ঢাকা-চট্টগ্রামে ‘মহানগর সরকার’, উপজেলায় আদালতের সুপারিশ
Published: 21st, April 2025 GMT
দীর্ঘ মেয়াদে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য দুই স্তরবিশিষ্ট ‘মহানগর সরকার’ গঠনের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। তবে মধ্য মেয়াদে অন্যান্য সিটি করপোরেশনে ‘মহানগর সরকার’ সৃষ্টির পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুপারিশ করেছে কমিশন।
এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী জজকে পদায়নের মাধ্যমে এডিআর আদালত ব্যবস্থা স্থাপনেরও সুপারিশ করেছে কমিশন। এ ক্ষেত্রে কমিশন ইউনিয়ন পরিষদের অধীন থাকা গ্রাম আদালত বিলুপ্তির প্রস্তাব করেছে।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এরপর সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিষয় সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে কমিশনের সুপারিশগুলো সাংবাদিকদের দেওয়া হয়।
সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে গত বছরের ১৮ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে আট সদস্যের স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের পরিচালক মাহফুজ কবীর, নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মাশহুদা খাতুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, লেখক ও মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম।
ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন বলছে, আইনানুযায়ী সাতটি মন্ত্রণালয়ের নয়টি অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ইউনিয়ন পরিষদে হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু এখনো তা হয়নি। এ জন্য অবিলম্বে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ইউনিয়ন পরিষদে হস্তান্তর করতে হবে।
উপজেলার বিষয়ে কমিশন বলেছে, উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত ১৭টি দপ্তরের কাজ, জনবল ও অর্থ উপজেলা পরিষদের তহবিলে হস্তান্তরের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কাজ ও অর্থ পরিষদে স্থানান্তর হয়নি। ফলে উপজেলা পরিষদ প্রকৃত অর্থে অকার্যকর। তাই অর্থ, জনবল ও কাজ সম্পূর্ণভাবে পরিষদে হস্তান্তর করতে হবে।
পার্বত্য তিন জেলা পরিষদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সমতলের সব জেলায় কর্মরত সরকারি বিভাগ, অধিদপ্তরের কাজ, জনবল, অর্থ সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদে হস্তান্তরের সুপারিশ করেছে কমিশন।
কমিশন স্থানীয় সরকারের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের জন্য একটি আইন করার সুপারিশ করেছে।
ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদকে কার্যকরভাবে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংযুক্ত করার উপায় হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রকে যথাক্রমে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে জনবল, সম্পদসহ হস্তান্তর করা, ভবিষ্যতে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে সব জনবল, সেবা ও সরবরাহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে স্থানান্তরেরও সুপারিশ করেছে কমিশন।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করারও সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়ের নাম হবে ‘স্থানীয় সরকার জনপ্রতিষ্ঠান ও জনপ্রকৌশল সেবা মন্ত্রণালয়’। তবে এখনকার মতো মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি বিভাগই থাকবে। একটি বিভাগের নাম হবে জনপ্রতিষ্ঠান বিভাগ, আরেকটির নাম হবে জনপ্রকৌশল সেবা বিভাগ।
চেয়ারম্যান ও মেয়র সরাসরি জনগণের ভোটে নয়
ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন জনগণের সরাসরি ভোটে না করে প্রথমে সদস্য বা কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন করা হবে। এরপর নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচন করা হবে। এ ছাড়া সদস্য বা কাউন্সিলর পদে পূর্ণকালীন সদস্যের পাশাপাশি খণ্ডকালীন সদস্য রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় সরকারি চাকরিজীবীরাও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে খণ্ডকালীন সদস্য বা কাউন্সিলর হওয়ার সুযোগ পাবেন।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোর বিষয়ে বলতে গিয়ে কমিশনপ্রধান তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমে সংসদ সদস্য নির্বাচন করা হয়। এরপর তাঁদের মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হয়। স্থানীয় সরকারের সব স্তরেও (ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন) শুধু সদস্য ও কাউন্সিলর নির্বাচন হবে। একই তফসিলে এসব নির্বাচন করা যাবে। এরপর সভাপতি (সভাধ্যক্ষ) নির্বাচন করা হবে। সভাপতি জাতীয় সংসদের স্পিকারের মতো দায়িত্ব পালন করবেন। সভাপতির সভাপতিত্বে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচন করা হবে। তারপর চেয়ারম্যান বা মেয়র তিনজন বা পাঁচজনের একটি পূর্ণকালীন কাউন্সিল করবেন। তাঁরা পূর্ণকালীন কাজ করবেন এবং পূর্ণকালীন বেতন-ভাতা পাবেন। বাকি যাঁরা আসবেন, তাঁরা খণ্ডকালীন। তাঁরা স্থায়ী কমিটির সভাপতি-সদস্য হবেন।
বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচন করা হয়। কমিশন বলছে, এ ক্ষেত্রে নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে তিনটি ওয়ার্ডে কেবল নারী সদস্য নির্বাচিত হবেন। ঘূর্ণায়ন পদ্ধতিতে তিনটি নির্বাচনে এটি করা হবে। এভাবে নারীর সংরক্ষিত ওয়ার্ড ব্যবস্থা আগামী তিনটি নির্বাচনের পর পুনর্মূল্যায়ন হতে পারে।
‘মূল সংস্কার না করে নির্বাচন করলে লাভ হবে না’
নির্বাচনের আগে সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মূল সংস্কার না করে নির্বাচন করলে কোনো লাভ হবে না। সেটি জাতীয় নির্বাচন বলেন আর স্থানীয় নির্বাচন বলেন। সে জন্য আমরা সংস্কারকে প্রাধান্য দিয়েছি। সংস্কার করার পর আপনি নির্বাচন করেন।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে না পরে—এ নিয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে কমিশনের সুপারিশ কী, তা জানতে চাইলে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইচ্ছা করেই এ বিষয়ে স্পষ্ট করে তাঁরা কিছু বলেননি। তাঁরা বলেছেন, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিক। স্থানীয় সরকার নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ, জাতীয় সংসদ নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ। একটি করলে আরেকটি করা যাবে না, এ–জাতীয় শর্তই অমূলক কথা। দুটোই করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এখন সারা দেশে একটা শূন্যতা। ইউনিয়ন, জেলা-উপজেলায় সবখানেই শূন্যতা, পৌরসভা-সিটি করপোরেশনেও। এই শূন্যতার কারণে দেশে একটা অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। স্থিতিশীল ব্যবস্থার জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্ব নিয়ে আসা দরকার।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স প র শ কর ছ ত ফ য় ল আহম দ র সরক র র জন য উপজ ল সদস য প রসভ
এছাড়াও পড়ুন:
আউটসোর্সিং এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন
আধুনিক শ্রমবাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্তৃত খাত হলো আউটসোর্সিং। এ খাতের মাধ্যমে হাজার হাজার শ্রমিক প্রতিদিন সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। অথচ এই শ্রমিকদের অধিকাংশই শোভন কাজের মৌলিক মানদণ্ড থেকে বঞ্চিত। চাকরির স্থায়িত্ব নেই; সুরক্ষার নিশ্চয়তা নেই; নেই সংগঠনের অধিকার– এমন বাস্তবতায় শ্রমিকরা এক অনিশ্চিত ও অনুৎপাদনশীল পরিবেশে দিন কাটাচ্ছেন।
এ প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি শ্রম সংস্কার কমিশন সরকারের কাছে ‘শ্রমজগতের রূপান্তর-রূপরেখা: শ্রমিক-অধিকার, সুসমন্বিত শিল্প-সম্পর্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি সুপরিকল্পিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনের বিভিন্ন অধ্যায়ে কাজের স্বীকৃতি, অধিকার, নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব নিয়ে যেসব সুপারিশ রাখা হয়েছে, তার মধ্যে আউটসোর্সিং খাতে নিযুক্ত শ্রমিকদের নিয়ে তৎপরতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে সরকারের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত ১২৫০টি ঠিকাদারি সংস্থা জনবল সরবরাহ করছে। এর বাইরেও অগণিত অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা শ্রম আইনের তোয়াক্কা না করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিকরা কর্মঘণ্টা, মজুরি, ছুটি, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভয়াবহ বৈষম্যের শিকার।
অধিকাংশ আউটসোর্সিং শ্রমিক ন্যূনতম মজুরি পান না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার নির্ধারিত মজুরি না দিয়ে বেতন থেকে অবৈধভাবে টাকা কেটে রাখে; উৎসব ভাতা দেয় না; ওভারটাইমের ভাতা দেয় না। সাম্প্রতিক ২০২৫ সালের আউটসোর্সিং নীতিমালায় উৎসব ভাতা ও বৈশাখী ভাতা অন্তর্ভুক্তিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলা যায়, তবে বাস্তবায়ন ও নজরদারি এখনও দুর্বল।
নীতিমালায় নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি সংক্রান্ত কোনো অর্থনৈতিক সুরক্ষা না থাকায় তারা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে অন্তঃসত্ত্বা হলেই চাকরিচ্যুতির শঙ্কা থাকে। বেসরকারি খাতে এ অবস্থা আরও ভয়াবহ। নতুন নীতিমালায় ৪৫ দিনের প্রসূতিকালীন ছুটি সংযুক্ত করা হয়েছে, যা বিদ্যমান শ্রম আইনের ১১২ দিনের বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আউটসোর্সিং শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার পথ রুদ্ধ। তারা ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারেন না। করলে চাকরিচ্যুতির শিকার হন। ফলে শ্রমিকস্বার্থে কোনো সামাজিক সংলাপ বা দরকষাকষির সুযোগ থাকে না।
বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য, ওয়াসা, নিরাপত্তা খাতে কর্মরত হাজার হাজার আউটসোর্সিং শ্রমিক পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত। করোনা মহামারিতে তারা সম্মুখ সারিতে থেকেও কোনো রকম ক্ষতিপূরণ পাননি। শ্রম বিধিমালার ১৬(৩) অনুযায়ী মালিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগ দুর্বল।
সে জন্য শ্রম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে আউটসোর্সিং শ্রমিকদের জন্য যেসব সুপারিশ করেছে, তা বাস্তবায়িত হলে এ খাতে শোভন কাজের নিশ্চয়তা আসবে। আউটসোর্সিং খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের শোভন কাজ, মৌলিক অধিকার এবং কর্মস্থলে সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
আমি মনে করি, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, করপোরেশন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থায়ী জনবল কাঠামো হালনাগাদ করে আইনের ধারা ও বিধি অনুসরণপূর্বক প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা দরকার। ঠিকাদারের মাধ্যমে সার্ভিস চার্জ বা কমিশনের ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সরাসরি নিয়োগ প্রদান নিশ্চিত করা দরকার। যারা ৫-১০ বছর বা তদূর্ধ্ব সময় ধরে কর্মরত থেকে দক্ষতা অর্জন করেছেন, তাদের শ্রম আইন অনুযায়ী অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মূল মালিককে দায়বদ্ধ করা দরকার।
শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত কাজ করতে রাজি না হলে তাদের চাকরিচ্যুত বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না। এ বিষয়ে শ্রম পরিদর্শন দপ্তর কঠোর নজরদারি করবে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, দপ্তর ও জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আউটসোর্সিং বন্ধ করতে হবে। যেসব দপ্তর ও সেবা খাতে ইতোমধ্যে আউটসোর্সিং করা হয়েছে, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে স্থায়ী নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের প্রত্যাশা একটাই– শোভন কাজের বাস্তবায়ন। এ খাতের বৈষম্য কমাতে হলে সরকারের নীতিগত, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক হস্তক্ষেপ দরকার। একই সঙ্গে সমাজকেও সচেতন হতে হবে, যাতে মানুষ সস্তা সেবার পেছনে শ্রমের শোষণকে গুরুত্ব দিতে শেখে।
মো. মাছুম বিল্লাহ: আইন কর্মকর্তা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর