কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে ২৫০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার সি–ট্রাক। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় ‘ভাষাসৈনিক আবদুল জব্বার’ নামের সি-ট্রাকটি চালু করা হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ ( বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, ২৫ এপ্রিল থেকে নিয়মিত যাতায়াত করবে সি–ট্রাকটি। যাত্রীপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ হতে পারে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা।

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর জেটিঘাটের পন্টুন থেকে সি–ট্রাকটির চলাচল শুরু হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (বন্দর) এ কে এম আরিফ উদ্দিন, যুগ্ম পরিচালক সবুর খান, উপপরিচালক (চট্টগ্রাম দপ্তর) মো.

কামরুজ্জামান, সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান প্রমুখ।

সি–ট্রাক চালু প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জোয়ারের সময় সি–ট্রাকটি চালু করে সফল হয়েছি। তবে ১০ কিলোমিটারের সাগর চ্যানেলের বিভিন্ন অংশে পলি জমে ভরাট হয়ে রয়েছে, ডুবোচর জেগেছে। ভাটার সময়েও সি–ট্রাক চলে কি না, তা পরীক্ষা করা হবে। সে ক্ষেত্রে সমস্যা হলে চ্যানেলের ভরাট অংশ খননের উদ্যোগে নেওয়া হবে।’

এ কে এম আরিফ উদ্দিন আরও বলেন, ২৫ এপ্রিল এই নৌপথে স্থায়ীভাবে সি–ট্রাক চলাচল শুরু হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে সি–ট্রাকের উদ্বোধন করবেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা। প্রথম দিকে একটি সি–ট্রাক চলাচল করবে। পরে সি–ট্রাকের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। সি–ট্রাকের ভাড়া ৪০ টাকার বেশি হবে না।

বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর জেটিঘাট থেকে তিন কিলোমিটারের বাঁকখালী নদী এবং সাত কিলোমিটারের বঙ্গোপসাগর চ্যানেলসহ মোট ১০ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিতে সি–ট্রাকের সময় লেগেছে ৩৫ মিনিট।

নৌপথটিতে শতাধিক দ্রুতগতির নৌযান স্পিডবোট ও কয়েকটি কাঠের নৌকা ও লোহার ‘গামবোট’ যাত্রী নিয়ে চলাচল করে আসছে। স্পিডবোটে ১০ কিলোমিটারের নৌপথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ৮-৯ মিনিট। আর কাঠের ট্রলার ও গামবোটের লাগে ৪০ মিনিট। সন্ধ্যা ছয়টার পর এই নৌপথে স্পিডবোট ও গামবোটের চলাচল বন্ধ থাকে। ১০ জন ধারণক্ষমতার স্পিডবোটের জনপ্রতি ভাড়া ৯০ টাকা, আর ৪০ জন ধারণক্ষমতার গামবোটে ভাড়া ৩০ টাকা করে।

পরীক্ষামূলক সি–ট্রাকের প্রথম যাত্রায় ছিলেন কক্সবাজারের মহেশখালীর বাসিন্দা এবং মৎস্য ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারক আবদুস শুক্কুর। তিনি বলেন, মহেশখালীর পাঁচ লাখ মানুষের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হলো সি–ট্রাক চালুর মাধ্যমে। এখন উত্তাল সাগর এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতে মহেশখালীর যাত্রীরা কক্সবাজার শহরে পারাপারের সুযোগ পাবেন। এর মধ্য দিয়ে মহেশখালীতে উৎপাদিত মিষ্টি পান, লবণ-চিংড়ির ন্যায্যমূল্য পাবেন। পর্যটকেরাও নিরাপদে মহেশখালী দ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।

সি–ট্রাকের আরেক যাত্রী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব এসএম সুজা উদ্দিন বলেন, ‘মহেশখালীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিটি আজ পূরণ হলো। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সুফল এই সি–ট্রাক সার্ভিস। এর মাধ্যমে স্পিডবোট সিন্ডিকেটে ভেঙে গেলে সাধারণ যাত্রীরা হয়রানি ও দুর্ভোগমুক্ত হবেন।’

বেলা সাড়ে ১১টায় সি–ট্রাকটি যখন মহেশখালীর উদ্দেশে রওনা দেয় তখন ছাত্র-জনতার একটি অংশ সি–ট্রাকের ছাদে ওঠে স্লোগান ধরেন ‘ভেঙেছে রে ভেঙেছে/সিন্ডিকেট ভেঙেছে। তুমি কে আমি কে/জনতা জনতা’। মহেশখালীর গোরকঘাটে বিআইডব্লিউটিএর পন্টুনে সি–ট্রাকটি ভিড়লে সেটি দেখার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা ভিড় করেন।

মহেশখালীর বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথটি কয়েক যুগ ধরে কিছু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে। বিগত সরকারের আমলে দলীয় লোকজন স্পিডবোট ও নৌযান নিয়ন্ত্রণ করে যাত্রীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মাথাপিছু স্পিডবোটের ভাড়া ৭০ টাকার জায়গায় ১২০ টাকা নেওয়া হতো। তিনি আরও বলেন,‘ স্পিডবোটের ভাড়া এখন ৯০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। সি–ট্রাকের ভাড়া আমরা ৩০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানাই।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ মব ট

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট

পদ্মা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। এ ছাড়া ঘাটসংলগ্ন বহু স্থাপনা রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়ার সাতটি ফেরিঘাটের মধ্যে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল। ৬ নম্বর ঘাট থাকলেও এখনো সচল করা যায়নি। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাটসহ মধ্যবর্তী এলাকার ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটে কিছু বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্র বলছে, দৌলতদিয়া ঘাটের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় বর্তমানে সচল সব ঘাটই (৩, ৪ ও ৭ নম্বর) ভাঙনের ঝুঁকিতে। এর মধ্যে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট বেশি ঝুঁকিতে।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙন দেখা দেওয়ায় ফেরিঘাট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিআইডব্লিউটিএকে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি। তিনটি ঘাট সচল থাকলেও ভাঙন আরও বৃদ্ধি পেলে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফেরিঘাটের দুই কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণকাজের অংশ হিসেবে তিন দিনে প্রায় সাত শ বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে ফেরিঘাটের মধ্যবর্তী এলাকায় বস্তা ফেলা হয়নি। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ মিললে বাকি কাজ করা যাবে।

ঘাটসংলগ্ন এলাকায় ভাঙনের ঝুঁকি

ঘাটসংলগ্ন বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়া, বাজার, মসজিদ, স্কুলসহ একাধিক স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে অনেকে স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। ছাত্তার মেম্বার পাড়ার চারটি পরিবার তাদের ঘর সরিয়ে নিয়েছে।

ছাত্তার মেম্বার পাড়ার নদীর পাড়ের শেষ বসতি আলতাফ মোল্লার পরিবারের। বসতভিটা রক্ষা করতে না পেরে দুটি ঘর অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে পরিবারটি। আলতাফ মোল্লার স্ত্রী সূর্য বেগম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ছয়বার ভাঙনে ভিটামাটি হারায়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এইবার ভাঙলে সাতবার হইবে। এখন কোথায় দাঁড়াব বলতে পারছি না। ঘর, টিনের চাল, জিনিসপত্র ভেঙে পাশে রাখছি। এখন কোথাও জায়গা হলে চলে যাব।’

স্থানীয় আলতাফ মোল্লা, শাহাদৎ প্রামাণিক ও ময়ান সরদার বলেন, ‘কয়েক দিনে যে হারে ভাঙছে, এভাবে ভাঙন চললে ফেরিঘাট, বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়াসহ অনেক স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট