Prothomalo:
2025-06-16@16:56:26 GMT

সংকটাপন্ন কাশীপালাগাছ 

Published: 20th, April 2025 GMT

২২ ফেব্রুয়ারির এক সকালে তরুপল্লবের মাধবীবরণ উৎসবে গিয়ে মাধবী ঝোপের কাছে আর একটি গাছের দিকে চোখ পড়ল। লম্বা ঢিঙি গাছ, বড় বড় থালার মতো পাতা, কাঠির মতো বোঁটা, ডালের মাথা ঘন পশমে আবৃত, ফুলের কুঁড়ি উঁকি দিচ্ছে। অনুষ্ঠানশেষে গাছটার কাছে গিয়ে ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম। তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেন বললেন, কাশীপালা ওটির নাম, দ্বিজেন দাদা গাছটি এখানে সিলেট থেকে এনে লাগিয়েছিলেন। দেখতে দেখতে কত্ত বড় হয়ে গেছে, ফুল দিচ্ছে। প্রকৃতিবন্ধু কেকা অধিকারী গাছটার তলা থেকে একটি ফুল কুড়িয়ে নিয়ে এলেন। তার মানে গাছটায় ফুল ফোটা শুরু হয়েছে, কয়েক দিন পর আরও ফুটবে। ফুলটির পাপড়ি পুরো খোলা না, ঘণ্টার মতো আধবোজা হয়ে আছে, অনেকটা জবার মতো হলদে রং। ডাল দোলায়মান, প্রশাখাগুলো দীর্ঘ ও বক্র। ডালের অগ্রভাগে কুঁড়ি ও পুষ্পমঞ্জরিগুলো দুলছে। একটি পুষ্পমঞ্জরিতে অনেকগুলো কুঁড়ি, কুঁড়ির বৃতি চামচের মতো, পুষ্পমঞ্জরি ঘন বাদামি অনমনীয় রোমশাবৃত। পাতার বোঁটা ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা, ফলক প্রায় গোলাকার, পত্রফলক বোঁটার কাছে হৃৎপিন্ডের মতো খণ্ডিত বা কাটা।

যাই যাব করতে করতে শেষে আবার গাছটার কাছে গেলাম ২৫ মার্চ বিকেল বেলায়। ওয়াও! গাছের প্রায় সব কটি ডালের মাথায় কয়েকটি করে ম্লান হলদে রঙের ফুল ফুটে রয়েছে, অসংখ্য কুঁড়ি, রোমশ-বাদামি কম্বলের মতো আবরণের ভেতর থেকে ফুল হয়ে বেরোনোর জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে। অনেকগুলো শুকনা পাতা ও ফুল গাছের তলায় পড়ে আছে। হলুদ ফুলগুলো শুকিয়ে নীলচে-কালো হয়ে গেছে। ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে অনেক শুকনা বাদামি রোমশ ফল। আরেক প্রকৃতিবন্ধু রোবাইয়াত রবিনের সাহায্যে ফুলের ছবি তুললাম। রবিন জানাল, মৌলভীবাজারের জুরি উপজেলার লাঠিটিলা বনে সে এ গাছ দেখেছিল।

কাশীপালার ফুলটা দেখলে কখনো মনে হয় জবা, কখনো মনে হয় তুলার ফুল। জবা আর কাশীপালা সহোদর দুই বোন, ওদের গোত্র-গণ একই, দুটি গাছেরই গোত্র মালভেসি, গণ হিবিস্কাস। তবে প্রজাতি আলাদা। জবার প্রজাতি Hibiscus rosa-sinensis ও কাশীপালার প্রজাতি Hibiscus macrophyllus.

কাশীপালার প্রজাতিগত নামের শেষাংশের অর্থ বড় পাতা, এ গাছের পাতা থালা বা প্লেটের মতো বড়, ছোট পদ্মপাতা বললেও ভুল হবে না। এ জন্য এ গাছের ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে Largeleaf rosemallow এবং Bristly tree hibiscus. অন্যান্য স্থানীয় নাম খাসিয়া উদাল, কাচিয়া উদাল, কেসিয়াপালা, পেল্লা, ছামিয়া, তেতোয়ান ইত্যাদি। 

জবার মতো ফুল হলেও জবা ও কাশীপালাগাছ সম্পূর্ণ আলাদা। জবা গুল্ম প্রকৃতির চিরসবুজ গাছ, কাশীপালা অরণ্যের চিরসবুজ বৃক্ষজাতীয় গাছ। গাছ ৬ থেকে ১৬ মিটার লম্বা হয় ও গুঁড়ির ব্যাস প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার। বাকল ধূসর সাদা, কাণ্ড খাড়া ও সোজা, গোড়ার দিকে বেশ খানিকটা অংশে কোনো ডালপালা থাকে না। বাকল প্রথম দিকে কিছুটা মসৃণ থাকলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাতে ফাটলের মতো দাগ সৃষ্টি হয়। প্রশাখা, ডগা, পাতা ও ফুলে বোঁটা, কুঁড়ি, বৃতি, পত্রকক্ষ সবই ঘন বাদামি–সোনালি রঙের পশমে আবৃত, পুরোনো ডালে পশম থাকে না। ডগায় হাত দিলে সেসব রোঁয়া বা পশম ত্বকে ফুটে যায় ও পশম সেখান থেকে খসে পড়ে। ফুল ঝরার পর ফলের খোসা প্রচুর পশমাবৃত অবস্থায় থাকে, শুকনা ফলের রং সোনালি বাদামি বা উজ্জ্বল নস্যি রঙের রেশমের মতো। পরিপক্ব শুকনা ফলের বৃতির মতো ছয় থেকে আট খণ্ডের অঙ্গগুলো হয়ে যায় মচমচে ও শক্ত, সেগুলো খুলে ফেললে হালকা খাটো ঘন পশমে ঢাকা প্রায় গোলাকার বা শম্বুকাকার ফল দেখা যায়, ফলের গায়ে বিড়ালের পশমের মতো ঘিয়া-সাদা রোমশ মখমলের মতো আবরণ থাকে। হাত দিলে তা বেশ কোমল মনে হয়। ফল ভাঙলে ভেতরে কোয়া বা নৌকার মতো প্রকোষ্ঠে কালচে বাদামি রঙের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বীজ দেখা যায়। বীজ থেকে চারা হয়।

গাছের আদি নিবাস দক্ষিণ চীন ও পশ্চিম মালয়েশিয়া। বাংলাদেশে চারটি জেলার ৯টি স্থানে এ গাছ পাওয়া গেছে। সিলেটের জকিগঞ্জের খাসনাকপুর, চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর, রাঙামাটির কাসালং সংরক্ষিত বন, সাজেক ও সারোয়াতলি, বাঘাইছড়ি; মৌলভীবাজারের কালেখা, কমলগঞ্জ, মাধবকুণ্ড ইত্যাদি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে এ গাছ দেখা গেছে। কাশীপালা অরণ্যের গাছ হলেও একে পার্ক বা উদ্যানে সুদর্শন বৃক্ষ হিসেবে লাগানো যায়। আইইউসিএনের মূল্যায়নে গাছটি বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। ঢাকা শহরে রমনা উদ্যানের এই একটি গাছ ছাড়া আর কোথাও দেখিনি। তাই এ প্রজাতির গাছকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। 

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল র মত

এছাড়াও পড়ুন:

বিতর্কিত তিন নির্বাচনে জড়িতদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ

বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

সোমবার (১৬ জুন) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে আলোচনা শেষে এ নির্দেশ দেন তিনি। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

আরো পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টা অনেক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন: ফখরুল

ইউনূস-তারেক বৈঠক
রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন হতে পারে: যৌথ বিবৃতি

বৈঠকে কমিশন সদস্যগণ জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। 

কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, ‍“বেশকিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। খুব শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করে ফেলা সম্ভব হবে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।”

বৈঠকে লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, তারা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তারা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে, মতামত দিয়েছে। যেখানেই গেছি, সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?’ আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।”

বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সব রাজনৈতিক একমত হয়েছে যে, অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।”

ঢাকা/হাসান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ