির সম্পর্কে বলেন, “আমরা দুর্দান্তভাবে ম্যাচ শুরু করেছিলাম, দুটি অসাধারণ গোল করেছিলাম এবং ফাঁকা জায়গাগুলো কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম। আমরা ভুলে যেতে পারি না যে, এটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, এবং প্রতিপক্ষ দলও অনেক গুণমানসম্পন্ন। ভিলা দ্বিতীয়ার্ধে অনেক তীব্রতার সঙ্গে খেলেছে। তাদের হারানোর কিছুই দেখেনি, কারণ তারা প্রথম লেগ হেরে গিয়েছিল এবং এই ম্যাচেও প্রথমার্ধে পিছিয়ে ছিল।”

পিএসজি এখনও চ্যাম্পিয়ন লিগ শিরোপা জিততে পারেনি। তারা টানা দ্বিতীয়বার সেমিফাইনালে ওঠল, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষে আর্সেনাল ও রিয়াল মাদ্রিদের মধ্য জয়ী দল। কাতারের মালিকানায় যাওয়ার পর ফরাসি ক্লাবটি এই প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ ফাইনাল খেলেছে। বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ২০২০ সালে সেই ফাইনালে হারে তারা।

পিএসজি তাদের আগের ‘গ্যালাক্টিকোস’ তারকা লিওনেল মেসি, নেইমার এবং কিলিয়ান এমবাপাকে নিয়েও শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয়। এরপর এনরিকে তারকা রীতির বিলুপ্তি করেন ক্লাবটিতে। তরুণ ও প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের ওপর জোর দিচ্ছেন  এবং এই পরিবর্তন ইতিমধ্যে সুফল দিতে শুরু করেছে।

ভিলা সেমিফাইনালে উঠার এত কাছে গিয়েও ব্যর্থ হওয়ায় পর দলটির বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ অসম্ভব ভেঙে পড়েন। দুই দলের সবাই মাঠ ছাড়ার পরও তিনি মাঠে বসে ছিলেন।

অন্যদিকে ভিলার স্প্যানিশ ম্যানেজার উনাই এমরি চরম হতাশ হয়ে পড়েন। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর তিনি মাটিতে শুয়ে পড়েন। স্বদেশী এনরিকের বিপক্ষে তাঁর ভাগ্যটা বরাবরই এমন কষ্টের। এর আগে ২০১৬-১৭ মৌসুমে কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলেোনা-পিএসজি মুখোমুখি হয়েছিল। তখনও পিএসজির ডাগআউটে ছিলেন এমরি। আর বার্সার ম্যানেজার ছিলেন এনরিকে। যে ম্যাচের প্রথম লেগে পিএসজি জিতেছিল ৪-০ গোলে, পরের লেগে বার্সা জিতেছিল ৬-১ গোলে।

ঢাকা/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প এসজ চ য ম প য়নস ল গ স ম ফ ইন ল প এসজ র এনর ক

এছাড়াও পড়ুন:

অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক

নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।

পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।

দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ