রাজধানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ। 

রবিবার (২০ এপ্রিল) এক যৌথ বিবৃতিতে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ ও সদস্য সচিব ফজলুর রহমান এ দাবি জানান। সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক ইয়ামিন সরকার স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বিবৃতিতে বলা হয়, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থী পারভেজ শনিবার (১৯ এপ্রিল) অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। এ সময় ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স এর দুই ছাত্রী প্রাইম এশিয়ার ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেখানে আসেন। এ সময় হাসাহাসির জেরে দুই ছাত্রী তার ঘনিষ্ঠ লোকদের ডেকে এনে পারভেজকে ছুরিকাঘাত করান। তার বুকে ছুরি ঢুকিয়ে দেওয়ায় তিনি মারা যান।

আরো পড়ুন:

দেশে প্লাস্টিক কমানোয় বিশ্ব সম্প্রদায়েরও আপত্তি আছে: সৈয়দা রিজওয়ানা

শহীদ নূর মোস্তফার স্বীকৃতির দাবিতে ঢাবিতে মানববন্ধন

বিবৃতিতে পারভেজ হত্যার ঘটনায় সরকার, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের দুই শীর্ষ নেতা।

তারা বলেন, উন্নত বিশ্বের ক্যাম্পাসগুলোতে ছুরিকাঘাত বা গুলি করার ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অপরাধীদের নিরস্ত্র ও গ্রেপ্তার করে। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে পারভেজ হত্যাসহ সব সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো মায়ের কোল খালি না হলে এবং তা নিয়ে সমাজে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ না হলে সরকার, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মোটেই তৎপর হয় না। জুলাই বিপ্লবের পরেও এ সংস্কৃতির পরিবর্তন না হওয়া দুঃখজনক।

তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে পারভেজকে যেভাবে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশের কালবিলম্ব না করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো উচিত।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত র পর

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাক

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তার অবসান হবে আশা করা যায়। নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়ে দুই পক্ষই নীতিগতভাবে একমত হয়েছে যে ২০২৬ সালের রোজার আগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। 

সাম্প্রতিক কালে নানা বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বের বিরোধ লক্ষ করা যাচ্ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি–দলীয় প্রার্থী ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যু সেই বিরোধকে আরও বাড়িয়ে দেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সর্বশেষ বৈঠকে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি ও আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করে।

কিন্তু ঈদুল আজহার আগের রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার ব্যাপারে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়। এর আগে বিএনপির নেতৃত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে। 

এমনই একটি পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের সময় লন্ডনে তাঁর সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বৈঠকের ঘোষিত যৌথ বিবৃতিতে নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়টি সামনে এলেও দুই পক্ষের আলোচনা কেবল এর মধ্যে সীমিত ছিল না। প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সংস্কারের ধারাবাহিকতার ওপরও জোর দেন তঁারা। 

বৈঠকের ফলাফলকে প্রায় সব দলই স্বাগত জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি ঘোষণার ধরন নিয়ে আপত্তি জানালেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সরাসরি বিরোধিতা কেউ করেনি। আমরাও মনে করি, কোনো বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমেই তা সমাধান করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ যারা সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে হবে। লন্ডন বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার ও বিচারকাজ দৃশ্যমান করার ওপর জোর দিয়েছেন। ভবিষ্যতে যাতে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনরাগমন না ঘটে, সে জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের কাজটি ত্বরান্বিত করা জরুরি। আবার অপরাধ করে যাতে কেউ পার না পায়, সে জন্য জুলাই-আগস্টের হত্যার বিচারও অপরিহার্য। কিন্তু এই দুটি বিষয়কে কোনোভাবে নির্বাচনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা সমীচীন হবে না।

যেসব সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে নির্বাচন ও সংবিধানের বিষয়টি জড়িত নয়, সেগুলো সরকার নির্বাহী আদেশেও বাস্তবায়ন করা যায়। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে তেমন বাধা আসার কথা নয়। তবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার অর্থ এই নয় যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এখন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করাই বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক দলগুলোর সার্বিক সহযোগিতা না থাকলে সরকার একা কাজটি করতে পারবে না। 

ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্দলীয় ও আন্তদলীয় সংঘাতের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে না চললে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না। আমরা আশা করি, দিন-তারিখের বিষয়ে সমঝোতার পর নির্বাচনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। রাজনীতিতে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে; তাই বলে একে অপরকে ‘শত্রুজ্ঞান’ করার পুরোনো সংস্কৃতি থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ