আদালতের রায় পক্ষে যায়নি, বিজেপি দলীয় উপরাষ্ট্রপতি থেকে সংসদ সদস্য আক্রমণ করছেন সুপ্রিম কোর্টকে
Published: 21st, April 2025 GMT
শুরু করেছিলেন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। তারপর সুপ্রিম কোর্টের কড়া সমালোচনায় মুখর হয়েছেন বিজেপির দুই সংসদ সদস্য নিশিকান্ত দুবে ও দীনেশ শর্মা। বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা শুধু বলেছেন, দল ওই মন্তব্য সমর্থন করে না। কিন্তু ওই পর্যন্তই। সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকার কোনো নির্দেশ দলীয় নেতাদের দেওয়া হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাক। তাঁকে নিশানা করে বিরোধীরা তাই সরাসরি জানতে চেয়েছেন, এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী।
তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি ১০টি বিলে সই না করে বছর চারেক কাটিয়ে দেওয়ায় রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। বিচারপতি জেবি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ সেই মামলার রায়ে বলেছেন, প্রথমবার প্রত্যাখ্যাত বিল রাজ্য বিধানসভা দ্বিতীয়বার পাঠালে রাজ্যপাল সম্মতি দিতে বাধ্য থাকবেন। তিন মাসের মধ্যে সেই বিল সম্পর্কে তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দ্বিতীয়বার পাঠানো বিল রাজ্যপাল বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারবেন না।
ওই রায়েই সুপ্রিম কোর্ট জানান, রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রেও তিন মাসের সময়সীমা প্রযোজ্য। রাষ্ট্রপতিও অনির্দিষ্টকাল সিদ্ধান্ত না নিয়ে থাকতে পারবেন না। কোনো ক্ষেত্রে বিলম্ব হলে সেই কারণ তাঁকে জানাতে হবে।
ভারতের সংবিধানে বিলে সই করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের জন্য সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের ওই রায় সেই দিক থেকে যুগান্তকারী। সেই রায়ের মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিলেন, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারই ‘সুপ্রিম’।
সুপ্রিম কোর্টের ওই রায় পর্যালোচনার জন্য রিভিউ পিটিশন দাখিল করা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু একেবারে সরাসরি সমালোচনায় নামেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টকে ‘সুপার পার্লামেন্ট’ তকমা দিয়ে তিনি বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ সুপ্রিম কোর্টকে যে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে তা ‘পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র’ হয়ে উঠেছে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রতি কটাক্ষ করে উপরাষ্ট্রপতি বলেন, বিচারপতিরা আইনসভার কাজ করবেন। আইন পাস করবেন। সরকারের কাজও করবেন। তাঁরাই সুপার পার্লামেন্ট। অথচ তাঁদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। কারণ, কোনো আইনই তাঁদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
উপরাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, দেশের রাষ্ট্রপতির জন্য সুপ্রিম কোর্ট সময়সীমা বেঁধে দেবেন, এমন হতে পারে না। এসব মেনে নেওয়া যায় না। রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের আদৌ আছে কি না, সেই প্রশ্নও তিনি তুলে দিয়েছেন।
উপরাষ্ট্রপতির মন্তব্যের সুরেই সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করেছেন বিজেপির দুই সংসদ সদস্য নিশিকান্ত দুবে ও দীনেশ শর্মা। নিশিকান্ত ঝাড়গ্রামের গোড্ডা কেন্দ্র থেকে লোকসভায় নির্বাচিত। দীনেশ শর্মা উত্তর প্রদেশ থেকে রাজ্যসভার সদস্য। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি উত্তর প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করে দীনেশ বলেন, মনে রাখতে হবে রাষ্ট্রপতিই সুপ্রিম। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করা বা নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ার কারও নেই। লোকসভা ও রাজ্যসভাকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা ভারতের সংবিধান কাউকে দেয়নি।
তবে নিশিকান্ত দুবের মতো এত কড়া ভাষায় সুপ্রিম কোর্ট ও প্রধান বিচারপতির সমালোচনা কেউ করেননি। সুপ্রিম কোর্টের উদ্দেশে গোড্ডার সংসদ সদস্য বলেন, ‘আপনাদের যাঁরা নিয়োগ করেছেন, তাঁদের আপনারা কী করে নির্দেশ দেন? কটাক্ষ করে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ যখন আইন প্রণয়ন করছে, তখন সংসদ ও বিধানসভা তুলে দেওয়া হোক।’
দুবে সরাসরি আক্রমণ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নাকেও। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানি হয়েছে ওয়াক্ফ মামলার। তাঁর পর্যবেক্ষণের দরুণ কেন্দ্রীয় সরকার পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত নতুন ওয়াক্ফ আইনের বিতর্কিত বিষয় কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নেয়। সুপ্রিম কোর্টের ওই মনোভাবের সমালোচনা করে দুবে বলেন, প্রধান বিচারপতি দেশে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছেন।
বিচার বিভাগের প্রতি এই ধারাবাহিক আক্রমণের মুখে সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বিরোধী দলের নেতারা। কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতারা মনে করছেন, উপরাষ্ট্রপতির পাশাপাশি বিজেপির সংসদ সদস্যরা সুপ্রিম কোর্ট ও বিচারপতিদের সমালোচনা করা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নীরব।
বিরোধীদের অভিযোগ, ধারাবাহিকভাবে সংবিধানের ওপর আঘাত হানা হচ্ছে। অথচ সরকার চুপ। দলীয় সংসদ সদস্যদের মন্তব্য তাঁদের ব্যক্তিগত অভিমত বলে শাসক দলও দায় এড়াচ্ছে। এটা একধরনের কপটতা। সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে দল ও সরকার তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের আড়াল করা হচ্ছে।
বিজেপি নেতাদের মন্তব্যে আইনজীবীদের একাংশও ক্ষুব্ধ। ওয়াক্ফ মামলার অন্যতম মামলাকারী আইনজীবী আনাস তানভির বিজেপি দলীয় সংসদ সদস্য নিশিকান্ত দুবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করতে উদ্যোগী হয়েছেন। সে জন্য তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলকে চিঠি লিখেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ষ ট রপত র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গৌহাটি টেস্টে ‘লাঞ্চের আগে টি-ব্রেক’! জানুন কেন এই ব্যতিক্রম
টেস্ট ক্রিকেটের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য অনুযায়ী দিনের বিরতিগুলোর ক্রম থাকে- টস, লাঞ্চ, টি এবং শেষে স্টাম্পস। কিন্তু আসন্ন ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় টেস্টে সেই নিয়ম ভেঙে দেখা যাবে এক অভিনব দৃশ্য। ২২ নভেম্বর গৌহাটির বারসাপারা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া এই টেস্টে লাঞ্চের আগে দেওয়া হবে টি-ব্রেক। ভারতীয় টেস্ট ইতিহাসে যা ঘটছে প্রথমবারের মতো।
কেন লাঞ্চের আগে টি-ব্রেক?
গৌহাটির বারসাপারা স্টেডিয়াম ভারতের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। যেখানে সূর্যোদয় হয় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে অনেক আগে। ফলে সন্ধ্যা নেমেও আসে তাড়াতাড়ি। এই প্রাকৃতিক সময়ের পার্থক্যের কারণে দিনের পূর্ণ ৯০ ওভার খেলা শেষ করা প্রায়ই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই খেলার সময় সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে এবং আলো নিভে যাওয়ার আগেই দিনের খেলা শেষ করতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ও ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ) যৌথভাবে বিরতির সময়সূচিতে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরো পড়ুন:
রোহিতের সেঞ্চুরির ‘হাফ-সেঞ্চুরি’, ঢুকলেন এলিট ক্লাবে
রশিদ-জাম্পাকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের রিশাদ
নতুন সময়সূচি:
নতুন সূচি অনুযায়ী ম্যাচ শুরু হবে সকাল ৯টায়। যা ভারতের স্বাভাবিক টেস্ট সময়ের (সকাল ৯টা ৩০ মিনিট) চেয়ে আধঘণ্টা আগে।
প্রথম সেশন: সকাল ৯টা থেকে ১১টা,
টি-ব্রেক: সকাল ১১টা থেকে ১১টা ২০ পর্যন্ত (২০ মিনিট),
দ্বিতীয় সেশন: সকাল ১১টা ২০ থেকে দুপুর ১টা ২০ পর্যন্ত,
লাঞ্চ ব্রেক: দুপুর ১টা ২০ থেকে ২টা পর্যন্ত (৪০ মিনিট),
শেষ সেশন: দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এতে সূর্যাস্তের আগেই খেলা শেষ করা সম্ভব হবে। আবার দর্শকরাও পাবেন দিনের পূর্ণ খেলার স্বাদ।
ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এই পরিবর্তন নিঃসন্দেহে এক অভিনব অধ্যায়, যা প্রমাণ করে খেলার সৌন্দর্য যেমন ঐতিহ্যে, তেমনি তা সময়ের প্রয়োজনেও অভিযোজিত হয়।
ঢাকা/আমিনুল