দিনাজপুরের ৩১৬ চালকলের নিবন্ধন বাতিল
Published: 19th, April 2025 GMT
গত আমন মৌসুমে সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় দিনাজপুরের ৩১৬টি চালকলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী স্বাক্ষরিত আফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্র জানিয়েছে, আপৎকালীন মজুদ গড়তে গত বছরের ১৭ নভেম্বর শুরু হয় সরকারের আমন ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান। সিদ্ধ চাল ও ধান সংগ্রহের সময়সীমা ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং আতপ চাল সংগ্রহের সময় ধরা হয়েছিল ১৫ মার্চ পর্যন্ত। দিনাজপুরে ধান সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ১৭ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন। সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল ৫২ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন এবং আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল ১৩ হাজার ৮০৫ মেট্রিক টন। ওই মৌসুমে ধান-চাল সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল এ জেলার ৯১১টি সিদ্ধ চালকল এবং ৮৩টি আতপ চালকল।
মৌসুম শেষে এসব চুক্তিবদ্ধ মিল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ৪৮ হাজার ৭২৪ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ শতাংশ। আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে ১১ হাজার ৩০৬ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৬ শতাংশ। ধান সংগ্রহ হয়েছে ২ হাজার ২৫৮ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৩ শতাংশ।
যেসব সিদ্ধ চালকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে দিনাজপুর সদর উপজেলার ৪০টি, বিরল উপজেলার ৪টি, বোচাগঞ্জ উপজেলার ৬০টি, কাহারোল উপজেলার ১৫টি, বীরগঞ্জ উপজেলার ১১টি, খানসামা উপজেলার ৪টি, চিরিরবন্দর উপজেলার ৩৩টি, পার্বতীপুর উপজেলার ১৬টি, ফুলবাড়ী উপজেলার ৪০টি, বিরামপুর উপজেলার ৭টি, হাকিমপুর উপজেলার ২টি, নবাবগঞ্জ উপজেলার ২৮টি, ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩৭টি। যে ২০টি আতপ চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে দিনাজপুর সদর উপজেলার ১৯টি ও চিরিরবন্দর উপজেলার একটি চালকল রয়েছে।
কয়েকজন মিলমালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে ধানের দাম বেশি ছিল। অন্যদিকে, চাল উৎপাদনেও খরচ বেশি পড়েছে। কয়েক বছর থেকে মিলাররা লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ করে আসছেন। সরকার যে দর দিয়েছে, তাতে প্রতি কেজিতে আমাদেরকে লোকসান গুনতে হয় ৫ থেকে ৬ টাকা। লোকসান গুনতে গুনতে অনেক মিলমালিকের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
মিলের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে বাংলাদেশ মেজর ও অটো মেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী বলেছেন, ধান এবং চালের দর নির্ধারণের ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য আছে। মিলমালিকরা তো লোকসান গুনেই আসছেন। সরকারের উচিত, ধান-চালের দামে সামঞ্জস্য রেখে সরবরাহের ক্ষেত্রে কৃষক ও সকল মিলমালিককে বাধ্য করা। নিবন্ধন বাতিল করে যদি পরে আবার বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ নানা হয়রানি করা হয়, তা সমীচীন হবে না।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেছেন, দিনাজপুর জেলায় চুক্তিযোগ্য সিদ্ধ চালকলের সংখ্যা ১ হাজার ২১০টি এবং আতপ চালকলের সংখ্যা ১০টি। এবার চুক্তিবদ্ধ সিদ্ধ চালকলের সংখ্যা ৯১১টি এবং আতপ চালকল ৮৩টি। একাধিকবার তাগাদা দিলেও অনেকে চুক্তিবদ্ধ হননি। এসব মিলের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত খাদ্য বিভাগের এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
ঢাকা/মোসলেম/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স দ ধ চ লকল ম ট র ক টন র উপজ ল র আতপ চ ল চ লকল র সরবর হ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।