মাত্র দেড় বছর আগেও নাহিদ আহাম্মেদ ছিলেন বেকার। কখনো টুকটাক কাজ পেলে করতেন, না পেলে ঘরেই বসে থাকতেন। কী করবেন, কোথা থেকে শুরু করবেন—এই অনিশ্চয়তায় দিন কাটত তাঁর। এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে হাতে নেন মৌ চাষের পথ। আর তাতেই বদলে যায় তাঁর জীবন।
জামালপুর পৌর শহরের বন্দেরবাড়ি এলাকার বাসিন্দা নাহিদ আহাম্মেদের (৩৫) বাবা মো.
স্থায়ী কোনো কাজ ছিল না। যে কাজ যেভাবে পেয়েছেন, সেটাই করেছেন। কিন্তু সব সময় কাজ জুটত না। অবশেষে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ নেন মৌ চাষের ওপর। পরে এক লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন ২০টি মৌ বাক্স দিয়ে। এখন তাঁর মাসিক আয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আগামী বছরে আরও ৫০টি বাক্স কিনতে চান তিনি।
নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন জামালপুর মৌ খামার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে মধু বিক্রি করেন খুচরা ও পাইকারি দরে। ফেসবুকেও রয়েছে তাঁর একটি মধু বিক্রির পেজ। বর্তমানে তাঁর প্রায় ২০০ জন নিয়মিত ক্রেতা রয়েছেন। মৌ চাষে সফলতা অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন সম্মাননা স্মারকও।
জীবনসংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে নাহিদ বলেন, ‘জীবনটা সত্যিই অনেক কঠিন। ছোটবেলা থেকেই সংগ্রাম করতে হয়েছে। বাবার আয়ে সংসার চলত খুব কষ্টে। ছাত্রজীবনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনি করেছি। সেখান থেকে যা পেয়েছি, তা দিয়ে চলেছি, পরিবারকেও দিয়েছি। পরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। সারা দিন পরিশ্রম করে যা পেতাম, তা দিয়ে সংসার চলত না। চাকরি ছেড়ে দিয়ে ছোট একটা মুদিদোকান দিই। কিন্তু তাতেও সফলতা আসেনি।’
নাহিদ বলেন, ‘একসময় পুরোপুরি হতাশ হয়ে যাই। বুঝতে পারছিলাম না কোথায় যাব, কী করব। তখন এক বড় ভাই মৌ চাষের পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ছিল না। তবে পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ নিই। শুরুতে খুব ভয় লাগত। মৌমাছি কামড় দিত। এখনো শরীরে অনেক দাগ আছে।’
সফলতার পেছনে কী আছে—জানতে চাইলে নাহিদ বলেন, ‘প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়েছে। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো ধৈর্য, সততা আর মনোযোগ। মৌমাছির বাক্স নিয়ে আমাকে দেশের নানা জায়গায় ঘুরতে হয়েছে—শর্ষে, তিল, কালিজিরা, লিচুবাগান—এমনকি রাবারবাগানেও থেকেছি মাসের পর মাস ধরে। পরিশ্রমের পাশাপাশি আমার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার সততা। মধু অনেক জায়গায় পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলোতে অনেক ভেজাল থাকে। কিন্তু আমি একদম খাঁটি মধু ক্রেতাদের দিয়ে থাকি। মধু বিশুদ্ধ হওয়ায় আমার ক্রেতারা সন্তুষ্ট। কেউ একবার নিলেই বারবার আসেন। তাই অল্প সময়েই আমি ২০০ জন নিয়মিত ক্রেতা পেয়েছি।’
ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘এখনো বড় কিছুই হয়নি। তবে আর বড় হওয়ার স্বপ্ন আছে। সামনে আরও বড় পরিসরে মৌ চাষ করতে চাই। এ ছাড়া বেকার যুবকদের মৌ চাষের ট্রেনিং দিতে চাই। যাতে আরও অনেকেই এভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন। বেকার জীবনের কঠিন সময়টা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। আমার মতো যাতে আর কেউ এতটা টের না পাই। সে জন্য বেকার যুবকদের মৌ চাষের সব পদ্ধতি শেখাতে চাই।’
মধু সংগ্রহের মৌসুম প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত মধু আহরণ করা যায়। এই সময়ে তিনি বাক্স নিয়ে যান জামালপুর, সরিষাবাড়ী, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে। প্রতি বাক্স থেকে মাসে দুই-তিনবার মধু সংগ্রহ করেন। কালিজিরা, শর্ষে, লিচু ফুল, তিল ও রাবারপাতার মধু বিক্রি করেন তিনি। খুচরা দরে কালিজিরার মধু প্রতি কেজি ১ হাজার ৪০০, রাবারপাতা ১ হাজার ৬০০, তিল ১ হাজার, লিচু ফুল ৬০০ ও শর্ষের ফুলের মধু ৪০০ টাকা করে বিক্রি হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন হ দ বল ন র পর ম
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে ক্যারিয়ার–বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত
জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে অনুষ্ঠিত হলো ‘রোড টু বিসিএস—সফলতার গল্প’ শীর্ষক সেমিনার। কলেজের ক্যারিয়ার ক্লাবের আয়োজনে গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হারুন অর রশিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষক সংসদের সম্পাদক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। সভাপতিত্ব করেন ক্যারিয়ার ক্লাবের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আল মারুফ।
সেমিনারে ৪৪তম বিসিএসে সফল হওয়া তিন তরুণ অংশ নেন। ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত ফরহাদ হোসেন (প্রথম), পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত আবু সালেহ মো. এমদাদুল্লাহ (৩১তম) এবং শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত কৌশিক গোপ (২৩তম) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন। তাঁরা বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি ও সফলতার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ বলেন, ক্যারিয়ারে সফল হতে চাই অধ্যবসায়। পড়াশোনার পাশাপাশি বই পড়া, ভাষাজ্ঞান ও আত্মোন্নয়নমূলক শিক্ষা খুব জরুরি।
ক্যারিয়ার ক্লাবের উপদেষ্টা রবিউল আলম লুইপা বলেন, ক্লাব নিয়মিত ক্যারিয়ার–বিষয়ক সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন করছে। সামনে সিভি লেখার কর্মশালা, উচ্চশিক্ষাবিষয়ক সেমিনার ও জব ফেয়ারের আয়োজন করা হবে। সেমিনারে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী নুসরাত আরা মীম বলেন, অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিসিএস পরীক্ষার ধাপ ও সফল হওয়ার কৌশল সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছে।
আরও পড়ুনজেন–জিরা কি চাকরিক্ষেত্রে সব সময় প্রশংসা চান১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আলোচনা শেষে ক্যারিয়ার–বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন ক্লাবের উপদেষ্টা সদস্য মাহফুজুর রহমান খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ওমর ফারুক। চার শতাধিক শিক্ষার্থী সেমিনারে অংশ নেন।
আরও পড়ুন১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫