গ্রীষ্মের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়ে রসালো ফল তরমুজের। এক মৌসুমে সারা দেশের বাজারে তরমুজ সরবরাহ হয় দুই ধাপে। প্রথম ধাপে বরিশাল, পটুয়াখালী ও সাতক্ষীরা অঞ্চল থেকে বেশি তরমুজ আসে। দ্বিতীয় ধাপে অর্থাৎ শেষ ভাগে বাজারে খুলনার তরমুজের সরবরাহ বাড়ে। খুলনা বিভাগের তরমুজ আকারে ছোট ও স্বাদ ভালো। আকারে ছোট হওয়ায় দামও থাকে ক্রেতাদের হাতের নাগালে। এখন চলছে খুলনার তরমুজের সময়। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, আকারে ছোট ও স্বাদ ভালো হওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে এখন খুলনার তরমুজের চাহিদা বেশি।

খুলনা বিভাগের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছরে খুলনা বিভাগে মোট ১৭ হাজার ২৯১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়, যা গত বছরের তুলনায় ৪ হাজার ৩২৬ হেক্টর বেশি। চলতি বছরে খুলনা বিভাগে তরমুজের সম্ভাব্য ফলন ধরা হয় ৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৪০ টন। যার সম্ভাব্য বাজারমূল্য ৯০০ কোটি টাকা।

কীভাবে চিনবেন খুলনার তরমুজ

খুলনা এলাকার তরমুজচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুলনার তরমুজ চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে এদের আকার ছোট। আকারে ছোট হলেও খুলনার তরমুজ অন্যান্য এলাকার তরমুজের তুলনায় ওজন কিছুটা বেশি হয়। খুলনার ছোট সাইজের তরমুজের ওজন হয় ৩ থেকে ৬ কেজি; আর বড় সাইজের তরমুজের ওজন হয় ৬ থেকে ১১ কেজি।

এই এলাকার তরমুজের ভেতরের অংশ বেশি লালচে হয়। আর দানার সংখ্যাও বেশি হয়। চাষিরা বলেছেন, খুলনার পাকা তরমুজ চেনার উপায় কানের কাছে তরমুজ নিয়ে দুই হাতে চাপ দিলে একধরনের শব্দ শোনা যায়।

এ ছাড়া পাকা তরমুজ পরিপক্ব হলে ওই তরমুজের ফুলের অংশ অতি ছোট হয়ে যাবে অথবা কিছুটা ধূসর বর্ণের হয়ে যাবে। এ ছাড়া তরমুজের পেটের অংশে হালকা হলুদ বর্ণ আসবে।

খুলনার তরমুজের ফলন ভালো

এপ্রিল-মে মাসে তরমুজের মৌসুম হলেও এবার রোজার শুরু থেকেই ঢাকার বাজারে তরমুজের সরবরাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। তরমুজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর শীত কম থাকায় বেশি ফলন হয়েছে। পাশাপাশি গরম ও বৃষ্টি কম হওয়ায় তরমুজের স্বাদও তুলনামূলক আগের বছরের তুলনায় ভালো বলে জানান বিক্রেতারা। তবে বর্তমানে রাজধানীর বাজারে আসা তরমুজ বেশির ভাগই খুলনা অঞ্চলের। তবে মোট উৎপাদিত তরমুজের প্রায় অর্ধেকই আসে বরিশাল অঞ্চল থেকে।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন বলেছেন, এত দিন বরিশাল, পটুয়াখালী ও সাতক্ষীরা থেকে তরমুজ এলেও এখন বেশি আসছে খুলনা থেকে। খুলনার তরমুজের আকারে ছোট ও স্বাদ ভালো, তাই চাহিদাও বেশি। এবার তরমুজের বেচাকেনা আগের বছরের তুলনায় ভালো।

দাকোপ উপজেলার বাজুয়া ইউনিয়নের তরমুজচাষি মুরারী মোহন প্রথম আলোকে বলেন, এবার ফলনকালে বৃষ্টি কম হওয়ায় তরমুজ চাষ ভালো হয়েছে। তবে পানিস্বল্পতার কারণে সেচপ্রক্রিয়ায় কিছুটা বাধা হয়েছে। প্রতি বিঘা তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়। তিনি বলেন, এখনো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ তরমুজ মাঠে আছে। বিশেষ করে নিচু জায়গায় যাঁরা ফেব্রুয়ারির শুরুতে বীজ রোপণ করেছেন, তাঁদের তরমুজ এখনো ওঠানো হয়নি। আরও ১৫-২০ দিন পর্যন্ত এই তরমুজ বাজারে পাওয়া যাবে।

খুলনার তরমুজের বাহারি নাম

খুলনার তরমুজের বাহারি নাম আছে। খুলনা অঞ্চলে বিগ ফ্যামিলি, বিগ পাঞ্জা, পাকিজা, বিগ পাকিজা, এশিয়ান ২, সাকুরা, সুইট ড্রাগন, জাম্বু জাগুয়ার, ওয়ার্ল্ড কুইন, আস্থা, মালিক-১, এশিয়া সুপার, থাই রেড কিং, বাংলালিংক ও বিগ সুপার কিং জাতের তরমুজের বেশি চাষ হয়। তরমুজের গাছ লাগানোর পর পরিপক্ব ফল পেতে ৬৫ থেকে ৭০ দিন পর সময় লাগে। তরমুজ যত পরিপক্ব হয়, তার ভেতরের বীজগুলো তত বেশি কালো হয়।

আকারে ছোট, চাহিদা বেশি

সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, বড় তরমুজ প্রতি কেজি দাম চাওয়া হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। আবার কোথাও আকারভেদে ছোট আকারের ৩-৪ কেজি ওজনের আস্ত তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দামে। তবে গরমকে কেন্দ্র করে তরমুজের বাজারে ক্রেতাসমাগম বেশ চোখে পড়ার মতো। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, এখন গরম পড়তে শুরু করেছে, তাই বিক্রি একটু বেশি। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী কাইয়ুম ইসলাম বলেন, খুলনার তরমুজ আকারে ছোট হওয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারের চাহিদা বেশি। ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে একজন ক্রেতা এই ছোট আকারের তরমুজ পেয়ে যাচ্ছেন। তাই ছোট আকারের তরমুজের বিক্রি বেশি হয়।

কারওয়ান বাজারে কথা হয় পূর্ব নয়াটোলার বাসিন্দা রাইমুল ইসলামের সঙ্গে। ছোট আকারের ১১ কেজির তিনটি তরমুজ ৫০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন ৫৫০ টাকা দিয়ে। তিনি বলেন, ছোট আকারের তরমুজের দাম কিছুটা কম হলেও বড় আকারের তরমুজের বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে।

ছোট আকারের তরমুজ ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন তরমুজ ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম। সরবরাহ বেশি থাকায় তরমুজের দাম কম মনে করেন তিনি।

রাজধানীর তেজকুনি পাড়ার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী ফারুক হোসেন বলেন, পাড়ামহল্লায় ছোট আকারের তরমুজ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। কারওয়ান বাজারে দাম কিছুটা কম, তাই এখানে এসেছি। তিনি ৪ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের একটি তরমুজ ৪৫ টাকা কেজি দরে ১৭০ টাকায় কিনেছেন।

কোন এলাকায় কত চাষ হয়

খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় দক্ষিণের উপজেলা দাকোপে। সর্বমোট ৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয় এই উপজেলায়। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে খুলনার কয়রা উপজেলা। এখানে ৪ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ফলন হয়। এ ছাড়া বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া এলাকায় তরমুজের ফলন ভালো।

খুলনা বিভাগের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এবার ফলন ভালো হয়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় চাষের জমি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফলনের পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া ২০টি ছোট পুকুর ও বর্ষা মৌসুমের শেষে খালের মুখ বেঁধে দিয়ে তরমুজের চাষের জমিতে সেচের কাজ চালানো হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক রওয় ন ব জ র র তরম জ র ব তরম জ র স ব যবস য় তরম জ ব তরম জ চ য় তরম জ সরবর হ ৫০ ট ক চ ষ হয় র ফলন হওয় য় ইসল ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ

ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।

বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’

এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’

জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আদানির সঙ্গে চুক্তি ক‌রে শুল্ক ফাঁকি
  • শিল্প খাতের উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়
  • কারাগারে গাঁজা সরবরাহ করতে গিয়ে নিজেই কারাগারে
  • ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা কী
  • ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ নেই, ৯০ কারখানায় ছুটি
  • মঙ্গলবার ৭ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব জায়গায়
  • পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত
  • পর্তুগাল ও স্পেনে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয়, পর্যুদস্তু জনজীবন
  • হাসপাতালে ডায়রিয়ার প্রকোপ শয্যা ও স্যালাইন সংকট
  • বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ