দীর্ঘ মেয়াদে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য দুই স্তরবিশিষ্ট ‘মহানগর সরকার’ গঠনের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। তবে মধ্য মেয়াদে অন্যান্য সিটি করপোরেশনে ‘মহানগর সরকার’ সৃষ্টির পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুপারিশ করেছে কমিশন।

এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী জজকে পদায়নের মাধ্যমে এডিআর আদালত ব্যবস্থা স্থাপনেরও সুপারিশ করেছে কমিশন। এ ক্ষেত্রে কমিশন ইউনিয়ন পরিষদের অধীন থাকা গ্রাম আদালত বিলুপ্তির প্রস্তাব করেছে।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এরপর সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিষয় সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে কমিশনের সুপারিশগুলো সাংবাদিকদের দেওয়া হয়।

সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে গত বছরের ১৮ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে আট সদস্যের স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের পরিচালক মাহফুজ কবীর, নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মাশহুদা খাতুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, লেখক ও মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম।

ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন বলছে, আইনানুযায়ী সাতটি মন্ত্রণালয়ের নয়টি অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ইউনিয়ন পরিষদে হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু এখনো তা হয়নি। এ জন্য অবিলম্বে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ইউনিয়ন পরিষদে হস্তান্তর করতে হবে।

উপজেলার বিষয়ে কমিশন বলেছে, উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত ১৭টি দপ্তরের কাজ, জনবল ও অর্থ উপজেলা পরিষদের তহবিলে হস্তান্তরের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কাজ ও অর্থ পরিষদে স্থানান্তর হয়নি। ফলে উপজেলা পরিষদ প্রকৃত অর্থে অকার্যকর। তাই অর্থ, জনবল ও কাজ সম্পূর্ণভাবে পরিষদে হস্তান্তর করতে হবে।

পার্বত্য তিন জেলা পরিষদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সমতলের সব জেলায় কর্মরত সরকারি বিভাগ, অধিদপ্তরের কাজ, জনবল, অর্থ সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদে হস্তান্তরের সুপারিশ করেছে কমিশন।

কমিশন স্থানীয় সরকারের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের জন্য একটি আইন করার সুপারিশ করেছে।

ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদকে কার্যকরভাবে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংযুক্ত করার উপায় হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রকে যথাক্রমে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে জনবল, সম্পদসহ হস্তান্তর করা, ভবিষ্যতে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে সব জনবল, সেবা ও সরবরাহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে স্থানান্তরেরও সুপারিশ করেছে কমিশন।

এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করারও সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়ের নাম হবে ‘স্থানীয় সরকার জনপ্রতিষ্ঠান ও জনপ্রকৌশল সেবা মন্ত্রণালয়’। তবে এখনকার মতো মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি বিভাগই থাকবে। একটি বিভাগের নাম হবে জনপ্রতিষ্ঠান বিভাগ, আরেকটির নাম হবে জনপ্রকৌশল সেবা বিভাগ।

চেয়ারম্যান ও মেয়র সরাসরি জনগণের ভোটে নয়

ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন জনগণের সরাসরি ভোটে না করে প্রথমে সদস্য বা কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন করা হবে। এরপর নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচন করা হবে। এ ছাড়া সদস্য বা কাউন্সিলর পদে পূর্ণকালীন সদস্যের পাশাপাশি খণ্ডকালীন সদস্য রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় সরকারি চাকরিজীবীরাও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে খণ্ডকালীন সদস্য বা কাউন্সিলর হওয়ার সুযোগ পাবেন।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোর বিষয়ে বলতে গিয়ে কমিশনপ্রধান তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমে সংসদ সদস্য নির্বাচন করা হয়। এরপর তাঁদের মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হয়। স্থানীয় সরকারের সব স্তরেও (ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন) শুধু সদস্য ও কাউন্সিলর নির্বাচন হবে। একই তফসিলে এসব নির্বাচন করা যাবে। এরপর সভাপতি (সভাধ্যক্ষ) নির্বাচন করা হবে। সভাপতি জাতীয় সংসদের স্পিকারের মতো দায়িত্ব পালন করবেন। সভাপতির সভাপতিত্বে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচন করা হবে। তারপর চেয়ারম্যান বা মেয়র তিনজন বা পাঁচজনের একটি পূর্ণকালীন কাউন্সিল করবেন। তাঁরা পূর্ণকালীন কাজ করবেন এবং পূর্ণকালীন বেতন-ভাতা পাবেন। বাকি যাঁরা আসবেন, তাঁরা খণ্ডকালীন। তাঁরা স্থায়ী কমিটির সভাপতি-সদস্য হবেন।

বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচন করা হয়। কমিশন বলছে, এ ক্ষেত্রে নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে তিনটি ওয়ার্ডে কেবল নারী সদস্য নির্বাচিত হবেন। ঘূর্ণায়ন পদ্ধতিতে তিনটি নির্বাচনে এটি করা হবে। এভাবে নারীর সংরক্ষিত ওয়ার্ড ব্যবস্থা আগামী তিনটি নির্বাচনের পর পুনর্মূল্যায়ন হতে পারে।

‘মূল সংস্কার না করে নির্বাচন করলে লাভ হবে না’

নির্বাচনের আগে সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মূল সংস্কার না করে নির্বাচন করলে কোনো লাভ হবে না। সেটি জাতীয় নির্বাচন বলেন আর স্থানীয় নির্বাচন বলেন। সে জন্য আমরা সংস্কারকে প্রাধান্য দিয়েছি। সংস্কার করার পর আপনি নির্বাচন করেন।’

স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে না পরে—এ নিয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে কমিশনের সুপারিশ কী, তা জানতে চাইলে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইচ্ছা করেই এ বিষয়ে স্পষ্ট করে তাঁরা কিছু বলেননি। তাঁরা বলেছেন, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিক। স্থানীয় সরকার নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ, জাতীয় সংসদ নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ। একটি করলে আরেকটি করা যাবে না, এ–জাতীয় শর্তই অমূলক কথা। দুটোই করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এখন সারা দেশে একটা শূন্যতা। ইউনিয়ন, জেলা-উপজেলায় সবখানেই শূন্যতা, পৌরসভা-সিটি করপোরেশনেও। এই শূন্যতার কারণে দেশে একটা অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। স্থিতিশীল ব্যবস্থার জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্ব নিয়ে আসা দরকার।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স প র শ কর ছ ত ফ য় ল আহম দ র সরক র র জন য উপজ ল সদস য প রসভ

এছাড়াও পড়ুন:

নগরের হাসপাতালটিতে রোগীরা কেন থাকতে চান না

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের শয্যাসংখ্যা ৫২। তবে গত সোমবার হাসপাতালের এই ওয়ার্ডে সাতটি শয্যা খালি দেখা গেছে। একই চিত্র সার্জারি ওয়ার্ডেরও। নগরের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেখানে রোগীর চাপ থাকে শয্যার দেড় গুণ, সেখানে জেনারেল হাসপাতালে এই সংখ্যা অর্ধেক। বছরে সাড়ে তিন লাখের মতো রোগী এখানে সেবা নিলেও তাঁদের মাত্র আড়াই শতাংশ ভর্তি হন এখানে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত চার বছরের গড় হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ২৩ থেকে ২৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হন। প্রতি মাসে শয্যা অনুপাতে আবাসিক রোগী ভর্তি গড়ে ৪৭ শতাংশ; অর্থাৎ মোট শয্যার অর্ধেকের বেশি ফাঁকা থাকে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এই হার আরও কম; ৩৭ শতাংশ।

রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এই হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার কারণ জানা গেছে। সেগুলো হলো হাসপাতালের অবস্থান, নিরাপত্তাঝুঁকি, রাতের বেলায় ওষুধ না পাওয়া এবং পর্যাপ্ত যাতায়াতব্যবস্থা না থাকা। হাসপাতালটিতে জনবলেরও ঘাটতিও রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় নার্সদের পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ভবনগুলোর বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে রোগীরা এখানে থাকতে চান না।

ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। মোহাম্মদ একরাম হোসেন, ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

চট্টগ্রাম নগরে সরকারি দুই হাসপাতালের মধ্যে একটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অন্যটি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ২ হাজার ২০০ হলেও প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোগী থাকেন। অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতালে ২৫০ শয্যার বিপরীতে ১২০ থেকে ১৪০ জন রোগী থাকেন।

রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁরা চিকিৎসা নেন, তার অধিকাংশই আশপাশের এলাকার। দূরের রোগীরা এখানে আসতে চান না। কারণ, পাহাড়ের ওপর হাসপাতালটির অবস্থান। এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। রাতে পাহাড়ের পথ ধরে মাদকসেবীরা হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের পাশে অবস্থান করে। ছিনতাই ও নিরাপত্তাঝুঁকির কারণেই রোগীরা অন্যত্র চলে যান।

চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের জন্য ২৫টি শয্যা সংরক্ষিত আছে। এসব শয্যায় অন্য কোনো রোগী ভর্তি করা হয় না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের মূল ভবন দুটির বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে গেছে। ফাটল ধরেছে কিছু স্থানে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন গুটিকয় নার্স। প্রসূতি বিভাগে নার্সের উপস্থিতি বেশি। সার্জারি বিভাগের পুরুষ ব্লকের অন্তত ৫টি বেড খালি। শিশু ওয়ার্ডের অবস্থাও একই। রোগী বেশি মেডিসিন বিভাগে।

হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায়ই অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় সম্ভব হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের অবস্থান নগরের আন্দরকিল্লা এলাকার রংমহল পাহাড়ের ওপর। এর পেছনের দিকে কাটা পাহাড় লেন। আগে এ সড়ক দিয়েই হাসপাতালে ঢুকতে হতো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ধ্যা হলেই বন্ধ এ পাহাড়ি পথ ধরে বহিরাগত লোকজন হাসপাতালে ঢোকে। নিরাপত্তা না থাকায় মাদকসেবীরাও পাহাড়ে ওঠে।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ একরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন।

শুরুতে এটি কেবল একটি ডিসপেনসারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তবে ১৯০১ সালে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে এর কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় জেলা সদর হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতাল ১৯৮৬ সালে ৮০ শয্যা এবং পরে ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে জনবল থেকে যায় ১০০ শয্যার। সেই পুরোনো জনবল কাঠামোতেই সর্বশেষ ২০১২ সালে হাসপাতালটিতে ২৫০ শয্যার সেবা শুরু হয়। তবে এখনো জনবল সে–ই অর্ধেক।

হাসপাতাল–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শয্যা ২৫০টি হলেও এখানে চিকিৎসক ও নার্স আছেন প্রয়োজনের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও কনসালট্যান্ট মিলিয়ে ৪০ থেকে ৪২ জন চিকিৎসক আছেন। অথচ ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবলকাঠামো অনুযায়ী ৬৫ থেকে ৬৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে চিকিৎসকদের মতে, যে সংখ্যক রোগী এখানে আসেন, এর জন্য ১০০ জনের বেশি চিকিৎসক প্রয়োজন। নেই পর্যাপ্ত নার্স ও মিডওয়াইফও।

এ ছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায় সময় অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে সংকট সত্ত্বেও বহির্বিভাগের সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন রোগীরা। তবে বিভিন্ন সময় এসে টিকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন রোগী। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছেন ২ লাখ ৭০ হাজার ৮৭২ জন রোগী। জরুরি সেবা নিয়েছেন প্রায় ৩৮ হাজার রোগী।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিক আমান প্রথম আলোকে বলেন, জনবল স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে রোগীদের পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে সংখ্যক চিকিৎসক থাকার কথা, তার তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে সেবা চলছে। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হলে পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

হাসপাতালে বিভিন্ন চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শয্যা বাড়লেও সেখানে পদ বাড়ানো হয়নি। নিরাপত্তার জন্য তাঁদের ৩০ জন আনসার অনুমোদন করা হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নগরের হাসপাতালটিতে রোগীরা কেন থাকতে চান না