সরকারি হাসপাতালের চেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চার গুণ বেশি প্রসব হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেছেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক, এটা রাষ্ট্রের বড় ধরনের ব্যর্থতা। আজ রোববার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ৭ এপ্রিল ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। বিশেষ কারণে ওই দিন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত’।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, মানুষ সচেতন হলে জন্ম সুরক্ষিত হবে। বালিকা বিয়ে অপরাধ। এ অপরাধ সবার সামনে ঘটছে। এই সময়ে মাতৃমৃত্যু লজ্জার। মায়ের সুরক্ষা রাষ্ট্র দিতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, ‘এই দায় আমাদের সবার।’

অনুষ্ঠানে ঢাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি আহমেদ জামসেদ মোহাম্মদ বলেন, মাতৃ ও নবজাতক স্বাস্থ্যে এক ডলার বিনিয়োগ করলে ১০ ডলারের সুফল পাওয়া যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গ্রামে স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য আছে।

অনুষ্ঠানের মূল উপস্থাপনায় অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গায়নোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে, ১৪০ জন মৃত শিশুর জন্ম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ১৮ শতাংশ প্রসব হচ্ছে সরকারি হাসপাতালে। ৮২ শতাংশ প্রসব হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রসব চার গুণ বেশি হচ্ছে।

এই তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো.

সায়েদুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রের প্রয়োজন হয় মাতৃত্ব নিরাপদ করার জন্য। মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সব পদক্ষেপে মাতৃত্ব গুরুত্ব পাবে। ভবিষ্যতে এটিকে নীতি হিসেবে রাখতে হবে।

জনসংখ্যানীতি ২০২৫–এর খসড়া তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব সারোয়ার বারি বলেন, পরিবার পরিকল্পনাসামগ্রীর অপূর্ণ চাহিদার হার ১০ শতাংশ। অন্যদিকে দেশে কিশোরীদের গর্ভধারণের হার অনেক বেশি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হাসান বলেন, দেশে ১১০টি মেডিকেল কলেজ। মেডিকেল কলেজের এত ঘনবসতি বিশ্বের আর কোনো দেশে নেই।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমানের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু জাফর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আসরাফি আহম্মদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ব সরক র প রসব

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন

তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের। 

দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত। 

আরো পড়ুন:

রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন

টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়

প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।

তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।

গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে। 

সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। 

ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে। 

২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ