দেশের ফুটবলে হামজা চৌধুরীর আগমন দারুণ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। সে জন্য সব ফেডারেশন-অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ নিজ খেলার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

আজ বুধবার দেশের সব ফেডারেশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা প্রধান নির্বাহীকে এ–সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো.

আমিনুল ইসলাম।

চিঠিতে বিভিন্ন অঙ্গনের প্রতিভাবান প্রবাসী খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার কথাও বলা হয়েছে।
গত ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল হামজার।

তার আগে ১৭ মার্চ সিলেটে পা রাখার পর বিমানবন্দর থেকে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাটের নিজবাড়ি পর্যন্ত উষ্ণ অভ্যর্থনা পান হামজা। তাঁকে ঘিরে ফুটবলে তৈরি হয় নতুন উন্মাদনা। এর মধ্যে কানাডা থেকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন শমিত শোম।

২৭ বছর বয়সী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শমিতের জন্ম কানাডায়। মা-বাবা দুজনই বাংলাদেশি। বর্তমানে কানাডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব কাভালরি এফসির মিডফিল্ডার শমিত। তাঁকে আনার প্রক্রিয়াও ইতিমধ্যে শুরু করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।

এনএসসি বলছে, হামজা-শমিতের মতো আরও যাঁরা আছেন, তাঁদের নিয়ে সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনগুলো কাজ করলে দেশের ক্রীড়াঙ্গনও সমৃদ্ধ হবে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানপ্রবাসী জিমন্যাস্ট জ্যাক আশিকুল ইসলামকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রদানের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।

ফুটবলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের আগমন নতুন নয়। প্রথম কোনো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার হিসেবে বাফুফের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন জামাল ভূঁইয়া। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক হয় ডেনমার্কে জন্ম নেওয়া জামালের। এরপর জাতীয় দলে আসেন ফিনল্যান্ডে জন্ম নেওয়া তারিক কাজী।

ফুটবলের বাইরে বক্সিং, অ্যাথলেটিকস, সাঁতার—এমনকি জিমন্যাস্টিকসে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্রীড়াবিদেরা অংশগ্রহণ করে দেশকে সাফল্য এনে দিচ্ছেন। যে তালিকায় উল্লেখযোগ্য নাম—ইংল্যান্ডপ্রবাসী ইমরানুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাইক সিজার, নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী জিমন্যাস্ট আলী কাদির, লন্ডনপ্রবাসী সাঁতারু জুনাইনা আহমেদ ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বক্সার জিনাত ফেরদৌস।

এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকসে সোনা জিতেছেন ইমরানুর। সাইক সিজার ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০২২ সালে তুরস্কে হওয়া ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে বাংলাদেশের হয়ে খেলেস আলী কাদির। ২০২৩ সালের হাংজু এশিয়ান গেমসে অংশ নেন জিনাত। তার আগে ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সাঁতারু জুনাইনা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব স ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ