২২ ফেব্রুয়ারির এক সকালে তরুপল্লবের মাধবীবরণ উৎসবে গিয়ে মাধবী ঝোপের কাছে আর একটি গাছের দিকে চোখ পড়ল। লম্বা ঢিঙি গাছ, বড় বড় থালার মতো পাতা, কাঠির মতো বোঁটা, ডালের মাথা ঘন পশমে আবৃত, ফুলের কুঁড়ি উঁকি দিচ্ছে। অনুষ্ঠানশেষে গাছটার কাছে গিয়ে ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম। তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেন বললেন, কাশীপালা ওটির নাম, দ্বিজেন দাদা গাছটি এখানে সিলেট থেকে এনে লাগিয়েছিলেন। দেখতে দেখতে কত্ত বড় হয়ে গেছে, ফুল দিচ্ছে। প্রকৃতিবন্ধু কেকা অধিকারী গাছটার তলা থেকে একটি ফুল কুড়িয়ে নিয়ে এলেন। তার মানে গাছটায় ফুল ফোটা শুরু হয়েছে, কয়েক দিন পর আরও ফুটবে। ফুলটির পাপড়ি পুরো খোলা না, ঘণ্টার মতো আধবোজা হয়ে আছে, অনেকটা জবার মতো হলদে রং। ডাল দোলায়মান, প্রশাখাগুলো দীর্ঘ ও বক্র। ডালের অগ্রভাগে কুঁড়ি ও পুষ্পমঞ্জরিগুলো দুলছে। একটি পুষ্পমঞ্জরিতে অনেকগুলো কুঁড়ি, কুঁড়ির বৃতি চামচের মতো, পুষ্পমঞ্জরি ঘন বাদামি অনমনীয় রোমশাবৃত। পাতার বোঁটা ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা, ফলক প্রায় গোলাকার, পত্রফলক বোঁটার কাছে হৃৎপিন্ডের মতো খণ্ডিত বা কাটা।
যাই যাব করতে করতে শেষে আবার গাছটার কাছে গেলাম ২৫ মার্চ বিকেল বেলায়। ওয়াও! গাছের প্রায় সব কটি ডালের মাথায় কয়েকটি করে ম্লান হলদে রঙের ফুল ফুটে রয়েছে, অসংখ্য কুঁড়ি, রোমশ-বাদামি কম্বলের মতো আবরণের ভেতর থেকে ফুল হয়ে বেরোনোর জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে। অনেকগুলো শুকনা পাতা ও ফুল গাছের তলায় পড়ে আছে। হলুদ ফুলগুলো শুকিয়ে নীলচে-কালো হয়ে গেছে। ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে অনেক শুকনা বাদামি রোমশ ফল। আরেক প্রকৃতিবন্ধু রোবাইয়াত রবিনের সাহায্যে ফুলের ছবি তুললাম। রবিন জানাল, মৌলভীবাজারের জুরি উপজেলার লাঠিটিলা বনে সে এ গাছ দেখেছিল।
কাশীপালার ফুলটা দেখলে কখনো মনে হয় জবা, কখনো মনে হয় তুলার ফুল। জবা আর কাশীপালা সহোদর দুই বোন, ওদের গোত্র-গণ একই, দুটি গাছেরই গোত্র মালভেসি, গণ হিবিস্কাস। তবে প্রজাতি আলাদা। জবার প্রজাতি Hibiscus rosa-sinensis ও কাশীপালার প্রজাতি Hibiscus macrophyllus.
জবার মতো ফুল হলেও জবা ও কাশীপালাগাছ সম্পূর্ণ আলাদা। জবা গুল্ম প্রকৃতির চিরসবুজ গাছ, কাশীপালা অরণ্যের চিরসবুজ বৃক্ষজাতীয় গাছ। গাছ ৬ থেকে ১৬ মিটার লম্বা হয় ও গুঁড়ির ব্যাস প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার। বাকল ধূসর সাদা, কাণ্ড খাড়া ও সোজা, গোড়ার দিকে বেশ খানিকটা অংশে কোনো ডালপালা থাকে না। বাকল প্রথম দিকে কিছুটা মসৃণ থাকলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাতে ফাটলের মতো দাগ সৃষ্টি হয়। প্রশাখা, ডগা, পাতা ও ফুলে বোঁটা, কুঁড়ি, বৃতি, পত্রকক্ষ সবই ঘন বাদামি–সোনালি রঙের পশমে আবৃত, পুরোনো ডালে পশম থাকে না। ডগায় হাত দিলে সেসব রোঁয়া বা পশম ত্বকে ফুটে যায় ও পশম সেখান থেকে খসে পড়ে। ফুল ঝরার পর ফলের খোসা প্রচুর পশমাবৃত অবস্থায় থাকে, শুকনা ফলের রং সোনালি বাদামি বা উজ্জ্বল নস্যি রঙের রেশমের মতো। পরিপক্ব শুকনা ফলের বৃতির মতো ছয় থেকে আট খণ্ডের অঙ্গগুলো হয়ে যায় মচমচে ও শক্ত, সেগুলো খুলে ফেললে হালকা খাটো ঘন পশমে ঢাকা প্রায় গোলাকার বা শম্বুকাকার ফল দেখা যায়, ফলের গায়ে বিড়ালের পশমের মতো ঘিয়া-সাদা রোমশ মখমলের মতো আবরণ থাকে। হাত দিলে তা বেশ কোমল মনে হয়। ফল ভাঙলে ভেতরে কোয়া বা নৌকার মতো প্রকোষ্ঠে কালচে বাদামি রঙের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বীজ দেখা যায়। বীজ থেকে চারা হয়।
গাছের আদি নিবাস দক্ষিণ চীন ও পশ্চিম মালয়েশিয়া। বাংলাদেশে চারটি জেলার ৯টি স্থানে এ গাছ পাওয়া গেছে। সিলেটের জকিগঞ্জের খাসনাকপুর, চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর, রাঙামাটির কাসালং সংরক্ষিত বন, সাজেক ও সারোয়াতলি, বাঘাইছড়ি; মৌলভীবাজারের কালেখা, কমলগঞ্জ, মাধবকুণ্ড ইত্যাদি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে এ গাছ দেখা গেছে। কাশীপালা অরণ্যের গাছ হলেও একে পার্ক বা উদ্যানে সুদর্শন বৃক্ষ হিসেবে লাগানো যায়। আইইউসিএনের মূল্যায়নে গাছটি বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। ঢাকা শহরে রমনা উদ্যানের এই একটি গাছ ছাড়া আর কোথাও দেখিনি। তাই এ প্রজাতির গাছকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল র মত
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম দিনে কত আয় করল অজয়ের সিনেমা?
‘রেইড’ সিনেমার সিক্যুয়েল নিয়ে ফিরেছেন বলিউড অভিনেতা অজয় দেবগন। গতকাল ভারতের ৪ হাজার পর্দায় মুক্তি পেয়েছে ‘রেইড টু’।
এ সিনেমায় অজয়ের বিপরীতে অভিনয় করেছেন বাণী কাপুর। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউড সিনেমার মধ্যে প্রথম দিনে তৃতীয় সর্বোচ্চ আয় করেছে ‘রেইড টু’। এ তালিকার প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ‘ছাবা’ (২৯ কোটি রুপি) ও ‘সিকান্দার’ (২৫ কোটি রুপি)।
২০১৮ সালে মুক্তি পায় ‘রেইড’ সিনেমা। সেই বছরের মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি সিনেমার মধ্যে প্রথম দিনে তৃতীয় অবস্থানে ছিল সিনেমাটি। বক্স অফিসের সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে যাত্রা শুরু করেছে রাজ কুমার গুপ্তা নির্মিত এই সিনেমা।
আরো পড়ুন:
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী অভিনেতাদের তালিকায় শাহরুখ
কত টাকা আয় করল অক্ষয়ের সিনেমা?
স্যাকনিল্কের তথ্য অনুসারে, মুক্তির প্রথম দিনে ‘রেইড টু’ সিনেমা আয় করেছে ১৮.২৫ কোটি রুপি (নিট)। তবে বলি মুভি রিভিউজের তথ্য মতে, আয় কিছুটা কম করেছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী প্রথম দিনে সিনেমাটি আয় করেছে ১৭.৬ কোটি রুপি (নিট)।
‘রেইড টু’ সিনেমার আইটেম গানে কোমর দুলিয়েছেন তামান্না ভাটিয়া। সিনেমা মুক্তির আগে কয়েক দিন আগে টি-সিরিজের ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পায় ‘নাশা’ শিরোনামের গানটি। এতে কণ্ঠ দিয়েছেন— জেসমিন স্যান্ডলাস, সচেত ট্যান্ডন, দিব্যা কুমার, সুমন্ত মুখার্জি। বরাবরের মতো এ গানও দারুণ সাড়া ফেলেছে।
‘রেইড’ সিনেমায় অজয়ের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন ইলিয়ানা ডিক্রজ। তবে দ্বিতীয় পার্টে তার জায়গা নিয়েছেন বাণী কাপুর। ‘রেইড টু’ সিনেমায় আরো অভিনয় করেছেন— রীতেশ দেশমুখ, রজত কাপুর, সুপ্রিয়া পাঠক প্রমুখ। তাছাড়া সিনেমাটির বিশেষ চরিত্রে জ্যাকলিন ফার্নান্দেজ ও হানি সিং অভিনয় করেছেন।
ঢাকা/শান্ত