ভোরের আলো ফোটার আগেই শুরু হয় দিনাজপুরের টমেটোর বাজারটি। প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের উভয় পাশে ভ্যানগাড়ি, ট্রাক, মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান আর মানুষে মানুষে ঠাসাঠাসি থাকে বাজার এলাকা। খানিকটা দূর থেকেই কানে আসে যানবাহনের হর্ন আর দরদামের হাঁকডাক। সকাল ৯টার মধ্যে দর–কষাকষি ও কেনাবেচা শেষ। এরপর বিকেল পর্যন্ত চলে লোড-আনলোড। ট্রাকে করে টমেটো যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, নারায়গঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দৈনিক গড়ে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার টমেটো কেনাবেচা হয় দিনাজপুরের গাবুড়া বাজারে।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, খুব বেশি আগের কথা নয়। নব্বইয়ের দশকে সদর উপজেলার গর্ভেশ্বরী নদীর তীরে গাবুড়া এলাকায় টমেটোর বাজারটি শুরু হয়। এর মধ্যে দেশের প্রায় সব জেলার সবজি ব্যবসায়ী, বিশেষ করে টমেটো ব্যবসায়ীর কাছে পরিচিতি পেয়েছে বাজারটি। প্রতিবছর মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে চলে জুনের শেষ পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ জন পাইকার আসেন টমেটো কিনতে। মৌসুমের পুরো সময় তাঁরা দিনাজপুরেই থেকে যান। এই সময়ে অন্তত ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয় এখানে। যাদের মধ্যে বড় একটা অংশ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী।

গত মঙ্গলবার বাজার ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে সারি সারি দাঁড়ানো ভ্যানগাড়ি। প্রতি গাড়িতে দুই থেকে চারটি বড় আকারের ঝুড়িতে ভর্তি টমেটো। নামেও রয়েছে ভিন্নতা। বিপুল প্লাস, প্রভেনসিভ, রোমা ভিএফ, মিন্টু সুপার, আনসাল, রানী ও শক্তি প্লাস। কোনোটি গোলাকার, কোনোটি লম্বাকৃতির। নেড়েচেড়ে দেখছেন পাইকার। দামে মিললে নেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পাইকারের আড়তঘরে। সেখানে ক্যারেটে (প্লাস্টিকের ঝুড়ি) ভরানো হচ্ছে। পাশেই দাঁড় করানো ট্রাকে ক্যারেটগুলো তুলছেন ট্রাকশ্রমিকেরা।

প্রতিবছর মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে বাজারটি চলে জুনের শেষ পর্যন্ত.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী

আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।

রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।

মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ