কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি দেশকে পাঁচটি রাজ্যে বিভক্ত করে রাজ্য সরকার ব্যবস্থা প্রচলনসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেছে বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি (বিএমজেপি)। দলটি বলেছে, বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও ভূ-রাজনীতির কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। পৃথিবীর কোনো পরাশক্তি বাংলাদেশকে ছোট করে দেখতে পারবে না। সেজন্য প্রতিবেশী দেশসহ সব দেশের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্কের বিকল্প নেই। অবশ্যই সেই সম্পর্ক হবে সমমর্যাদা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত বিএমজেপি এর সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি উত্থাপন করা হয়। 

দলটির পাঁচদফা দাবিতে আরও রয়েছে, ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ আদর্শ প্রতিষ্ঠা; সর্বস্তরে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্রের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা; জাতীয় শিক্ষাক্রমের সব পর্যায়ে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতিফলনশীল পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং পাঠদানের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার পর দলটির পক্ষে আয়োজিত প্রথম এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএমজেপি সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল। দলকে নিবন্ধন দেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও উচ্চ আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ভয়কে জয় করে দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে বিএমজেপি।

তিনি বলেন, ছাত্রদের গণ-আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে ড.

ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা নিয়ে এসেছে। এ কাজে সেনাবাহিনী ও পুলিশবাহিনী নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী দেশের সার্বিক পরিস্থিতি উত্তরণে বড় রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকাও প্রশংসনীয়।
  
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএমজেপি এর মহাসচিব দিলীপ রায়, যুগ্ম মহাসচিব ডা. ফাইজুর রহমান, অ্যাডভোকেট তারক চন্দ্র রায় ও অ্যাডভোকেট সুধীর কুমার সূত্রধর।  

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এমজ প ব এমজ প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র‍্যাব, চায় সাইবার ইউনিট

অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‍্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।

কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র‍্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র‍্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র‍্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র‌্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র‍্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ