যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একটি বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। দেশ দুটির লড়াইয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্যে এখন অস্থিরতা। 

মাত্রাতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের পণ্য বাণিজ্যে এক প্রকার নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে বলা যায়। শুল্কযুদ্ধ মোকাবেলায় চীন ঘরে বসে নেই। একদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে ধরনা দিচ্ছে, অন্যদিকে চীনা শীর্ষ নেতারা এই অঞ্চলে সফর করে নিজেদের মাঠ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। 

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং চলতি মাসে মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া সফর করেন। সফরে তিনি একবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম মুখে নেননি। তবে শি’র প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে। 

ভিয়েতনামে গিয়ে শি যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা হুমকির বিরোধিতা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি মোকাবেলায় তিনি দেশটির সরকার প্রধানকে বেইজিংয়ে আমন্ত্রণ জানান। মালয়েশিয়ায় তিনি ‘সাম্প্রতিক বিশ্ব ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ধাক্কা’ নিয়ে কথা বলেন। আর কম্বোডিয়ায় ‘আধিপত্য, ক্ষমতার রাজনীতি ও জোটভিত্তিক টানাপড়েন’ বিষয়ে কথা বলেন। নমপেনের সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন শি।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট দেশগুলো নিজেদের টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মতো দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করে থাকে। তারা এই দুই বৃহত্তম অর্থনীতির সংস্পর্শে থাকতে চায়। কিন্তু এখন দুই দেশের বাণিজ্যযুদ্ধ দেশগুলোকে বিরাট চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। 
 
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ শুল্ক আরোপ করায় এই অঞ্চলের কর্মকর্তারা হোয়াইট হাউসের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা করতে বাধ্য হয়েছেন। যেহেতু চীন এই অঞ্চলের বৃহত্তম প্রতিবেশী এবং এক নম্বর বাণিজ্য অংশীদার, সেহেতু চীন দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে মনোযোগ দিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে প্রভাব পড়ছে। 

এদিকে ট্রাম্পের শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রে চীনা আমদানির প্রবাহকে ধীর করে দিয়েছে। এই কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজার এখন চীনের সস্তা পণ্যের সয়লাব হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এতে ছোট দেশগুলোর শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং কর্মসংস্থান হ্রাস পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। 

মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষক রিক ওয়াটার্স বলছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যদিকে চীন চাপ সৃষ্টি করছে। এই অবস্থায় ছোট দেশগুলো কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়েছে। 
 
শি’র ওই সফরের দৃশ্যমান লক্ষ্য ছিল, চীনা পণ্যের জন্য নতুন বাজার সৃষ্টি এবং চীনা নির্মাতাদের জন্য বাণিজ্যিক অবস্থান তৈরি করা। চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক এখন ২৪৫ শতাংশ। আর মার্কিন রপ্তানিতে চীনা শুল্ক কমপক্ষে ১২৫ শতাংশ। শুল্ক এত বেশি যে এটি নিষেধাজ্ঞার সমান।

শুল্কযুদ্ধের প্রাক্কালে চীন যে বার্তাটি দিতে চাচ্ছে তা হলো, দেশটি একটি দায়িত্বশীল বিশ্বশক্তি। তবে ট্রাম্পের পদক্ষেপে ভয়ের কিছু নেই। ওই তিনটি দেশ সফরে শি অবকাঠামো, প্রযুক্তি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর ১০০টিরও বেশি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। দেশগুলো চীনের পদক্ষেপের প্রশংসাও করেছে। 

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, এই কঠিন সময়ে বিশ্ববাণিজ্যে স্থিতিশীলতার দরকার। চীনের আচরণে সেই বিষয়টি প্রতিফলিত হোক আমরা তা চাই। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেন পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক কার্লা ফ্রিম্যান বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো তাদের সব ডিম চীনের ঝুড়িতেই ফেলবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ঝুড়িতেও কিছু পড়বে। 

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীন ইতোমধ্যেই স্থানীয় সরবরাহ লাইনে এতো বেশি জড়িয়ে পড়েছে যে, চীনা পণ্য থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। ভিয়েতনামে চারটি কারখানা চালান বাখ কোয়াং মিন। তিনি বলছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন। তিনি বলেন, ওয়ালমার্ট, কস্টকো কিংবা নাইকির মতো মার্কিন কোম্পানির খুচরা কোম্পানির বিক্রেতাদের কাছেও পণ্য সরবরাহ করেন চীনা রপ্তানিকারকরা। চীনা মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকাও কঠিন।

ওই ব্যবসায়ী বলেন, তিনি যে কাপড় ব্যবহার করেন তার অন্তত ৭০ শতাংশই আসে চীন থেকে। আমেরিকানরা তাদের দোকানে যে পণ্য দেখতে চায়, তা তাদের দেশে উৎপাদন করা কঠিন। কেবল চীনা কোম্পানিগুলোই কম খরচে পণ্যগুলো উৎপাদন করতে পারে। শুল্ক আরোপ হোক আর না হোক, রাতারাতি কোনো কিছুর পরিবর্তন হওয়া কঠিন। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র বলছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের

ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে  বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ