পটুয়াখালীতে নিজ বাড়িতে খুন হওয়া বৃদ্ধার শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে
Published: 21st, April 2025 GMT
পটুয়াখালীর দুমকিতে নিজ ঘরে খুন হওয়া ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ইমাম হোসেন সিকদার।
পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক ইমাম হোসেন জানান, গতকাল বিকেলে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ওই নারীর মরদেহের ময়নাতদন্ত করেছেন তিনি। এ সময় তাঁর শরীরে ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন।
আরও পড়ুনপটুয়াখালীতে ঘরে ঢুকে বৃদ্ধাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ২২ ঘণ্টা আগেগতকাল সকালে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় দুমকি থানা-পুলিশ। তাঁর পুত্রবধূ ও স্বজনদের অভিযোগ, গত শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে মনির হোসেন (৪৮) নামের ওই বৃদ্ধার দূরসম্পর্কের এক নাতি বসতঘরটিতে প্রবেশ করেন। এরপর ওই বৃদ্ধাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে মনিরকে গতকাল আটক করে পুলিশ। পরে দুমকি থানায় স্বজনদের করা হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, ময়নাতদন্তে যদি ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়, তবে হত্যার ধারার সঙ্গে আরও একটি ধারায় আসামিকে অভিযুক্ত করা হবে।
দুমকি থানা-পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানান, ‘ওই বৃদ্ধার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া হয়েছে। তারা প্রতিবেদন দিলেই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
অন্যদিকে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিলরুবা ইয়াসমীন জানান, যিনি ওই বৃদ্ধার ময়নাতদন্ত করেছেন, তিনি প্রতিবেদন জমা দিলেই থানা-পুলিশের কাছে পাঠানো হবে।
এর আগে ওই বৃদ্ধার পুত্রবধূ জানান, গত শনিবার গভীর রাতে মনির তাঁদের ঘরের কাছে গিয়ে পানি খাওয়ার কথা বলে দরজা খুলতে বলেন। এ সময় তিনি (পুত্রবধূ) দরজা না খুললে মনির ঘরের পেছনের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। এরপর তাঁর (পুত্রবধূ) কাছে টাকা দাবি করেন। তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর ঘুমন্ত স্বামীকে পিটিয়ে জখম করেন মনির। এতে তিনি (পুত্রবধূ) ভয় পেয়ে নিজের প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পাশের একটি ঘরে আশ্রয় নেন।
পুত্রবধূ আরও বলেন, ঘটনার সময় মনিরের আচরণ অস্বাভাবিক ছিল। তাঁর ধারণা, মনির ওই সময়ে মাদকাসক্ত ছিলেন। এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর মনির ঘর থেকে চলে গেলে তিনি ঘরে ফিরে আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর শাশুড়ি মৃত ও বিবস্ত্র। তাঁর ধারণা, তাঁর শাশুড়িকে ধর্ষণের পর পিটিয়ে হত্যা করেছেন মনির।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ময়ন তদন ত ওই ব দ ধ র প ত রবধ কর ছ ন গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।