বৈশাখের প্রথম দিন। সন্তান আসবে ঘরে। কথাটি আগেই বলেছিলেন চিকিৎসক। এ জন্যই শাহাদাত হোসেন ও রিনা আক্তারের মনে বাড়তি আনন্দ। তর সইছিল না যেন তাদের! হ্যাঁ, ঠিকই বৈশাখের নতুন সূর্য হয়ে তাদের কোল আলোকিত করে সন্তান।

চরম এক টানাপোড়েনের সংসারে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে তৃতীয় সন্তানের আগমনে তাদের খুশি বেড়ে যায় বহুগুণে। সকাল বেলায় তাদের মেয়ের মিষ্টিমুখটা দেখে চিকিৎসক এবং দু’জন নার্স কোলে নেওয়ার পর হাসপাতালের তালিকায় যখন নামটি দেবেন তখন তারা বলেন, ‘এই যে শুনেন মা-বাপ দু’জন। আজ বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখ। তাই মেয়ের নামটি আমরা তালিকায় ‘বৈশাখী’ দিয়ে দিলাম। খুশি তো?’ শাহাদাত আর রিনা বেগম মাথা নেড়ে সায় দিলেন। তবে চিকিৎসক আবার সঙ্গে  সঙ্গে একটু স্পষ্ট করে বলেন, ‘ইচ্ছা করলে আপনারা এই বিশেষ দিনের নামের সঙ্গে নিজেদের পছন্দের আরও নাম জুড়ে দিতে পারেন।’  

নবজাতকের বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় রিকশাচালক। গত আট বছর ধরে অভাব-অনটনের তাড়নায় দুই ছেলে- পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রহমত আর ছোট ছেলে মাদ্রাসায় পড়ুয়া ইসমাইলকে নিয়ে চলে আসেন চাঁদপুর জেলা শহরের রহমতপুর কলোনিতে। এখানে একটা সেমিপাকা ছোট এক রুমের ভাড়া বাসা নেন। তার মূল বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদী রামপুর গ্রামে। স্ত্রী রিনা আক্তারের বাড়িও একই উপজেলার পাশের গ্রামে। শহরে এসে শাহাদাত রিকশা নিয়ে ভাড়ায় তা চালান। ৩০০ টাকা ভাড়া শোধ করেন আর এক-দেড়শ টাকায় চলে সংসার।  

পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া মেয়েকে নিয়ে কথা হয় বাবা শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাত ৩টায় স্ত্রী রিনার প্রসব ব্যথা ওঠে। ক্রমেই ব্যথা বাড়তে থাকলে একটা অটো ডেকে আমার এক ভাবিসহ বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (যেটি মাতৃমঙ্গল নামে পরিচিত) নিয়া আসি। সঙ্গে সঙ্গেই দারোয়ান হাসপাতালের গেইট খুইলা দেয় এবং নার্স এসে আমার স্ত্রীকে বেডে দেয়। পরপরই ডিউটি ডাক্তার আসেন। তারা ভাবিকে বললেন, চিন্তা করবেন না, সবকিছু ঠিক আছে ইনশাআল্লাহ। উনার নরমাল ডেলিভারিই হবে এবং মায়ের গর্ভের সন্তান ভালো আছে।’ 

শাহাদাত বলেন, ‘আমি হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়ানো থাকতে থাকতেই ভোর রাইত শেষ হইয়া   চারদিক ফর্সা হইতাছে দেখতাছি। এক সময় ভেতর থেইকা দারোয়ান আইসা বলল– আসেন ভেতরে। আপনে মেয়ের বাপ হইছেন। তখন আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। ডাক্তার এবং নার্স বলল, সকাল সাড়ে ৮টায় আমরা আপনার সন্তান প্রসব করিয়েছি। একটা স্যালাইন আর সামান্য কিছু ওষুধ শেষ হলেই ১০টার মধ্যেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডাক্তার ও নার্সরা প্রথমে আমার ভাবির কোলে দেয় আমার মেয়েকে। পরে তার মায়ের কাছে। এ সময় সন্তানটির পরনে ছিল একটা লুঙ্গি কাটা আর ছেঁড়া কাঁথা মোড়ানো। সকাল ১০টার একটু পরে একটা অটোরিকশায় বাসায় তাদের পাঠাইলেও আমি গেলাম না। কারণ আমি আমার একমাত্র মাইয়াডার লেইগা দুইডা পাতলা জামা, মশারি আর ওষুধ কিনার লাইগা কালীবাড়ি এলাকায় গেলাম। পরে কিন্না বাসায় ফিরা আইলাম। 

‘একটা ভালো খবর হইলো কী জানেন স্যার, ফরিদগঞ্জের ডাক্তার পরেশ আর এই কেন্দ্রের ডাক্তাররা বলছে, আমার সন্তানের জন্ম হবে ১৪ এপ্রিল মানে বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ। একদম ঠিক ঠিক মেয়েটা সেই দিনই হইলো।’

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মেহেদী আল মাসুদ বলেন, ‘নববর্ষের প্রথম প্রহরের রোগীই  রিনা আক্তার। তার চিকিৎসার কোনোরূপ ত্রুটিই আমরা করিনি।’ 

২০১৩ সালে বিয়ে হয়েছে এই দম্পতির। অভাব-অনটনের সঙ্গেই তাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে।  

শাহাদাত বলেন, ‘একটা ভালো কোনো কাজ পাইলে রিকশা চালানো ছাইরা দিতাম। অনেক কষ্ট  হয়। দুই ছেলে সন্তানের পর নববর্ষে আসা মেয়েটি ঘুরিয়ে দিতে পারে ভাগ্যের চাকা। মেয়ে আমার সুস্থ থাক বাইচা থাক– এই দোয়া চাই সবার কাছে আর মা রিনা বেগমও যেন ভালো থাকে।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক নববর ষ প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ