১ বৈশাখ ১৪৩২ অর্থাৎ এ বছর ১৪ এপ্রিল পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে ১ হাজার ৪১৫টি নদীর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। বাংলা নতুন বছরে এটি নিঃসন্দেহে দারুণ খবর। এবারের বাংলা নববর্ষ নদীকর্মীদের জন্য নদীর সংখ্যা নির্ধারণী বছর।

নদী তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে সিএসসহ (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) অন্যান্য রেকর্ডকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশে ব্রিটিশরা যখন সিএস রেকর্ড প্রস্তুত করে, তখন যে এলাকায় যে প্রবাহকে যে নামে ডাকা হতো, সেই প্রবাহকে রেকর্ডে সেই নাম রাখা হয়েছে। যেমন নদী, খাল, খাঁড়ি, ছড়া, ডারা ইত্যাদি। নদীর মতোই প্রাকৃতিক প্রবাহ ভিন্ন নামে রেকর্ড হয়েছে। নদীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হলে খাল, খাঁড়ি, ডারা, ছড়াও অনেকটাই নদীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। বর্তমান সরকার খালেরও তালিকা করছে। সেহেতু বলা যায়, নদীর সরকারি সংজ্ঞা হলে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রাকৃতিক প্রবাহ হিসেবে নদীর সংখ্যা আরও বাড়বে।

নদীর একটি বড় তালিকা পাওয়া গেছে। এখন এই তালিকা ধরে নদী সুরক্ষার কাজ পর্যায়ক্রমে চলতে থাকলে আমাদের নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু করা নদী সুরক্ষার কাজ পরবর্তী সরকার এগিয়ে নেবে, এটাই প্রত্যাশা

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন প্রায় চার বছর সময় নিয়ে ২০২৩ সালে ১ হাজার ৮টি নদীর তালিকা প্রকাশ করেছিল। ডিসি-ইউএনওরা এই তালিকা সরবরাহ করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪০০ নদীর তথ্য মোটামুটিভাবে দেওয়া ছিল। এ তথ্যগুলো প্রধানত পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকাশিত বই থেকে নেওয়া। অন্য তথ্যগুলো অনেকটাই অসম্পূর্ণ ও ভুলে ভরা। বাস্তবে যে সংখ্যা দিয়েছিল, তারও পর্যাপ্ত তথ্য ছিল না। অন্য যেকোনো সময়ে নদীর তথ্য সংগ্রহ করার চেয়ে এবার ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। এবারের নদী অনুসন্ধানের কাজে নদীকর্মীদের যুক্ত করা হয়েছে। ফলে তাঁদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত নদীগুলো তালিকায় এসেছে।

নদ-নদীর এই সংখ্যা হাজির করা অবশ্যই আশাজাগানিয়া। তবে নদীর প্রকৃত সংখ্যা এটি নয়। সুন্দরবন ও পার্বত্য জেলাগুলোতে তালিকা চূড়ান্ত করা কঠিন। এর প্রধান কারণ, এখানে ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে না হওয়া। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ সংখ্যাকে চূড়ান্ত বলেননি। তিনিও বলেছেন নতুন নদীর তথ্য পাওয়া গেলে সেটিও যুক্ত হবে। সেই অনুসন্ধান চলতে থাকবে। 

নদীগুলোকে পরবর্তী ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নদীর প্রস্থের চেয়ে ছোট যেন সেতু, কালভার্ট তৈরি না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। নদীসহ যেকোনো জলপ্রবাহ তথা জলাশয়ের জমি যাতে ব্যক্তির নামে লিখিত না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা জারি করতে হবে। কেউ সরকারের এসব জমি ব্যক্তির নামে লিখে দিলে, খাজনা-খারিজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

যে ১ হাজার ৪১৫টি নদী পাওয়া গেছে, সে বিষয়ে এখন সরকারকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। প্রাপ্ত নদীর মধ্যে মোট কতটি ভারত-বাংলাদেশ আন্তসীমান্ত নদী আছে, তা চিহ্নিত করা জরুরি। এরপর সব আন্তসীমান্ত নদী যাতে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন স্বীকৃত হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার নদীর ক্ষেত্রে সংখ্যা পরিবর্তন হলো কি না, দেখতে হবে।

নদীগুলোর অবস্থা অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস জরুরি। শ্রেণিবিশেষে নদীগুলোর কাজ করতে হবে। যে রকম শ্রেণি হতে পারে Ñআন্তসীমান্ত নদী (স্বীকৃত এবং স্বীকৃতির বাইরে), দখলে থাকা নদী, দূষিত থাকা নদী, উৎসমুখ বন্ধ হওয়া নদী, ব্যক্তির নামে জেলা প্রশাসন থেকে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে কবুলিয়ত দেওয়া নদী, অবৈধভাবে লিখিত হওয়া নদী, বিলের নামে লিজ হওয়া নদী, প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া নদী, প্রবাহ স্বাভাবিক থাকা নদী, মৌসুমি নদী, বারোমাসি নদী।

নদীগুলোর জন্য কাজের একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করতে হবে। স্বল্পমেয়াদি, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সবটুকু করে যেতে পারবে না। পরবর্তী যাঁরাই দায়িত্বে থাকবেন, তাঁরাই যেন কাজের ধারাবাহিকতায় নদী সুরক্ষায় নিয়োজিত থাকেন।

আরও পড়ুননদী রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের যা করা প্রয়োজন০২ জানুয়ারি ২০২৫

স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনায় নদীর শ্রেণীকরণ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, দূষণ মুক্তকরণ, অবৈধভাবে মালিকানা বাতিলের কাজ করতে হবে। নদীর মালিক যেহেতু আইনত ব্যক্তি হতে পারে না, তাই কোনো ব্যক্তির নামে অবৈধ মালিকানা, খারিজ, রেকর্ড কিংবা গেজেট হলে তা একটি পরিপত্র জারি করে বাতিল করতে হবে, প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। নয়তো নদী সুরক্ষার কাজ বাংলাদেশে কোনো দিন বৃহৎ পরিসরে করা যাবে না। স্বল্পমেয়াদি কাজে এটি সম্পন্ন করতে হবে।

আইন সংশোধন করা কিংবা পরিপত্র জারি করা, দুটিই সহজ কাজ। সদিচ্ছা থাকলেই হবে। এ কাজ ভূমি মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের কাজ হলেও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ও এখানে ভূমি রাখতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় নিশ্চিহ্ন হওয়া নদীতে প্রবাহ ফেরাতে হবে। নদীগুলোর ভাঙনরোধের কাজ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনায় যে কটি নদীকে দখল-দূষণ থেকে মুক্ত করা যাবে না, সে কটি নদীর কাজ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় নিতে হবে। আমাদের নদীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জলমহাল, বিল, হাওরসহ যে নিম্নাঞ্চল আছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে হবে। নদীর যে জমি ডিসিরা ব্যক্তির নামে কবুলিয়ত দিয়েছেন, সেগুলো এক নোটিশে বাতিল করতে হবে।

নদীগুলোকে পরবর্তী ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নদীর প্রস্থের চেয়ে ছোট যেন সেতু, কালভার্ট তৈরি না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। নদীসহ যেকোনো জলপ্রবাহ তথা জলাশয়ের জমি যাতে ব্যক্তির নামে লিখিত না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা জারি করতে হবে। কেউ সরকারের এসব জমি ব্যক্তির নামে লিখে দিলে, খাজনা-খারিজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

নদীর একটি বড় তালিকা পাওয়া গেছে। এখন এই তালিকা ধরে নদী সুরক্ষার কাজ পর্যায়ক্রমে চলতে থাকলে আমাদের নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু করা নদী সুরক্ষার কাজ পরবর্তী সরকার এগিয়ে নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

তুহিন ওয়াদুদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং নদী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক

[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নদ গ ল র নদ গ ল ক সরক র র ক জ করত পরবর ত নদ র স নদ র ত র জন য র কর ড আম দ র প রব হ র একট

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা পুরস্কার এবং লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডের আবেদন করুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ‘রাজ্জাক শামসুন নাহার গবেষণা পুরস্কার’ ও ‘রাজ্জাক শামসুন নাহার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ইন ফিজিক্স’ প্রদানের জন্য দেশের পদার্থবিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

কোন সালের জন্য পুরস্কার —

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালের গবেষণা কাজের জন্য এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।

পুরস্কার মল্যমান কত —

১. পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য পুরস্কার পাওয়া গবেষককে রাজ্জাক শামসুন নাহার গবেষণা পুরস্কার হিসেবে নগদ ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে।

২. পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে আজীবন অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একজন বিজ্ঞানী বা গবেষককে নগদ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের রাজ্জাক শামসুন নাহার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।

আবেদনের শেষ তারিখ —

আগ্রহী প্রার্থীদের আগামী ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) বরাবর আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।

আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে—

আবেদনকারীদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তিন কপি আবেদনপত্র, তিন প্রস্থ জীবনবৃত্তান্ত, তিন প্রস্থ গবেষণাকর্ম এবং তিন কপি ছবি আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

দরকারি তথ্য—

১. জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রকাশিত গবেষণাকর্ম পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবে।

২. যৌথ গবেষণা কাজের ক্ষেত্রে গবেষণা পুরস্কারের অর্থ সমান হারে বণ্টন করা হবে। এ ক্ষেত্রে সহযোগী গবেষক বা গবেষকের অনুমতি নিয়ে আবেদন করতে হবে।

৩. আবেদনকারী যে বছরের জন্য আবেদন করবেন পাবলিকেশন ওই বছরের হতে হবে।

৪. একই পাবলিকেশন দিয়ে পরবর্তী বছরের জন্য আবেদন করা যাবে না।

৫. কোন কারণে একজন প্রার্থী পুরস্কারের জন্য আবেদন করলে প্রার্থিতার স্বল্পতা বিবেচনা করে তাঁর আবেদন বিবেচনা করা হবে।

৬. পরীক্ষক তাঁর গবেষণা কাজের পুরস্কারের জন্য সুপারিশ না করলে তাঁকে পুরস্কারের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে না।

৭. পদার্থবিজ্ঞানে রাজ্জাক শামসুন নাহার গবেষণা পুরস্কার একবার প্রাপ্ত গবেষকও পরবর্তী সময়ে আবেদন করতে পারবেন।

৮. নতুন গবেষককে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

৯. যদি মানসম্মত গবেষণা কাজ না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে পূর্বের পুরস্কার পাওয়া গবেষকের নতুন গবেষণা কাজের পুরস্কারের জন্য পরীক্ষকের সুপারিশের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।

# আবেদন জমা দেওয়ার ঠিকানা: প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খুলনায় বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল, ভোলা সদরে কার্যক্রম স্থগিত
  • জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলো কেন
  • বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা পুরস্কার এবং লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডের আবেদন করুন
  • নোবিপ্রবিসাসের বর্ষসেরা সাংবাদিক রাইজিংবিডি ডটকমের শফিউল্লাহ
  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • ১০০ কোটির সম্পদ, স্বামীর প্রতারণা, ৪৭ বছর বয়সেই মারা যান এই নায়িকা
  • তানজানিয়ায় ‘সহিংস’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী সামিয়া
  • শিল্পের আয়নায় অতীতের ছবি