আইসক্রিমের কাঠি দিয়ে সেতুর আদল তৈরির প্রতিযোগিতায় মেতেছিলেন শিক্ষার্থীরা
Published: 20th, April 2025 GMT
আইসক্রিমের কাঠি দিয়ে কেউ বানিয়েছেন সেতুর আদল, কেউ বানিয়েছেন নানা ধরনের কাঠামো। প্রাতিষ্ঠানিক ভাষায় এ ধরনের কাঠামোকে বলা হয় ট্রাস। বানানো সেতুর আদলে ঝোলানো হচ্ছে বিভিন্ন ওজনের বাটখারা। এর মাধ্যমে কার আদল কত শক্তিশালী পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর পাশেই দাঁড়িয়ে এমন দৃশ্য উপভোগ করছেন প্রতিযোগী ও দর্শকেরা। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। গত শুক্রবার সকাল ৯টায় শুরু হওয়া দুই দিনের এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আমেরিকান সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারস (এএসসিই) চুয়েট শাখা। এ আয়োজনে দেশের ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২৫০টি দলের ৬০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
গত শুক্রবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ উৎসব। উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ মাহমুদ আবদুল মতিন ভূঁইয়া। এরপর পোস্টারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাঁদের গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি সমস্যার টেকসই সমাধান নিরূপণ প্রতিযোগিতা ও অটোক্যাড সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকশা তৈরীর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সমস্যার টেকসই সমাধান নিরুপণ প্রতিযোগিতায় চুয়েটের শিক্ষার্থীদের দল নেক্সাস, নকশা তৈরির প্রতিযোগিতায় বুয়েটের দল ক্যাড ফোর্সেস এবং পোস্টার প্রদর্শনী প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় চুয়েটের দল বায়োচার।
আরও পড়ুনচীনের প্রেসিডেনশিয়াল স্কলারশিপ, প্রথম বছরে ১০ হাজার চায়নিজ ইউয়ান ৬ ঘণ্টা আগেদ্বিতীয় দিনে গতকাল শনিবার শিক্ষার্থীরা আইসক্রিমের কাঠি দিয়ে সেতুর আদল তৈরি করে তাঁদের শক্তিমত্তা পরিমাপ করেন। আদলের নিজস্ব ওজন, একেকটি দলের উপস্থাপনা এবং ট্রাস লোডিং মেশিনের মাধ্যমে শক্তি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয় এ প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় ডুয়েট শিক্ষার্থীদের দল ‘দ্য কনক্রিট ট্রায়ো’।
প্রতিযোগিতা নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা যায় প্রতিযোগী ও আয়োজকদের। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাঈম হাওলাদার বলেন, ‘এ রকম প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে বেশ ভালো লেগেছে। পুরো সপ্তাহের ক্লাস, ল্যাব, গতানুগতিক জীবনের বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ পেয়েছি এ প্রতিযোগিতায়। আশা করি, সামনের দিনগুলোতেও চুয়েটে এ রকম বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি) থেকে আগত আরেক প্রতিযোগী শাহিদা চৌধুরী প্রিয়া জানান, ‘এএসসিই স্টুডেন্ট চ্যাপটার, চুয়েট–এর দ্য ওডিসি ২০২৫–এ অংশগ্রহণ করে অনেক ভালো লেগেছে। আমি এই প্রথম বাইরের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। এখানে এসে খুবই ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। আয়োজনটাও অনেক সুন্দর ছিল।’
আরও পড়ুনস্কুলে দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে পড়াশোনা শিকেয় ওঠে১৯ এপ্রিল ২০২৫আয়োজনের বিষয়ে সংগঠনের উপদেষ্টা ও পুরকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আয়েশা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমুন্নত রাখতে পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি এ ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা প্রয়োজন। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে, তারা অনুপ্রেরণা পাবে। অনুষ্ঠানটি সফল করতে আয়োজক কমিটি প্রচুর পরিশ্রম করেছে। তাই তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাই।’
এএসসিই চুয়েট শাখার সভাপতি গোলাম মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠন প্রতিবছর এ রকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। মূলত শিক্ষার্থীদের পুরকৌশলের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করা এবং বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রাখতেই আমরা এ ধরনের আয়োজন করে থাকি। এবারের আয়োজনটি সবাই খুব ভালোভাবে উপভোগ করেছে। উৎসব আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আমার শিক্ষক, সহপাঠী ও অনুজদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
প্রতিযোগিতাটির পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল ইনসি সিমেন্ট বাংলাদেশ।
আরও পড়ুনএসএসসি পরামর্শ ২০২৫: গণিতে ভালো নম্বর পাওয়ার সহজ উপায়১৮ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ত র আদল প রথম ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
ঝমঝম বৃষ্টি, কর্দমাক্ত পথঘাট, খাল-বিলে থৈ থৈ পানি- এমন দৃশ্যপট সামনে না থাকলেও ভেবে নিতে দোষ কি। কারণ, আজ পহেলা আষাঢ়।
রবি ঠাকুরের ভাষায়— ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে... আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে...’।
অবশ্য একেবারে নিরাশ করেনি আষাঢ়। রাজধানীতে সকাল থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা আর কোথাও হালকা বৃষ্টি জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে বর্ষার আগমন। বর্ষার আগমন যেন স্বস্তি-শান্তি ও আনন্দের। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস নগরবাসীর জীবনে এক আনন্দের বার্তা।
বাংলার প্রকৃতিতে আলাদা বৈশিষ্টময় বর্ষা ঋতুর আজ যাত্রা শুরু হলো।
বলা হয়, গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর রুদ্র প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড খরতাপে রুক্ষ প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠবে বর্ষার বর্ষণের মৃদঙ্গ-ছোঁয়ায়, এটাই যে সকল বাঙালির চাওয়া।
আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রঙিন হয়ে পুকুর-বিলে ফোটে শাপলা-পদ্ম। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। বর্ষার নতুন জলে স্নান সেরে প্রকৃতির মনও যেন নেচে ওঠে। ফুলে ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি। তাই বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না।
বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চারকারী। বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের সৌন্দর্য্য যে দেখেছে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে না থেকে পারেনি। এর বর্ণনায় পল্লীকবি জসীমউদদীন লিখেছেন- ‘বনের ঝিয়ারি কদম্বশাখে নিঝঝুম নিরালায়, / ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে, অস্ফুট কলিকায়।’
বৃষ্টি হলে গ্রামের নদী নালা পুকুরে জল জমে থৈ থৈ করে। বর্ষা আনন্দ-বেদনার সারথী। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে বর্ষা আনে জীবনেরই বারতা।
উন্নয়নের নামে চলমান প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি নিয়ে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নিতে ‘বর্ষা উৎসব’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
রবিবার (১৫ জুন) আষাঢ়ের প্রথমদিনে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকালে সুর-সংগীতে প্রকৃতি-বন্দনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের কর্মসূচি।
ঢাকা/টিপু