দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁ ভোক্তার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করলেও তা সরকারের কোষাগারে জমা দিচ্ছে না। এমনটি মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ কারণে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ করতে ৭০টি রেস্তোরাঁর একটি তালিকা করেছে, যেখানে ইলেকট্রনিকস ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানো হচ্ছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, এসব হোটেল-রেস্তোরাঁয় ইএফডি বসানোর বিষয়ে গত মাসে এনবিআরের এক বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা উত্তর, কুমিল্লা, রাজশাহী, রংপুর এবং খুলনা অফিস বিভিন্ন মহাসড়কে থাকা হোটেল ও রেস্তোরাঁর তালিকা প্রস্তুত করে।
এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানান, ভ্যাট চালান ইস্যু না করায় সরকার সেই ভ্যাট পাচ্ছে না বলে সচেতন ভোক্তা ও ভ্রমণকারীদের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাদের এক সভায় মহাসড়কে অবস্থিত ভ্যাটযোগ্য সব হোটেলে ও রেস্তোরাঁয় ইএফডি মেশিন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মহাসড়ক সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটের সঙ্গে সমন্বয় করে জেনেক্স ইনফোসিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ইএফডি মেশিন স্থাপনের প্রক্রিয়া অবিলম্বে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে মেশিন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।
এনবিআরের এ উদ্যোগের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও নবাবী ভোজ রেস্তোরাঁর মালিক কামরুল হাসান চৌধুরী বিপু সমকালকে বলেন, যে ৭০টি রেস্তোরাঁ শনাক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে যদি ২০ থেকে ৩০টিতে ইএফডি বসিয়ে বাকিগুলোকে ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে কী দাঁড়াবে! তখন ভ্যাট পরিশোধকারী রেস্তোরাঁগুলোকে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়াতে হবে। কিন্তু ভ্যাটবিহীন রেস্তোরাঁ তুলনামূলক কম দরে বিক্রি করবে। ফলে ভ্যাট পরিশোধকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি কমে যাবে। এনবিআরের কর্মকর্তারাই ভ্যাট ফাঁকির সুযোগ করে দেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, সব রেস্তোরাঁয় একযোগে ইএফডি বসালে বৈষম্য থাকবে না। ভ্যাট ফাঁকিও কমবে। এনবিআরকে বিষয়টি স্বচ্ছতার সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে।
যেসব রেস্তোরাঁয় বসছে ইএফডি
কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা উত্তরের অধীনে রয়েছে গাজীপুরের চৌরাস্তায় হোটেল নিরিবিলি-২, নিরিবিলি পিৎজা কিং অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, গজারিয়া পাড়ায় ড্রিম হেভেন রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড চায়নিজ, ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাঘের বাজারের পুষ্পদাম চায়নিজ অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট এবং শ্রীপুর মাওনায় আরএস ক্যাফে অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও খুশি মিঠাই ঘর।
কুমিল্লা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অধীনে ইএফডি বসছে পদুয়ার বাজারের হোটেল নুরজাহান, আহমেদনগরের স্যান্ডু হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, দুর্গাপুরের মিয়ামি রিসোর্ট-৩, মিয়ামি রিসোর্ট, মিয়ামি রিসোর্ট-২, গোল্ডেন হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট, হালিমা নগরের ড্রিম হাউস রেস্টুরেন্ট, দুর্গাপুরের কুমিল্লা হাইওয়ে হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, বিশ্বরোডের হোটেল মিয়ামি লিমিটেড, বুড়িচংয়ের খন্দকার ফুড গ্যালারি, হোটেল নুর মহল, যাইতুন, ময়নামতী হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট, হাইওয়ে ইন, পূর্বাশা গিফট অ্যান্ড খাদি, কাবাব এক্সপ্রেস অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, গ্রিন ভিউ হোটেল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড সুইটস, রয়েল হোস্ট, তাজমহল কমপ্লেক্স হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, হোটেল টাইমস স্কয়ার, লাকি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও লওভেন টেস্ট ফুড অ্যান্ড বেকার্স। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হোটেল উজান ভাটি অ্যান্ড রিসোর্ট, হোটেল রাজমণি, লাল শালুক হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও সবুজ বাংলা হোটেল।
রাজশাহী কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অধীনে রয়েছে সিরাজগঞ্জের ভিলা হানিফ ফুড ভিলেজ, চাচা ভাতিজা হোটেল, মামা ভাগনে হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, নিউ পাপিয়া অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, পাপিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, অ্যারিস্ট্রোক্রেট হাইওয়ে ইন, ন্যাশনাল ফুড ভিলেজ, আঁখি যমুনা গার্ডেন, সিল্ক সিটি ইন, রয়েল রুপালি হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট, নিউ জনতা হোটেল, বগুড়ার ফুড ভিলেজ ও পেন্টাগন হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট এবং পাবনার আমন্ত্রণ।
রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অধীনে রয়েছে রংপুরের আহার হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, আলামিন রেস্টুরেন্ট, লবঙ্গ হোটেল, বৈশাখী রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ডি-৬৬ নিউ পারভেজ হোটেল, কচুরী রেস্তোরাঁ, ঠিকানা রেস্টুরেন্ট। এ ছাড়া দিনাজপুরের বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, মামা ভাগিনা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট এবং গাইবান্ধার বনফুল হোটেল ও শিল্পী ভোজনালয়।
খুলনা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অধীনে ইএফডি বসছে পটুয়াখালীর বিরতি রেস্তোরাঁ, স্টার রেস্তোরাঁ অ্যান্ড সুইট মিট ও বাসমতি রেস্টুরেন্টে। মাদারীপুরের বৈশাখী হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট, শরীয়তপুরের ক্যাফে ঘরোয়া চায়নিজ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড কর্নার ও পদ্মা ভ্যালি রিসোর্ট ওই তালিকায় রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বরিশালের গৌরনদীর মা হাইওয়ে হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ, এলাহী হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট, ফাতেমা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, সাকুরা ফুড ভিলেজ ও রিফ্রেশ জোন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ ইওয
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন
প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।
শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।
আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেনরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।
দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।
২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।
আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫