বাজারে খুলনার তরমুজ বেশি, চিনবেন কীভাবে
Published: 22nd, April 2025 GMT
গ্রীষ্মের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়ে রসালো ফল তরমুজের। এক মৌসুমে সারা দেশের বাজারে তরমুজ সরবরাহ হয় দুই ধাপে। প্রথম ধাপে বরিশাল, পটুয়াখালী ও সাতক্ষীরা অঞ্চল থেকে বেশি তরমুজ আসে। দ্বিতীয় ধাপে অর্থাৎ শেষ ভাগে বাজারে খুলনার তরমুজের সরবরাহ বাড়ে। খুলনা বিভাগের তরমুজ আকারে ছোট ও স্বাদ ভালো। আকারে ছোট হওয়ায় দামও থাকে ক্রেতাদের হাতের নাগালে। এখন চলছে খুলনার তরমুজের সময়। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, আকারে ছোট ও স্বাদ ভালো হওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে এখন খুলনার তরমুজের চাহিদা বেশি।
খুলনা বিভাগের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছরে খুলনা বিভাগে মোট ১৭ হাজার ২৯১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়, যা গত বছরের তুলনায় ৪ হাজার ৩২৬ হেক্টর বেশি। চলতি বছরে খুলনা বিভাগে তরমুজের সম্ভাব্য ফলন ধরা হয় ৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৪০ টন। যার সম্ভাব্য বাজারমূল্য ৯০০ কোটি টাকা।
কীভাবে চিনবেন খুলনার তরমুজ
খুলনা এলাকার তরমুজচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুলনার তরমুজ চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে এদের আকার ছোট। আকারে ছোট হলেও খুলনার তরমুজ অন্যান্য এলাকার তরমুজের তুলনায় ওজন কিছুটা বেশি হয়। খুলনার ছোট সাইজের তরমুজের ওজন হয় ৩ থেকে ৬ কেজি; আর বড় সাইজের তরমুজের ওজন হয় ৬ থেকে ১১ কেজি।
এই এলাকার তরমুজের ভেতরের অংশ বেশি লালচে হয়। আর দানার সংখ্যাও বেশি হয়। চাষিরা বলেছেন, খুলনার পাকা তরমুজ চেনার উপায় কানের কাছে তরমুজ নিয়ে দুই হাতে চাপ দিলে একধরনের শব্দ শোনা যায়।
এ ছাড়া পাকা তরমুজ পরিপক্ব হলে ওই তরমুজের ফুলের অংশ অতি ছোট হয়ে যাবে অথবা কিছুটা ধূসর বর্ণের হয়ে যাবে। এ ছাড়া তরমুজের পেটের অংশে হালকা হলুদ বর্ণ আসবে।
খুলনার তরমুজের ফলন ভালো
এপ্রিল-মে মাসে তরমুজের মৌসুম হলেও এবার রোজার শুরু থেকেই ঢাকার বাজারে তরমুজের সরবরাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। তরমুজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর শীত কম থাকায় বেশি ফলন হয়েছে। পাশাপাশি গরম ও বৃষ্টি কম হওয়ায় তরমুজের স্বাদও তুলনামূলক আগের বছরের তুলনায় ভালো বলে জানান বিক্রেতারা। তবে বর্তমানে রাজধানীর বাজারে আসা তরমুজ বেশির ভাগই খুলনা অঞ্চলের। তবে মোট উৎপাদিত তরমুজের প্রায় অর্ধেকই আসে বরিশাল অঞ্চল থেকে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন বলেছেন, এত দিন বরিশাল, পটুয়াখালী ও সাতক্ষীরা থেকে তরমুজ এলেও এখন বেশি আসছে খুলনা থেকে। খুলনার তরমুজের আকারে ছোট ও স্বাদ ভালো, তাই চাহিদাও বেশি। এবার তরমুজের বেচাকেনা আগের বছরের তুলনায় ভালো।
দাকোপ উপজেলার বাজুয়া ইউনিয়নের তরমুজচাষি মুরারী মোহন প্রথম আলোকে বলেন, এবার ফলনকালে বৃষ্টি কম হওয়ায় তরমুজ চাষ ভালো হয়েছে। তবে পানিস্বল্পতার কারণে সেচপ্রক্রিয়ায় কিছুটা বাধা হয়েছে। প্রতি বিঘা তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়। তিনি বলেন, এখনো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ তরমুজ মাঠে আছে। বিশেষ করে নিচু জায়গায় যাঁরা ফেব্রুয়ারির শুরুতে বীজ রোপণ করেছেন, তাঁদের তরমুজ এখনো ওঠানো হয়নি। আরও ১৫-২০ দিন পর্যন্ত এই তরমুজ বাজারে পাওয়া যাবে।
খুলনার তরমুজের বাহারি নাম
খুলনার তরমুজের বাহারি নাম আছে। খুলনা অঞ্চলে বিগ ফ্যামিলি, বিগ পাঞ্জা, পাকিজা, বিগ পাকিজা, এশিয়ান ২, সাকুরা, সুইট ড্রাগন, জাম্বু জাগুয়ার, ওয়ার্ল্ড কুইন, আস্থা, মালিক-১, এশিয়া সুপার, থাই রেড কিং, বাংলালিংক ও বিগ সুপার কিং জাতের তরমুজের বেশি চাষ হয়। তরমুজের গাছ লাগানোর পর পরিপক্ব ফল পেতে ৬৫ থেকে ৭০ দিন পর সময় লাগে। তরমুজ যত পরিপক্ব হয়, তার ভেতরের বীজগুলো তত বেশি কালো হয়।
আকারে ছোট, চাহিদা বেশি
সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, বড় তরমুজ প্রতি কেজি দাম চাওয়া হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। আবার কোথাও আকারভেদে ছোট আকারের ৩-৪ কেজি ওজনের আস্ত তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দামে। তবে গরমকে কেন্দ্র করে তরমুজের বাজারে ক্রেতাসমাগম বেশ চোখে পড়ার মতো। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, এখন গরম পড়তে শুরু করেছে, তাই বিক্রি একটু বেশি। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী কাইয়ুম ইসলাম বলেন, খুলনার তরমুজ আকারে ছোট হওয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারের চাহিদা বেশি। ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে একজন ক্রেতা এই ছোট আকারের তরমুজ পেয়ে যাচ্ছেন। তাই ছোট আকারের তরমুজের বিক্রি বেশি হয়।
কারওয়ান বাজারে কথা হয় পূর্ব নয়াটোলার বাসিন্দা রাইমুল ইসলামের সঙ্গে। ছোট আকারের ১১ কেজির তিনটি তরমুজ ৫০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন ৫৫০ টাকা দিয়ে। তিনি বলেন, ছোট আকারের তরমুজের দাম কিছুটা কম হলেও বড় আকারের তরমুজের বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে।
ছোট আকারের তরমুজ ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন তরমুজ ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম। সরবরাহ বেশি থাকায় তরমুজের দাম কম মনে করেন তিনি।
রাজধানীর তেজকুনি পাড়ার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী ফারুক হোসেন বলেন, পাড়ামহল্লায় ছোট আকারের তরমুজ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। কারওয়ান বাজারে দাম কিছুটা কম, তাই এখানে এসেছি। তিনি ৪ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের একটি তরমুজ ৪৫ টাকা কেজি দরে ১৭০ টাকায় কিনেছেন।
কোন এলাকায় কত চাষ হয়
খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় দক্ষিণের উপজেলা দাকোপে। সর্বমোট ৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয় এই উপজেলায়। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে খুলনার কয়রা উপজেলা। এখানে ৪ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ফলন হয়। এ ছাড়া বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া এলাকায় তরমুজের ফলন ভালো।
খুলনা বিভাগের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এবার ফলন ভালো হয়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় চাষের জমি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফলনের পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া ২০টি ছোট পুকুর ও বর্ষা মৌসুমের শেষে খালের মুখ বেঁধে দিয়ে তরমুজের চাষের জমিতে সেচের কাজ চালানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রওয় ন ব জ র র তরম জ র ব তরম জ র স ব যবস য় তরম জ ব তরম জ চ য় তরম জ সরবর হ ৫০ ট ক চ ষ হয় র ফলন হওয় য় ইসল ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম
ঈদের বন্ধের আমেজ কাটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো। ক্রেতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে বেড়েছে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। পেঁয়াজ, রসুন ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও নিম্নমুখী।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর নগরের কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায়। ফলে দাম ছিল কিছুটা বাড়তি। গত রোববার ও সোমবারের দিকে নগরের আড়তগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। অধিকাংশ সবজির দামও ৪০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে গত মঙ্গলবার থেকে আবারও বাজারে পুরোদমে সবজির সরবরাহ শুরু হয়েছে। যার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।
আজ শুক্রবার নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি আড়তে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে। বেশির ভাগ সবজির দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে খুচরা বাজারগুলোতে প্রায় দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা যায়। নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, সাব এরিয়া ও কাজির দেউড়ি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ টাকার বেশি। লাউ, মিষ্টিকুমড়া ও ফুলকপির দাম কিছুটা কম। এসব সবজির দাম ৫০ টাকার আশপাশে। খুচরা বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। পরিবহন খরচ ও আগে কেনার অজুহাতে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার নুরুল ইসলাম বলেন, বাজারে সব সবজির দাম কম। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। আড়তের দামের দ্বিগুণ দামে তাঁরা সবজি বিক্রি করছেন।
সবজির বাজারের পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন ও চালের দামও নিম্নমুখী। খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে আজ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫২ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। অন্যদিকে রসুনের কেজি আড়তে ছিল ৮৫ থেকে ১১০ টাকা। খুচরায় সেটি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।
পাহাড়তলী চালের আড়তে মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে জিরাশাইল ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত তিন দিন আগ থেকে চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম কমেছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের সরবরাহ যথেষ্ট আছে। চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই এখন।