কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের নামে এ কোন রাজনীতি
Published: 17th, April 2025 GMT
বুধবার সকালে দিলু রোডের বাসা থেকে বের হতেই দেখি, তেজগাঁওমুখী সড়ক স্থবির হয়ে আছে। কোনো যানবাহন চলছে না।
খবর নিয়ে জানলাম, ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১০টার দিকে সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নেন তাঁরা। সড়ক আটকে রাখায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এতে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয় এবং যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। ঢাকার কোনো এক সড়ক অচল হয়ে পড়লে শহরের বড় অংশ অচল হয়ে পড়ে।
অবরোধকারীদের মধ্যে সরকারি–বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ (টিএসসি) বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীরা রয়েছেন।
তাঁদের দাবি যৌক্তিক না অযৌক্তিক, সেই বিতর্কে না গিয়েও বলব, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকার বা কর্তৃপক্ষ আগে কথা বলে কেন সমস্যার সমাধান করল না?
একই দাবিতে তাঁরা আগেও আন্দোলন করেছিলেন।
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ঘটনাটি আরও উদ্বেগজনক। গত বছর ক্ষমতার পালাবদলের আগে উপাচার্য ছিলেন মিহিররঞ্জন।
‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসেবে তাঁকে পদচ্যূত করা হয়। এরপর এলেন মোহাম্মদ মাছুদ। সহ উপাচার্য শরিফুল আলম।
শিক্ষকেরাও দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েন, কেউ উপাচার্যের পক্ষে। কেউ সহ উপাচার্যের পক্ষে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যিালয়ে চাপা উত্তেজনা চলছিল।
১৮এপ্রিল ছাত্রদলের লিফলেট বিতরণকে কেন্দ্র কর শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একপক্ষ বললেন, কুয়েটে দলীয় ছাত্ররাজনীতি চলবে না।
তাদের পেছনে প্রশাসনেরও কারও কারও সায় ছিল বলে অভিযোগ আছে। যারা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করছেন, তারাও একধরনের রাজনীতি করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে।
২৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ৬ দফা দাবি পেশ করেছিলেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল। পৌনে দুই মাসেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্যাম্পাসে এসে অবস্থান নেন এবং হলের তালা ভেঙে ভেতর ঢুকে পড়েন।
কুয়েট শিক্ষার্থীরা প্রথমে ৬ দফা দাবি জানিয়েছিলেন। এখন বলছেন, এক দফা; অর্থাৎ উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কুয়েটের বিভিন্ন বিভাগের সামনে গিয়ে শিক্ষকদের তালা খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু শিক্ষকেরা সাড়া দেননি। এরপর তারা নিজেরাই তালা ভেঙে হলে ঢুকে পড়েন।
একটি ঘটনা কীভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই মাস অচল করে রাখে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ কুয়েট।
এখানে শিক্ষার্থীদের যেমন দায় আছে, তেমনি দায় আছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকারেরও। শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে বাসে চড়ে ঢাকায় এলেন।
তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলো না। আর কুয়েট কর্তৃপক্ষ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের মধ্যেই সমাধান খুঁজে পেয়েছে। ৩৭ জনকে সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়।
বুধবার শিক্ষার্থীরা লিখিত ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘যেহেতু ভিসি কুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, যেহেতু ভিসি ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করেছেন, যেহেতু ভিসি নেট, পানি অফ করে হল থেকে বের করে দিয়েছেন, যেহেতু ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে ইন্ধন জুগিয়েছেন, যেহেতু ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছেন, সেহেতু আমরা ছয় দফা থেকে এক দফা ঘোষণা করছি।’
আসলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সমস্যাটি উপলব্ধিও করতে পারেনি।
যখন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে হল খোলার দাবি জানিয়েছেন, তখন সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট জরুরি সভা ডেকে আগামী ২ মে আবাসিক হল এবং ৪ মে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নেয়।
স্বাভাবিকভাবে এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়। যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক আস্থার ওপর।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে লিফলেট বিতরণকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়।
সেদিন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়।
তাদের দাবি, ওই মিছিলে ছাত্রদল বহিরাগতদের নিয়ে হামলা করে। কথায় বলে এক হাতে তালি বাজে না। দুই পক্ষই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার নামে যা করেছেন, তাও একধরনের রাজনীতি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৩৭ শিক্ষার্থীর নামে বহিষ্কারাদেশ জারি করে। তাদের এই সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক সেই প্রশ্ন উঠেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। একটি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের শিকার হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে।
তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব।
অটোরিকশাচালকের সঙ্গে বিতণ্ডা থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় ঘটনা হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এক যুবককে মারধরের পর জুতার মালা গলায় পরিয়ে পুলিশে সোপর্দ।
মারধরের শিকার ওই যুবক পরিসংখ্যান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান উপলক্ষে তিনি ক্যাম্পাসে আসেন। তাঁকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ছাত্রদলের দাবি, ওই যুবক ছাত্রলীগের উপপক্ষ সিএফসির (চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ওই উপপক্ষের নেতা–কর্মীরা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। ছাত্রদলের কর্মীদের মারধরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি।
এই অভিযোগ সত্য হলেও মারধর ও অপমান করার এখতিয়ার কি ছাত্রদলের আছে? তাহলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের ফারাকটি কী হলো?
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
১৫ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, যা একপর্যায়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপে রূপ নেয়। এ ঘটনায় অন্তত দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এই দুই কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে কতবার শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষ লিপ্ত হয়েছেন, তার হিসাব নেই। এখানে শক্ত কোনো কারণও থাকার প্রয়োজন নেই।
কোন কলেজের শিক্ষার্থী আগে যাবেন না পরে যাবেন, এটাও সংঘাতের কারণ হতে পারে। সোমবারের ঘটনার সূত্রপাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের লেখালেখি।
লেখার জবাব লিখে না দিয়ে তাঁরা ইটপাটকেলে জবাব দিয়েছেন। এতে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী আহত হন।
শিক্ষাঙ্গনে যে এই নৈরাজ্য চলছে, তা দূর করার দায়িত্ব কার? সরকারের। কিন্তু সরকার সেই দায়িত্ব পালন করছে না বলেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলেছে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, যা খুশি করা।
কাজী নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার পংক্তি ধার করে বলতে হয়, ‘যখন চাহে এ মন যা।’ যখন চাহে এ মন যা দিয়ে আর যাই হোক কোনো দেশের শিক্ষাকে বাঁচানো যাবে না।
আরও পড়ুনগণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী নতুন ছাত্ররাজনীতি কেমন হবে০৫ অক্টোবর ২০২৪খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ঘটনাটি আরও উদ্বেগজনক। গত বছর ক্ষমতার পালাবদলের আগে উপাচার্য ছিলেন মিহিররঞ্জন। ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসেবে তাঁকে পদচ্যূত করা হয়।
এরপর এলেন মোহাম্মদ মাছুদ। সহ উপাচার্য শরিফুল আলম। শিক্ষকেরাও দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েন, কেউ উপাচার্যের পক্ষে। কেউ সহ উপাচার্যের পক্ষে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যিালয়ে চাপা উত্তেজনা চলছিল।
১৮ এপ্রিল ছাত্রদলের লিফলেট বিতরণকে কেন্দ্র কর শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একপক্ষ বললেন, কুয়েটে দলীয় ছাত্ররাজনীতি চলবে না।
তাদের পেছনে প্রশাসনেরও কারও কারও সায় ছিল বলে অভিযোগ আছে। যারা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করছেন, তারাও একধরনের রাজনীতি করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে।
২৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ৬ দফা দাবি পেশ করেছিলেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল। পৌনে দুই মাসেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্যাম্পাসে এসে অবস্থান নেন এবং হলের তালা ভেঙে ভেতর ঢুকে পড়েন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সমস্যাটি উপলব্ধিও করতে পারেনি। যখন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে হল খোলার দাবি জানিয়েছেন, তখন সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট জরুরি সভা ডেকে আগামী ২ মে আবাসিক হল এবং ৪ মে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। স্বাভাবিকভাবে এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়। যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক আস্থার ওপর।কুয়েট শিক্ষার্থীরা প্রথমে ৬ দফা দাবি জানিয়েছিলেন। এখন বলছেন, এক দফা; অর্থাৎ উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কুয়েটের বিভিন্ন বিভাগের সামনে গিয়ে শিক্ষকদের তালা খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানান।
কিন্তু শিক্ষকেরা সাড়া দেননি। এরপর তারা নিজেরাই তালা ভেঙে হলে ঢুকে পড়েন।
একটি ঘটনা কীভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই মাস অচল করে রাখে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ কুয়েট।
এখানে শিক্ষার্থীদের যেমন দায় আছে, তেমনি দায় আছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকারেরও। শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে বাসে চড়ে ঢাকায় এলেন।
তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলো না। আর কুয়েট কর্তৃপক্ষ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের মধ্যেই সমাধান খুঁজে পেয়েছে। ৩৭ জনকে সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়।
বুধবার শিক্ষার্থীরা লিখিত ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘যেহেতু ভিসি কুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, যেহেতু ভিসি ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করেছেন, যেহেতু ভিসি নেট, পানি অফ করে হল থেকে বের করে দিয়েছেন, যেহেতু ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে ইন্ধন জুগিয়েছেন, যেহেতু ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছেন, সেহেতু আমরা ছয় দফা থেকে এক দফা ঘোষণা করছি।’
আরও পড়ুন‘রাজনীতি’ নিষিদ্ধের মধ্য দিয়ে শুরু হোক শিক্ষার উন্নয়ন১২ আগস্ট ২০২৪আসলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সমস্যাটি উপলব্ধিও করতে পারেনি। যখন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে হল খোলার দাবি জানিয়েছেন, তখন সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট জরুরি সভা ডেকে আগামী ২ মে আবাসিক হল এবং ৪ মে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নেয়।
স্বাভাবিকভাবে এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়। যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক আস্থার ওপর।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে লিফলেট বিতরণকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়।
সেদিন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়। তাদের দাবি, ওই মিছিলে ছাত্রদল বহিরাগতদের নিয়ে হামলা করে। কথায় বলে এক হাতে তালি বাজে না। দুই পক্ষই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার নামে যা করেছেন, তাও একধরনের রাজনীতি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৩৭ শিক্ষার্থীর নামে বহিষ্কারাদেশ জারি করে। তাদের এই সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক সেই প্রশ্ন উঠেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে।
একটি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের শিকার হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব।
অটোরিকশাচালকের সঙ্গে বিতণ্ডা থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় ঘটনা হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এক যুবককে মারধরের পর জুতার মালা গলায় পরিয়ে পুলিশে সোপর্দ।
মারধরের শিকার ওই যুবক পরিসংখ্যান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান উপলক্ষে তিনি ক্যাম্পাসে আসেন। তাঁকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ছাত্রদলের দাবি, ওই যুবক ছাত্রলীগের উপপক্ষ সিএফসির (চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ওই উপপক্ষের নেতা–কর্মীরা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী।
ছাত্রদলের কর্মীদের মারধরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। এই অভিযোগ সত্য হলেও মারধর ও অপমান করার এখতিয়ার কি ছাত্রদলের আছে?
তাহলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের ফারাকটি কী হলো?
আরও পড়ুনছাত্ররাজনীতি এরপরও কেন বন্ধ করা গেল না১৬ মার্চ ২০২৫রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
১৫ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, যা একপর্যায়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপে রূপ নেয়। এ ঘটনায় অন্তত দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এই দুই কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে কতবার শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষ লিপ্ত হয়েছেন, তার হিসাব নেই। এখানে শক্ত কোনো কারণও থাকার প্রয়োজন নেই।
কোন কলেজের শিক্ষার্থী আগে যাবেন না পরে যাবেন, এটাও সংঘাতের কারণ হতে পারে। সোমবারের ঘটনার সূত্রপাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের লেখালেখি। লেখার জবাব লিখে না দিয়ে তাঁরা ইটপাটকেলে জবাব দিয়েছেন। এতে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী আহত হন।
শিক্ষাঙ্গনে যে এই নৈরাজ্য চলছে, তা দূর করার দায়িত্ব কার? সরকারের। কিন্তু সরকার সেই দায়িত্ব পালন করছে না বলেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলেছে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, যা খুশি করা।
কাজী নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার পংক্তি ধার করে বলতে হয়, ‘যখন চাহে এ মন যা।’ যখন চাহে এ মন যা দিয়ে আর যাই হোক কোনো দেশের শিক্ষাকে বাঁচানো যাবে না।
সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক ও কবি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কল জ র শ ক ষ র থ র এক শ ক ষ র থ ম রধর র শ ক র ২৩ ফ ব র য় র ক র কর ছ ন ল প ত হয় ছ ক ন দ র কর ছ ত রদল র ত হয় ছ ন ম হ ম মদ যখন চ হ সরক র র এ মন য মন ত র র ঘটন সমস য এ ঘটন করছ ন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত