আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনীতি কার্যক্রম নিষিদ্ধ, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বৃহত্তর তেজগাঁও ও শেরেবাংলা নগর জোন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফার্মগেটে মিছিলটি হয়।

এর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দীন সিফাত, মুশফিক উস সালেহীন, জয়নাল আবেদীন শিশির, মুশফিকুর রহমান জোহান, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাঈদ লিওন প্রমুখ। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, আওয়ামী লীগকে আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরতে দেওয়া হবে না। এটি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। অবিলম্বে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।

যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন বলেন, ইনিয়ে বিনিয়ে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে আবার আনার সুযোগ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো সংস্থার দুরভিসন্ধি দ্বারা খুনি-সন্ত্রাসীদের রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। এটা খুনি মাফিয়াদের দল। তাদের দল হিসেবে বিচার করতে হবে। 

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে অন্য কোনো দলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যেন ফ্যাসিবাদ না আসে, সে জন্য আমরা সংস্কারের কথা বলেছি। শেখ হাসিনার মতো এক ব্যক্তির হাতে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার চেষ্টা আমরা চাই না। আমরা সুস্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই– দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।

সালেহ উদ্দীন সিফাত বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের বিচারের পাশাপাশি গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানাই। আমরা শুরু থেকে বলছি, আমরা গণপরিষদ নির্বাচন চাই। যারা বলছে, আমরা সাধারণ নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে চাচ্ছি, তারা মূলত গণপরিষদ নির্বাচনের পক্ষে না দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রম পিছিয়ে দিতে চাচ্ছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ এনস প র জন ত আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে