যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্কযুদ্ধে চাপে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া
Published: 21st, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একটি বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। দেশ দুটির লড়াইয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্যে এখন অস্থিরতা।
মাত্রাতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের পণ্য বাণিজ্যে এক প্রকার নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে বলা যায়। শুল্কযুদ্ধ মোকাবেলায় চীন ঘরে বসে নেই। একদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে ধরনা দিচ্ছে, অন্যদিকে চীনা শীর্ষ নেতারা এই অঞ্চলে সফর করে নিজেদের মাঠ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং চলতি মাসে মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া সফর করেন। সফরে তিনি একবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম মুখে নেননি। তবে শি’র প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
ভিয়েতনামে গিয়ে শি যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা হুমকির বিরোধিতা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি মোকাবেলায় তিনি দেশটির সরকার প্রধানকে বেইজিংয়ে আমন্ত্রণ জানান। মালয়েশিয়ায় তিনি ‘সাম্প্রতিক বিশ্ব ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ধাক্কা’ নিয়ে কথা বলেন। আর কম্বোডিয়ায় ‘আধিপত্য, ক্ষমতার রাজনীতি ও জোটভিত্তিক টানাপড়েন’ বিষয়ে কথা বলেন। নমপেনের সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন শি।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট দেশগুলো নিজেদের টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মতো দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করে থাকে। তারা এই দুই বৃহত্তম অর্থনীতির সংস্পর্শে থাকতে চায়। কিন্তু এখন দুই দেশের বাণিজ্যযুদ্ধ দেশগুলোকে বিরাট চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ শুল্ক আরোপ করায় এই অঞ্চলের কর্মকর্তারা হোয়াইট হাউসের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা করতে বাধ্য হয়েছেন। যেহেতু চীন এই অঞ্চলের বৃহত্তম প্রতিবেশী এবং এক নম্বর বাণিজ্য অংশীদার, সেহেতু চীন দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে মনোযোগ দিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে প্রভাব পড়ছে।
এদিকে ট্রাম্পের শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রে চীনা আমদানির প্রবাহকে ধীর করে দিয়েছে। এই কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজার এখন চীনের সস্তা পণ্যের সয়লাব হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এতে ছোট দেশগুলোর শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং কর্মসংস্থান হ্রাস পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষক রিক ওয়াটার্স বলছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যদিকে চীন চাপ সৃষ্টি করছে। এই অবস্থায় ছোট দেশগুলো কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়েছে।
শি’র ওই সফরের দৃশ্যমান লক্ষ্য ছিল, চীনা পণ্যের জন্য নতুন বাজার সৃষ্টি এবং চীনা নির্মাতাদের জন্য বাণিজ্যিক অবস্থান তৈরি করা। চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক এখন ২৪৫ শতাংশ। আর মার্কিন রপ্তানিতে চীনা শুল্ক কমপক্ষে ১২৫ শতাংশ। শুল্ক এত বেশি যে এটি নিষেধাজ্ঞার সমান।
শুল্কযুদ্ধের প্রাক্কালে চীন যে বার্তাটি দিতে চাচ্ছে তা হলো, দেশটি একটি দায়িত্বশীল বিশ্বশক্তি। তবে ট্রাম্পের পদক্ষেপে ভয়ের কিছু নেই। ওই তিনটি দেশ সফরে শি অবকাঠামো, প্রযুক্তি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর ১০০টিরও বেশি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। দেশগুলো চীনের পদক্ষেপের প্রশংসাও করেছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, এই কঠিন সময়ে বিশ্ববাণিজ্যে স্থিতিশীলতার দরকার। চীনের আচরণে সেই বিষয়টি প্রতিফলিত হোক আমরা তা চাই। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেন পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক কার্লা ফ্রিম্যান বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো তাদের সব ডিম চীনের ঝুড়িতেই ফেলবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ঝুড়িতেও কিছু পড়বে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীন ইতোমধ্যেই স্থানীয় সরবরাহ লাইনে এতো বেশি জড়িয়ে পড়েছে যে, চীনা পণ্য থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। ভিয়েতনামে চারটি কারখানা চালান বাখ কোয়াং মিন। তিনি বলছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন। তিনি বলেন, ওয়ালমার্ট, কস্টকো কিংবা নাইকির মতো মার্কিন কোম্পানির খুচরা কোম্পানির বিক্রেতাদের কাছেও পণ্য সরবরাহ করেন চীনা রপ্তানিকারকরা। চীনা মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকাও কঠিন।
ওই ব্যবসায়ী বলেন, তিনি যে কাপড় ব্যবহার করেন তার অন্তত ৭০ শতাংশই আসে চীন থেকে। আমেরিকানরা তাদের দোকানে যে পণ্য দেখতে চায়, তা তাদের দেশে উৎপাদন করা কঠিন। কেবল চীনা কোম্পানিগুলোই কম খরচে পণ্যগুলো উৎপাদন করতে পারে। শুল্ক আরোপ হোক আর না হোক, রাতারাতি কোনো কিছুর পরিবর্তন হওয়া কঠিন। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র বলছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।
এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক