Prothomalo:
2025-05-01@03:21:05 GMT

পৃথিবীর বাদশাহ

Published: 21st, April 2025 GMT

হজরত মুহাম্মাদ (সা.) তখন মক্কায়। কাফেররা তাঁর নবুওয়াতের সত্যতা যাচাই করতে চাইল। মদিনার ইহুদিদের কাছে প্রতিনিধি দল পাঠাল। প্রতিনিধি দল তাদের কাছে মুহাম্মাদ (সা.) সম্পর্কে জানতে চাইল। ইহুদিরা প্রতিনিধি দলকে তিনটি প্রশ্ন শিখিয়ে দিয়ে বলল, এগুলোর উত্তর সত্য নবী ছাড়া কেউ দিতে পারবে না। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল ‘ওই ব্যক্তির অবস্থা বলুন, যে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত জয় করতে করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন।’ প্রশ্নগুলোর জবাবে মুহাম্মাদ (সা.

)-এর ওপর সুরা কাহাফ নাজিল হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির, ৩/২১-৭২)

ওই ব্যক্তি সম্পর্কে আল্লাহ-তায়ালা নবীকে বললেন, ‘তারা তোমাকে জুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলো, আমি তোমাদের কাছে তার বিষয় বর্ণনা করব।’ (আল্লাহতায়ালা বলেন,) ‘আমি তো তাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের উপায়-উপকরণ দান করেছিলাম।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৮৩-৮৫)

জুলকারনাইন ছিলেন একজন সৎ ব্যক্তি ও ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ। পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য দেশসমূহ জয় করেছিলেন এবং সেসব দেশে তিনি সুবিচার ও ইনসাফের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর লক্ষ্য অর্জনে আল্লাহর কাছ থেকে সব রকম উপায়-উপকরণ পেয়েছিলেন। তিনি দিগ্বিজয়ে বের হয়ে পৃথিবীর তিন প্রান্তে পৌঁছে ছিলেন—পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের শেষে প্রান্তে এবং উত্তরে পর্বতমালার পাদদেশে। পাশ্চাত্যে তিনি এক অবিশ্বাসী সম্প্রদায় পেলেন। তিনি বললেন, ‘আমি এদের প্রথমে দাওয়াত দেব। যারা সৎ পথে আসবে, তাদের প্রতিদান দেব। যারা কুফুরে রয়ে যাবে, তাদের শাস্তি দেব।’

আরও পড়ুনযাঁর নামে কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে০৮ এপ্রিল ২০২৫

প্রাচ্যে এমন এক সম্প্রদায় পেলেন, যারা শূন্য ময়দানে থাকত। রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচতে গৃহ, তাঁবু, পোশাকপরিচ্ছদ ব্যবহার করত না। দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যস্থলে এমন এক সম্প্রদায় পেলেন, যারা তার কথা বুঝতে পারছিল না। তারা তাঁর কাছে ইয়াজুজ-মাজুজ থেকে বাঁচার আকুতি জানাল। তিনি দুই পর্বতের মধ্যবর্তী গিরিপথকে একটি সুবিশাল লৌহ প্রাচীর দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ফলে ইয়াজুজ-মাজুজের লুটতরাজ থেকে এলাকার জনগণ রক্ষা পায়। (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৮৩-৯৭; তাফসিরে মারেফুল কোরআন, মূল: মুফতি মুহাম্মাদ শফি, অনুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, পৃষ্ঠা: ৮১৮)

কোরআনে বর্ণিত জুলকারনাইন কে এবং কোন যুগে ছিলেন, এ সম্পর্কে ইসলামি গবেষকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম রাজি (রহ.)-এর মতে, জুলকারনাইনের প্রকৃত নাম সিকান্দার। তিনি দারা ইবনে দারাকে একাধিকবার পরাজিত করেছেন। সিকান্দারের বাবা ছিলেন ইবনে ফিলিবুস ইউনানি।’ (তাফসিরুল কাবির, খণ্ড: ২১, পৃষ্ঠা: ৪৯৩)

আরও পড়ুনকোরআনের যে আয়াত শুনে ইসলামে আগ্রহী হলেন একজন০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ইবনে ইসহাকের বরাতে ইমাম কুরতুবি (রহ.) উল্লেখ করেছেন, ‘জুলকারনাইন ছিলেন মিসরের অধিবাসী। তিনি ইউনান বিন ইয়াফেস বিন নুহ (আ.)-এর সন্তান। ইবনে হিশাম বলেছেন, তার নাম সিকান্দার।’ (তাফসিরুল কুরতুবি, ১১/৪৫)

ইবনে কাসিরের মতে, জুলকারনাইনের সময় ছিল সিকান্দার গ্রিক, মকদুনি থেকে দুই হাজার বছর আগে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর আমলে। তাঁর মন্ত্রী ছিলেন হজরত খিজির (আ.)। তিনি পদব্রজে হজে গেলে ইবরাহিম (আ.) মক্কা থেকে বের হয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান, তাঁর জন্য দোয়া করেন এবং উপদেশ দেন। ইবনে কাসিরে আজরকির বরাত দিয়ে আছে, জুলকারনাইন ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে তওয়াফ ও কোরবানি করেন।

আবু রায়হান আল-বিরুনি কিতাবুল আসারিল বাকিয়া আনিল কুরুনিল খালিয়াতে বলেন, ‘কোরআনে বর্ণিত জুলকারনাইন হচ্ছে আবু বকর ইবনে সুমাই ইবনে ওমর ইবনে আফরিকায়স হিমইয়ারি। তিনি দিগ্বিজয়ী ছিলেন।’

আবু হাইয়ান বাহরে মুহিতে বলেন, জুলকারনাইন তিনজন ইয়েমেনি সম্রাটের প্রথম সম্রাট ছিলেন। সাবা কূপের মোকদ্দমায় ইবরাহিম (আ.)-এর পক্ষে ন্যায় সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন।’ (তাফসিরে মারেফুল কোরআন, মূল: মুফতি মুহাম্মাদ শফি, অনুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, পৃষ্ঠা: ৮১৯)

জুলকারনাইন নবী ছিলেন না। তিনি ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘জুলকারনাইন একজন ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ ছিলেন। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ২/ ১১৩)। আবু হুরায়রাহ (রা.)-ও জুলকারনাইনকে সৎকর্মপরায়ণ বান্দা মনে করতেন। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ২/ ১০৩)। আলি (রা.) বলেন, ‘জুলকারনাইন নবীও ছিলেন না, বাদশাহও ছিলেন না; তিনি একজন সৎ বান্দা ছিলেন।’ (ফাতহুল বারি, ৬/ ২৯৫)

লেখক: আলেম

আরও পড়ুনযে ঘটনায় কোরআনের আয়াত নাজিল হয়১১ নভেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইবর হ ম ব দশ হ ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি

শোবিজের একঝাঁক একঝাঁক অভিনয়শিল্পীকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। প্রথমে ইরেশ যাকের, তারপর সুবর্ণা মুস্তাফা, অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, নিপুণসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর নাম প্রকাশ্যে এসেছে। এরই মধ্যে গতকাল অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর ও লাঞ্ছিত করে রাজধানীর রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চর্চা চলছে। এ নিয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

সিদ্দিকের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনা ঘটনা নিয়ে আজাদ আবুল কালাম গণমাধ্যমে বলেন, “সিদ্দিকের সঙ্গে যা ঘটেছে, এটা তো মব। এই মব ভায়োলেন্সকে তো ঠেকাচ্ছে না। কেন যেন মনে হচ্ছে, মব ভায়োলেন্সকে নীরবে বলা হচ্ছে, করে যাও। আমাদের কিছুই করার নেই। একজনের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা থাকতে পারে। অভিনেতা হিসেবে সিদ্দিক সবার কাছে পরিচিত। কিছু লোক তাকে এভাবে রাস্তায় ধরে মেরে দেবে!”

প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আজাদ আবুল কালাম বলেন, “দলবদ্ধভাবে সিদ্দিককে শারীরিকভাবে আঘাত করেছে, আক্রমণ করেছে, গায়ে থেকে জামাকাপড় খুলে ফেলেছে, এরপর থানায় সোপর্দ করেছে। থানায় যদি সোপর্দ করতেই হয়, তাহলে প্রথমে কেন আইন হাতে তুলে নিল? তাকে হেনস্তা করে আইনের হাতে তুলে দেবে— এই মব জাস্টিস, মব ভায়োলেন্স সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। এটা তো একটা সময় নানা স্তরে হবে। এসব কর্মকাণ্ড সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, যেখানে মব ভায়োলেন্স, সেখানে কঠোর হস্তে দমন করবে।”

ঢালাওভাবে অভিনয়শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়ে বিস্মিত আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, “ঢালাওভাবে হত্যা মামলা হচ্ছে! দেখে মনে হচ্ছে, সবাইকে মামলার মধ্যে ফেলতে হবে। ৩০০-৪০০ জন মামলার আসামি, এটা অবাস্তব একটা অবস্থা। একজন সুবর্ণা মুস্তাফার মতো শিল্পী রাস্তায় গিয়ে মানুষকে গুলি করবে? যে মানুষটি মামলা করেছেন, তিনি আন্দোলনের সময় আহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন; তিনি মামলা করেছিলেন অনেক লোকের নামে। মামলার নথিতে শিল্পীদের অনেকের নাম দেখলাম, তারা রাস্তায় নেমে মানুষকে গুলি করবে!”

সরকারিভাবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা উচিত বলে মনে করেন আজাদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, “সরকারিভাবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও উচিত হবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা। নিরুৎসাহিত করা। যে ব্যক্তি মামলা করছেন, যদি প্রমাণিত হয়, শিল্পীরা কেউই গুলি করেনি, তখন তো এটা মিথ্যা মামলা হবে। এ রকম মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে, যে ব্যক্তি শিল্পীদের নামে মামলা করেছেন, তার কী শাস্তি হবে, তারও বিধান থাকতে হবে।”

“কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, তা জানানোর একটা প্রক্রিয়া আছে। শুধু শিল্পী না, একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আপনি তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত তাকে অপরাধী বলতে পারেন না। তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে পারেন না। মামলা করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করা শুরু করলেন, এই প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে, এটাই যদি আমাদের মনস্তত্ত্ব হয়, তাহলে বিভক্তি আরো বাড়বে।” বলেন আবুল কালাম আজাদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি
  • গাজীপুরে জমি নিয়ে বিরোধে সংঘর্ষ, হাতুড়িপেটায় একজন নিহত
  • সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি