কোনো কোনো শিশুর সারা বছর ঠান্ডা ও সর্দি লেগে থাকে। সব সময় ঠান্ডার ওষুধ খেতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘন ঘন সর্দি ও ঠান্ডা লাগার কারণ অ্যালার্জি। কারও কারও বারবার ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে এ সমস্যা হয়। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, আবহাওয়া পরিবর্তন ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকেও এই সমস্যা হয় বেশি।

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস দুই ধরনের। সিজনাল ও পেরেনিয়াল। সিজনাল রাইনাইটিসে শিশুর আক্রান্ত হওয়ার কারণ ধুলা ও ফুলের রেণু। পেরেনিয়াল রাইনাইটিস ঘরে জমে থাকা ধুলার সঙ্গে বিভিন্ন ফাঙ্গাস ও পতঙ্গ শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করার কারণে হয়। শ্বাসের মাধ্যমে অ্যালার্জেন শরীরে ঢুকলে অ্যালার্জি হয়, যখন ফুসফুসে প্রভাব ফেলে তখন দেখা দেয় অ্যাজমা। শিশুরা সারা দিন ভালো থাকে, কিন্তু রাত হলে নাক বন্ধ হয়ে যায়। গলাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, কাশি হাঁচি জ্বর, কানে ও মুখে চাপ অনুভব করা, স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতি কমে আসে।

প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বছরে ৪-৬ বার এবং শিশুর ১০-১২ বার সর্দিজ্বর হওয়া স্বাভাবিক। শীতের সময় এই ভাইরাসগুলো দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার মতো পরিবেশ পায় বলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায় এবং বেশিসংখ্যক শিশু আক্রান্ত হয়। নাসারন্ধ্রের ভেতরে মিউকাস লাইনিং অতিক্রম করে জীবাণু প্রবেশ করলে নাসারন্ধ্রের ভেতর অতিরিক্ত সর্দি জমা হয়, যাকে ‘রাইনোরেয়া’ বলে। 

শিশুর সর্দি-ঠান্ডার সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে হলে এর কারণ অ্যালার্জি কি না বুঝতে কিছু পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে চোখ চুলকানো, অ্যাজমা, চোখ লাল ও চুলকানি হয়। মডিফায়েড স্কিন প্রিক টেস্ট করে দেখা যায় কী কারণে শিশুর এই সমস্যা হচ্ছে। ভাসমান ধূলিকণা, ঘরে জমে থাকা ধুলা, মাকড়সার জাল, তেলাপোকা, বিভিন্ন ফুলের রেণু, কুকুর, বিড়ালের পশম, কটনডাস্ট (বালিশ, বিছানার তুলা), বিভিন্ন রকমের খাবার থেকে ও জিনঘটিত কারণে শিশুরা আক্রান্ত হয়।

চিকিৎসায় দেরি হলে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থেকে অ্যাজমা বা অ্যালার্জিক ডার্মাটাইটিস হতে পারে। যদি এক মাসের বেশি সময় সর্দি-ঠান্ডা থেকে যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসক নাকে ড্রপ ও অন্যান্য ওষুধ দেবেন। অ্যালার্জির জন্য চিকিৎসক নির্দিষ্ট ইমিউনোথেরাপি দিতে পারেন, যা তিন থেকে পাঁচ বছর ধরে চলবে। 

প্রতিকার কী

বাইরে বের হওয়ার সময় শিশুকে মাস্ক পরান। ওয়েট টিস্যু নিয়ে বের হতে পারেন এবং কিছুক্ষণ পরপর শিশুর মুখ মুছে দিতে হবে। ঘরের কার্পেট, বিছানার তোশক পরিষ্কার রাখতে হবে। যদি ফুলের রেণু থেকে অ্যালার্জি হয়, তাহলে ঘরে জানালা, দরজা বন্ধ রাখা ও প্রয়োজনে ঘরে এয়ারকন্ডিশন চালানো উচিত। 

কোনো খাবার থেকে অ্যালার্জি হলে সেই খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বাইরে থেকে ফিরে পোশাক পাল্টে হাত-মুখ ও পা ধুয়ে দিতে হবে। ঘুম রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। তাই পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম দরকার। প্রচুর পরিমাণ তরল খাওয়াতে হবে।

শিশুকে সর্দি-জ্বর থেকে বাঁচতে মিষ্টি আলু, বিটের মূল, কুমড়া খাওয়ানো ভালো। এতে বিটা-ক্যারোটিন থাকে, যা ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়ে নাক ও ফুসফুসের মিউকোসাল লাইনিংকে শক্ত রাখে। কমলা, আম, তরমুজসহ লাল ফল একই ধরনের কাজ করে। এ ছাড়া খাবারে যথেষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ ও রসুন থাকলেও ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের আশঙ্কা কমে। সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে ঠান্ডা ও সর্দি থেকে শিশুকে বাঁচানো যাবে।

ডা.

মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, ঢাকা

আরও পড়ুনশিশুর জন্য প্লাস্টিকের ফ্লাস্ক কতটা নিরাপদ, একটা ফ্লাস্ক কত দিন ব্যবহার করা যাবে১৮ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি

‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে ‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।

এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’

‎বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন

‎জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।

‎তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।

‎কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।

‎পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”

‎গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”

‎অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, ‎যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”

ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ