আল্লাহ-তায়ালা বলেছেন, ‘তারা কি কোরআনে গভীরভাবে চিন্তা করে না, নাকি তাদের অন্তরে তালা লেগে আছে?’ (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২৪)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, অনেক মানুষ আছে যারা কোরআন তিলাওয়াত করে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী পর্যন্ত পৌঁছে না। কিন্তু সে যদি আন্তরিকভাবে পড়ত, তাহলে তা তার অন্তরে বদ্ধমূল হতো এবং উপকার লাভ করত।
কোরআন কেবল পাঠের জন্য নাজিল হয়নি, বরং নাজিল হয়েছে মানুষ যেন প্রথমে নিজের জীবনে এবং পরবর্তী ধাপে সামাজিক জীবনে আয়াতের বিধান বাস্তবায়ন করে। সুরা আনকাবুত, আয়াত ৩৫; সুরা আনআম, আয়াত ১২৬, সুরা জাসিয়া, আয়াত ১৩; সুরা জুমার, আয়াত ২১ সহ কোরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ-তাআলা বারংবার বলেছেন চিন্তা-ভাবনার করার কথা। তাতে বোঝা যায় যে, বিবেক খাটানো ও চিন্তা-ভাবনা করা আল্লাহর অন্যতম আদেশ ও ইবাদত।
এ ক্ষেত্রে নবীজির আমল সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একবার আমি আমার খালা মায়মুনার ঘরে একরাতে থাকলাম। দেখলাম, রাসুল (সা.) তার স্ত্রীর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললেন। এরপর শুয়ে পড়লেন। যখন রাতের তৃতীয় প্রহর হলো। তিনি উঠে বসলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে পাঠ করলেন, ‘নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আর্বতনে বহু নিদর্শন রয়েছে বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের জন্য।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯০)। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪,৫৬৯; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৬৩)
আল্লাহ-তাআলা বলেন, ‘তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর আমি তার দ্বারা বিভিন্ন রঙের ফলমূল উৎপন্ন করি। আর পাহাড়-পর্বতের মধ্যেও রয়েছে সাদা ও লাল অংশ, যেগুলোর বর্ণ ভিন্ন ভিন্ন এবং আছে গাঢ় কালো অংশ। এমনিভাবে মানুষ, পশু ও চতুষ্পদ প্রাণীও বিভিন্ন বর্ণের। আল্লাহকে তার বান্দাদের মধ্যে তারাই ভয় করে, যারা জ্ঞানী। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, অতি ক্ষমাশীল। (সুরা ফাতির, আয়াত: ২৭-২৮)
এই সব জড়জগৎ, উদ্ভিদজগৎ ও প্রাণিজগৎ স্রষ্টার এককত্ব, তার কুদরত ও মহত্ত্বের কথা স্পষ্ট করে দেয়। মুমিন বান্দা বৈচিত্র্যের মধ্য থেকে একক প্রতিপালককে দেখে। ভাবে বস্তুর এত রং-রূপ কেবল আল্লাহর কুদরতের ফলেই সম্ভব হয়েছে। প্রথমে সে দেখে, এরপর তা চিন্তা ও গবেষণায় রূপান্তরিত হয়। এবং সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টাকে খোঁজে। তার পরিচয় জানার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে পড়ে। পরিণতিতে তার অন্তরে খোদার ভয়ের সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুনপ্রতিবেশীকে কষ্ট দিলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না১৪ এপ্রিল ২০২৫এ কারণে ইসলাম আল্লাহর সৃষ্টিকুল নিয়ে চিন্তা-গবেষণাকে ইবাদত আখ্যায়িত করেছে।
ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, ‘জীবনের নিরীক্ষণ ছাড়া এমনিতেই জীবন কাটানোর কী অর্থ আছে? জীবনের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বলেন, তোমরা জীবন ও জীবের চলনে, স্থান ও কালে সবকিছুতেই আমার গুণাবলি ও উত্তম নাম গুলির পরিচয় লাভ করো। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত আমার বড়ত্ব কিছুই উপলব্ধি করতে পারবে না যদি আসমান ও জমিন সম্পর্কে এবং বিভিন্ন জাতি ও ব্যক্তির ওপর পরিচালিত আমার ক্ষমতা সম্পর্কে অন্ধ হয়ে থাকো।’
আল্লাহ-তাআলা তার কোরআনে চন্দ্র-সূর্য, দিন-রাত, অস্ত-উদয়, পিতা-পুত্র, এমনকি যা আমরা দেখিনি এবং দেখবও না এমনসব বস্তুর কসম খেয়েছেন। তিনি ঝোড়ো হাওয়া ও মৃদু বায়ুর এবং মুজাহিদদের ঘোড়ারও কসম খেয়েছেন; যে ঘোড়ার পায়ের খুরের নিচ থেকে সত্য-মিথ্যা প্রভেদকারী যুদ্ধের ময়দানে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বের হয়। যেন আমরা তার পরিচয় জানি, তার প্রদত্ত পরিবেশে জীবন কাটাই এবং বিভিন্ন জিনিস থেকে উপকৃত হই।
আল্লাহ বলেন, ‘আপনি বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখ, কীভাবে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন অতঃপর আল্লাহ পুণনসৃষ্টি করবেন?’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ২০)
নির্বোধ থাকার নাম ইমান নয় এবং অজ্ঞতাও কোনো সততা নয়। জীবনের যাবতীয় দক্ষতা, নিজ আয়ত্তে ও অধীনে থাকা সকল ক্ষমতাকে প্রতিপালকের সেবায় সমর্পণ করাই হলো ইমান ও সৎকর্ম। (আল-হাক্কু মুররুন, ইমাম গাজালি, প্রথম সংস্করণ ১৯৯০, প্রকাশক: আশ-শিরকাতুস সাউদিয়্যাতু লিল-আবহাসি ও ওয়ান নাশর)
সূত্র: মিন মায়িনিশ শামায়েল
অনুবাদ: মনযূরুল হক
আরও পড়ুনমন্দ প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের উপায়০৬ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ ত র পর চ ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।