আলহামদুলিল্লাহ ভালো লাগছে, বংশের প্রথম প্রদীপ
Published: 17th, April 2025 GMT
নতুন বছরের প্রথম সূর্যটি যখন পুবের আকাশে ফুটে উঠল, এর কিছুক্ষণ পরই ঠিক ভোর ৬টায় পটুয়াখালীর শাহীন-জোহরা দম্পতির ঘর আলোকিত করে এলো এক ফুটফুটে অতিথি। এ দম্পতির কোলজুড়ে প্রথম সন্তান জন্ম নেওয়ায় বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানাসহ পুরো পরিবার আনন্দিত, উদ্বেলিত। নতুন অতিথিকে নিয়ে নানান স্বপ্ন বুনছেন তারা।
শাহীন খাঁ এইচএসসি ও জোহরা বেগম এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও তাদের সচেতনতার কোনো ঘাটতি নেই। তাদের সংসারে অর্থের অভাব থাকলেও অভাব ছিল না সুখের। এক বছর আট মাস আগে বিয়ে হয় তাদের। শাহীন নিজ এলাকায় ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করে যা পান তাতেই সন্তুষ্ট তারা। প্রথম সন্তানটিকে সুস্থ ও পুষ্ট রাখতে এবং সন্তানের মাকে শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে যা যা করণীয় তার সবটুকু দায়িত্ব পালন করেছেন শাহীন। স্ত্রীর গর্ভে সন্তান ধারণের পর থেকে শত কষ্টের মাঝেও সংসারের অভাব বুঝতে দেননি স্ত্রীকে। একদিকে স্ত্রী গর্ভবতী, অন্যদিকে বছরখানেক ধরে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছেন। পুরো সংসারের বোঝা এসে পড়ে শাহীনের মাথার ওপর। দিন-রাত পরিশ্রম করে সংসারের চাকা সচল রাখেন। এরপর বছরের প্রথম দিনের প্রথম প্রহরেই তাদের অভাবের আঁধারে জ্বলে উঠলো আলোর প্রদীপ।
পটুয়াখালী জেলা সদর থেকে ৪৪ কিলোমিটার পূর্ব দিকে এবং বাউফল উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে সূর্য্যমনি ইউনিয়নের দক্ষিণ সূর্য্যমনি এলাকার কৃষক নাসির উদ্দিন খাঁ ও গৃহিণী কোহিনুর বেগমের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে শাহীন সবার বড়। এইচএসসি পাস করার পর শাহীনের আর লেখাপড়া হয়নি। সংসারের হাল ধরতে এলাকায় শুরু করেন ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ। এক বছর আট মাস আগে ২০২৩ সালের আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে একই উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামের চুন্নু হাওলাদার ও মমতাজ বেগমের মেয়ে জোহরার সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। স্ত্রীর গর্ভে সন্তান ধারণের পর শাহীন-জোহরা দম্পতির স্বপ্ন ছিল একটি সুস্থ ও সুন্দর সন্তান যেন হয় তাদের। হোক ছেলে কিংবা মেয়ে। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে ছিল না কোনো মাথাব্যথা। স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় তারা মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, পহেলা বৈশাখ সূর্যোদয়ের পরপরই ভোর ৬টায় এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক প্রসূতির পুত্র সন্তান হয়েছে। এটি ছিল স্বাভাবিক প্রসব। শিশুটির ওজন হয়েছিল ৩ দশমিক ২ কেজি। মা ও সন্তান দু’জনই সুস্থ রয়েছে। সন্তান প্রসবের ঘণ্টাখানেক পরই তারা বাড়ি চলে যান। রোববার রাত ১২টার দিকে এ প্রসূতিকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। বছরের প্রথম দিন ভোরে সন্তান জন্ম দেওয়ায় হাসপাতাল থেকে প্রসূতিকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
নতুন অতিথির মা জোহরা বেগম বলেন, ‘এ সময়টায় আমার দিকে তাঁর (স্বামী) সবসময় খেয়াল ছিল। সন্তান ও আমি দু’জনে যাতে সুস্থ থাকতে পারি সবসময় সে দিকে নজর রেখেছেন উনি। চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সন্তান প্রসবের নির্ধারিত তারিখ ছিল চৈত্র সংক্রান্তির দিন। ওইদিন রাত ১২টার দিকে প্রসব-যন্ত্রণা শুরু হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে যাই এবং ভোর ৬টায় সন্তান প্রসব হয়। ঘণ্টাখানেক পর আবার বাড়ি চলে আসি। কোনো সমস্যা হয়নি। ডাক্তার-নার্স সবাই আন্তরিক ছিলেন, যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন।’
নবজাতকের বাবা শাহীন খাঁ বলেন, ‘নতুন বছরের প্রথম দিনের ভোরে আমি বাবা হতে পেরে আনন্দিত এবং গর্বিত। প্রত্যেক বাবা-মা’রই তাঁর সন্তানকে নিয়ে অনেক প্রত্যাশা থাকে, স্বপ্ন থাকে। আমরাও এর ব্যতিক্রম নই। আমাদেরও এ সন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন আছে, প্রত্যাশা আছে। আমি চাই, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের এ ছোট্ট সন্তানকে সুস্থ রাখুক, ভালো রাখুক। ভবিষ্যতে সে যেন ভালো মানুষ হয়, সুশিক্ষিত এবং দেশের সুনাগরিক হতে পারে’।
দাদী মমতাজ বেগম বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো লাগছে। আমরা সবাই খুশি ও আনন্দিত। বছরের প্রথম দিনটিতে খুব ভোরে আমার বংশের প্রথম প্রদীপ আসায় আমরা সবাই মহাখুশি। নাতি ও বউ মা ভালো আছে ও সুস্থ আছে। অনেক অনেক শুকুর আল্লাহ পাকের কাছে। আপনারা আমার নাতির জন্য দোয়া করবেন।’
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, নতুন বছরের ভোরের সূর্যোদয়ের পরপরই এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক প্রসূতি সন্তান প্রসব করেছেন। এটি সত্যিই তাদের জন্য আনন্দের ও গর্বের খবর। তারা শিশুর মাকে অভিনন্দন ও বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের কোনো উপহার দিতে পারিনি। সত্যি কথা বলতে কি, আমি বুঝে উঠতে পারিনি বছরের এমন একটি দিনে আমার প্রতিষ্ঠানে সন্তান জন্ম হলে কিছু উপহার দিতে হয়।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স বছর র প রথম দ ন প রস ত কর ছ ন উপজ ল আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।