যবিপ্রবির বাসের চুরি করা তেল বিক্রি হয় ৯০ টাকা দরে
Published: 21st, April 2025 GMT
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) বিভিন্ন গাড়ি থেকে চুরি করা অন্তত ৬১ লিটার তেল জব্দ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের কাছে তেল চুরির বিষয়টি স্বীকার করেন অভিযুক্ত বাসের ড্রাইভার ও হেল্পাররা।
সোমবার (২১ এপ্রিল) ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বাসে অভিযান চালিয়ে এসব তেল জব্দ করেন।
জানা গেছে, যবিপ্রবির পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (ইএসটি) বিভাগের শিক্ষার্থী হান্নান হোসেন তেল চুরির খবর পেয়ে ভোর ৪টা থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে চোর ধরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। ভোর ৬টায় সন্দেহভাজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাপলা বাস চাঁচড়ার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসের গ্যারেজ থেকে বের হয়ে প্রধান ফটকের সামনে আসলে তারা আটক করেন।
আরো পড়ুন:
তেল ও চাল ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন
সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি: ক্রেতা-বিক্রেতার অস্বস্তি, প্রত্যাহার দাবি
এ সময় শিক্ষার্থীদের কাছে বাসে চুরি করা তেল থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন ওই বাসের ড্রাইভার ও হেল্পার। শিক্ষার্থীরা তল্লাশি চালিয়ে শাপলা বাসের বক্স থেকে অন্তত ৬০ লিটার ডিজেল জব্দ করে আনসার সদস্যদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেন।
এদিকে চুরির সঙ্গে জড়িত শাপলা বাসের ড্রাইভার শিক্ষার্থীদের জানান, দুইটা গ্রুপে বিভক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ড্রাইভাররা। দুইটা গ্রুপই তেল চুরির সঙ্গে জড়িত। তেল চুরির বিষয়টি ২-১ বছর নয়, এটা প্রায় ১০-১২ বছর ধরে চলে আসছে।
তিনি আরো জানান, তেল চুরির ঘটনার সঙ্গে কম-বেশি সব ড্রাইভারই জড়িত। আমরা ২০-৩০ দিনে অল্প অল্প তেল জমিয়ে আনুমানিক ২০-৩০ লিটার হলে বিক্রি করার জন্য নিয়ে যাই। ৯০ টাকা প্রতি লিটার করে শানতলায় এ তেল বিক্রি করা হয়।
তেল জব্দকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (ইএসটি) বিভাগের শিক্ষার্থী হান্নান হোসেন বলেন, “গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা রাত ২টার দিকে জানতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের তেল বের করে ড্রামে রাখা হয়েছে। সেটা সকালে নামাজের পরপরই বের হয়ে যাবে বাসের মাধ্যমে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাত ২টায় ১০-১২ জনের একটা টিম কাজ করব বলে সিদ্ধান্ত নিই।”
তিনি বলেন, “রাত ৪টার দিকে আমরা ৪-৫ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে উপস্থিত হই এবং আমরা গাড়ির দিকে নজর রাখতে শুরু করি। এরপরে ভার্সিটির সাংবাদিকদের অবগত করে সেখানে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে ৬টার পর গাড়িটা আসলে ওঠার কথা বলে থামায়। গাড়িতে উঠে আমরা চেক করা শুরু করি। প্রথমে সিটের তলায় না পেয়ে তাদের বক্স খুলতে বলা হয়। ওই বক্সের মধ্যে থেকে তেলগুলো উদ্ধার করি।”
তিনি আরো বলেন, “তেল চুরি ঠেকাতে পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাইলেজ সিস্টেম চালু করে এবং নির্দিষ্ট দূরত্বের জন্য সর্বনিম্ন তেলের পরিমাণ নির্ধারণ করে। তবে বাস ড্রাইভাররা তেল চুরি করার জন্য ধীরে ধীরে গাড়ি চালিয়ে বা বাসের নিয়মানুযায়ী না চালিয়ে বাসের ক্ষতিসাধন করে তেল বাঁচায়। পরে তেলগুলো পাইপের মাধ্যমে বের করে নেয়। তেলের ট্যাংকের লকারে সেন্সর সিস্টেম চালু করলে তেল চুরি ঠেকানো যাবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবির পরিবহন প্রশাসক ড.
তেল চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এসএম নুর আলম বলেন, “শিক্ষার্থীরা দুটি তেল ভর্তি কন্টেইনার জব্দ করে প্রক্টর অফিসে হস্তান্তর করেছে ও মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছে। দুটি কন্টেইনারে প্রায় ৬১ লিটার তেল ছিল। এ ঘটনায় জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা ও শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”
ঢাকা/ইমদাদুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র্যাব, চায় সাইবার ইউনিট
অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।
কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।
হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।
এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।