পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভের ডাক
Published: 19th, April 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থী অপহরণের প্রতিবাদে রোববার তিন পার্বত্য জেলা, সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
শনিবার বিকেলে চাকসু ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ কর্মসূচি দেওয়া হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না অভিযোগ করে তিন দাবি তুলে ধরা হয়।
দাবিগুলো হলো– পাঁচ শিক্ষার্থীকে সুস্থ অবস্থায় দ্রুত মুক্তি, তাদের উদ্ধারে প্রশাসনের জোরালো ও কার্যকর ব্যবস্থা এবং অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
বিজু উৎসব শেষে চবি ক্যাম্পাসে ফেরার পথে গত বুধবার ভোরে খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে রিশন চাকমা, অলড্রিন ত্রিপুরা, মৈত্রীময় চাকমা, দিব্যি চাকমা ও লংঙি ম্রোকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপুন ত্রিপুরা ইউপিডিএফকে দায়ী করলেও, অস্বীকার করেছেন সংগঠনের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা।
শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে যৌথ বাহিনী খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত চালাচ্ছে। শনিবারও খাগড়াছড়ি সদরের ভাইবোন ছড়াসহ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়। তবে চার দিনেও অপহরণে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা জানান, তিনি প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে। সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভালো ভূমিকা নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা মুক্ত হওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী জাল্লাং এনরিকো কুবি বলেন, অপহরণের পর শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে চবি প্রশাসন, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। চার দিনেও আমরা তাদের কোনো খোঁজ পাইনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তিন পার্বত্য জেলা শহর, মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে সংহতি জানাতে সচেতন, মানবিক, প্রগতিশীল ছাত্র এবং নাগরিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চবি শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন সূত্রে আমরা এ অপহরণে ইউপিডিএফের জড়িত থাকার বিষয় জানতে পেরেছি। যে এলাকা থেকে অপহৃত হয়েছেন, সেটিও ইউপিডিএফ অধ্যুষিত।’
তিনি বলেন, ‘অভিভাবকদের ডেকে নিয়ে অপহরণকারীরা কী বলেছে, তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি জেনেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক শাংথুই প্রু, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ভুবন চাকমা, পহেলা চাকমা, পালি বিভাগের উহ্লাথোয়াই মারমা প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অপহরণ প চ শ ক ষ র থ অপহরণ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চান না সাত কলেজের শিক্ষকেরা
ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজের জন্য যে প্রক্রিয়ায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি বাস্তবায়িত হলে ওই সব কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন ওই সব কলেজের শিক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন এতে শিক্ষার্থী কমে গিয়ে উচ্চশিক্ষা সংকোচন হবে, বাড়বে বৈষম্য। বিশেষ করে ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে নারী শিক্ষার সুযোগ কমে যাবে। কলেজগুলোর শিক্ষকদের পদ-পদবি নিয়েও জটিলতার সৃষ্টি হবে।
এ জন্য তাঁরা চান প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় না করে পৃথক ক্যাম্পাস স্থাপন করে এই ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হোক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রস্তাবিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ থাকতে পারে।
এসব দাবিতে আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে বড় রকমের জমায়েত দেখিয়েছেন ওই সাত কলেজের শিক্ষকেরা। এতে কয়েক শ শিক্ষক অংশ নেন এবং মানববন্ধনও করেছেন।
ঢাকার এই সাতটি কলেজ একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। কলেজগুলো হলো—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু অধিভুক্ত করার পর থেকে যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়া, ফলাফল প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবিতে সময়-সময় আন্দোলন করে আসছিলেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে এই সাত কলেজের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজের জন্য নতুন যে বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে, তাতে এখনকার মতো একেকটি কলেজে সব বিষয় পড়াশোনা হবে না। সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এর মধ্যে স্কুল অব সায়েন্সের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস; স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউমিনিটিসের জন্য সরকারি বাংলা কলেজ এবং স্কুল অব বিজনেসের জন্য সরকারি তিতুমীর কলেজ; স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিসের জন্য কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাস নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘হাইব্রিড মডেলে’ চলা নতুন ধরনের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে আর ৬০ শতাংশ ক্লাস হবে সশরীর। তবে সব ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সশরীর।
মানববন্ধন শেষে ইউজিসির চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা