দুধ বা দুধের তৈরি খাবার খেলেই সমস্যা হয়?
Published: 20th, April 2025 GMT
সবার ক্ষেত্রে কিন্তু সমস্যার কারণ এক নয়। আর তাই সমস্যা দেখা দিলে যে প্রত্যেকেরই দুধ খাওয়া বাদ দিয়ে দিতে হবে, ব্যাপারটা তা–ও নয়। দুধের আমিষ, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তাই পরিমাণে অল্প হলেও দুধ খাওয়া ভালো, যদি তাতে মারাত্মক কোনো সমস্যার ঝুঁকি না থাকে। এ বিষয়গুলো সহজভাবে ব্যাখ্যা করলেন ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা.
মো. মতলেবুর রহমান।
গবাদিপশুর দুধে ল্যাকটোজ নামের একটি উপাদান থাকে। ল্যাকটোজ হজম করার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইমের অভাব থাকলে দুধ খেলে সমস্যা হতে পারে। একে বলা হয়, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স। তবে কারও কারও আবার দুধে অ্যালার্জি থাকে। এটি একেবারেই ভিন্ন একটি সমস্যা। অ্যালার্জি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, এমনকি এর কারণে কারও কারও মৃত্যুও হয়। তা ছাড়া ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) কিংবা পিত্তথলির সমস্যার কারণেও দুধ খেলে সমস্যায় পড়েন অনেকে।
যেভাবে বুঝবেনল্যাকটোজ ইনটলারেন্স, দুধে অ্যালার্জি, আইবিএস কিংবা পিত্তথলির সমস্যার যেকোনোটি থাকলেই দুধ কিংবা দুধের তৈরি খাবার খাওয়ার পর বদহজম, পেট ফাঁপা, বমি বা পাতলা পায়খানার মতো সমস্যা হতে পারে।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হলো দুধে অ্যালার্জি। দুধে যাঁদের অ্যালার্জি থাকে, তাঁরা দুধ বা দুধের তৈরি খাবার খেলে এসব সমস্যা ছাড়া ঠোঁট–মুখ ফুলে যেতে পারে, ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে, গলা–বুক চেপে আসার মতো অনুভূতি হতে পারে, ঢোঁক গিলতে কষ্ট হতে পারে, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। দুধ খাওয়ার মিনিটখানেকের মধ্যেই এসব সমস্যার কোনোটি শুরু হয়ে যেতে পারে, আবার বেশ কয়েক ঘণ্টা পরেও কোনো সমস্যা দেখা দিতে পারে। দুধে অ্যালার্জি থাকলে সাধারণত শৈশবেই তা ধরা পড়ে। দুধে যাঁদের অ্যালার্জি থাকে, তাঁদের অন্যান্য কিছু বস্তুর প্রতিও অ্যালার্জি থাকতে পারে।
আইবিএস আক্রান্ত ব্যক্তির নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়ার পরপরই পেট কামড়ানো ও পাতলা পায়খানা হতে পারে। মানসিক চাপে পড়লেও এমন সমস্যা হতে পারে তাঁদের।
পিত্তথলিতে পাথর বা পিত্তথলির অন্য কোনো সমস্যা থাকলে দুধ কিংবা কোনো তেল ও চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়ার পর পেটে অস্বস্তি, ব্যথা ও বমি হতে পারে। ডান কাঁধের পেছনেও ব্যথা হতে পারে।
যেকোনো বয়সেই দুধ খাওয়ার পর কোনো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনি সমস্যার কারণ বের করে সেই অনুযায়ী আপনার করণীয় ঠিক করে দেবেন। কাউকে কাউকে অল্প পরিমাণে দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কাউকে আবার নিষেধ করা হয়। তাই খুঁজে নিতে হয় দুধের পুষ্টিকর বিকল্প। পিত্তথলির সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে রোগী আবার স্বাভাবিকভাবে দুধ খেতে পারেন। ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স একসময় এমনিতেই সেরে যেতে পারে।
অ্যালার্জিতে বাড়তি সতর্কতাদুধে অ্যালার্জি থাকলে দুধ ও দুধের তৈরি খাবার খাওয়া উচিত নয়। এমনকি দুধ দেওয়া বিরিয়ানি বা দুধ দিয়ে তৈরি সস (হোয়াইট সস) খাওয়াও ঠিক নয়। শিশুর যদি দুধে অ্যালার্জি থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই পনির, দুধের তৈরি চকলেট ও দুধের তৈরি অন্যান্য মুখরোচক খাবারের বিষয়ে সতর্ক করে দিন। পিৎজা ও পাস্তার মতো খাবার শিশুরা বেশ পছন্দ করে, যাতে পনির দেওয়া থাকে। এ ব্যাপারেও তাকে জানিয়ে রাখুন। গবাদিপশুর দুধ যদি ল্যাকটোজবিহীন করে ফেলা হয়, তা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ভালো। কিন্তু দুধে অ্যালার্জি থাকা মানুষের জন্য এই দুধ কোনো উপকারে আসবে না; বরং এই দুধ খেলেও অ্যালার্জির ঝুঁকি রয়েই যাবে। শৈশবে দুধে অ্যালার্জি থাকলে অবশ্য পরবর্তী জীবনে তা সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে আবার দুধ খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।
আরও পড়ুনশিশুর ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকলে দুধের বিকল্প হিসেবে কী খাবে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি