খুলনায় মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্র হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর শেখ পরিবারের আস্থাভাজন ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুর ইসলাম তুহিনকে কারাগারে প্রেরণ করায় এলাকায় বৃষ্টি বিতরণ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিনের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। 

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) গুটুদিয়ায় বিক্ষোভ করে মিষ্টি বিতরণ করেন চেয়ারম্যানের কাছে নির্যাতিতরা। 

এর আগে খুলনা মহানগর শাখা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলায় ১৭ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) আদালতে আত্মসর্মপন করে জামিন চাইলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে  চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তিনি কারাগারে থাকায় ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার নির্দেশনা চেয়ে ইউপির প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমদাদুল হক রোববার (২০ এপ্রিল) উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট চিঠি দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের ছাত্র-জনতার বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকা গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিন সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান। 

২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর বিএনপি খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলার ৪৬ নম্বর আসামি তিনি। 

তার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর আন্তজার্তিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ছাত্রদল কর্মী রকিবুল হাসানকে হত্যার অভিযোগে তার পিতা রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার ১৫৬ নম্বর আসামি তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ হোসেন মোল্লা হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি তুহিন।

এসব মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে অর্ন্তবর্তীকালীন জামিনে ছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ১৭ এপ্রিল আদালতে আত্মসর্মপন করে জামিন চাইলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কারাগারে থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো.

এমদাদুল হক রোববার (২০ এপ্রিল) ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর চিঠি লিখেছেন। ওই চিঠিতে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ইতোপূর্বে নির্বাচিত তিনজন প্যানেল চেয়ারম্যানের নামও উল্লেখ করেছেন ওই পত্রে।

এলাকাবাসীর দাবি, প্যানেল চেয়ারম্যানরা চেয়ারম্যান তুহিনের আজ্ঞাবহ। তারা যদি দায়িত্ব পায় তবে অদৃশ্যভাবে তুহিনের হাতেই থেকে যাবে ক্ষমতা। তাই গুটুদিয়া ইউনিয়নে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন বলেন, “গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান করাগারে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যদি প্যানেল চেয়ারম্যানদের নিয়ে কোনো আপত্তি না থাকে তবে তাদের মধ্য থেকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এতে জটিলতা হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সম্বয়ক ও খুলনা জেলার সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, “শুধু গুটুদিয়ার চেয়ারম্যান নয়, খুলনায় বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৪০টা ইউনিয়নে এখনও পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর ও খুনি-সন্ত্রাসীরা চেয়ারম্যান হিসাবে বসে আছেন। আমরা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের বারবার এবিষয়ে সতর্ক করতেছি। তারা আমাদের কথা শুনছে না। তারা এলাকার মানুষের কথায় কোনোরূপ কর্নপাত করছেন না। জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের অভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী এরূপ কার্যক্রমে আমরা চরমভাবে উদ্বিগ্ন।”   

কে এই তুহিন
ঢাকায় বিমান বন্দরে চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা কর্মীর কাজ করতেন এই তুহিন। সেখানে নারী পাচারের সাথে যুক্ত হওয়ায় চাকরি যায় তার। খুলনা মহানগীর শেরেবাংলা রোডের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো পাঁচ ভাইয়ের বাড়ি শেখ বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ক্রমান্বয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন তুহিন। 

শেখ হেলাল, শেখ জুয়েল, শেখ সোহেল, শেখ রুবেল ও শেখ বেলালের ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা কাজী কামালের সাথে বন্ধুত্ব করেন গুটুদিয়াসহ খুলনার আশপাশের এলাকায়। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জুলুমের শিকার ওই এলাকার মানুষ। ওয়ারেস কাম সার্টিফিকেটের জন্য ঘুষ, জমি-খাল দখল, চাঁদাবাজি, বালু ও জমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় আর সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। 

সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ঘনিষ্ঠ সহচর ও অনুসারী এবং শেখ বাড়ির আত্মীয় পরিচয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তুহিন। ডুমুরিয়ার বাসিন্দা না হয়েও ভোটার হয়ে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ খুলনা জেলার সহ-সভাপতি তুহিন ২০২১ সালে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হন। 

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিটিং মিছিলে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। চেয়ারম্যান তুহিন টিআর, কাবিখা, জিআর, কাবিটা, ভিজিডি, এডিবি, এলজিএসপি, ইউপি ট্যাক্স নিজের মতো করে চালাতেন। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ফি নিজের খেয়ালখুশি মতো আদায় করতেন। ষড়যন্ত্র করে মানুষকে বিপদে ফেলে টাকা আদায় করতেন। 

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন কেউ তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১১ নং ইউপি সদস্য মো. ইজ্জত আলী মোড়ল চেয়ারম্যান তুহিনের এসব অপকর্মের সহযোগী ছিলেন।

ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসল ম ত হ ন ল ইসল ম উপজ ল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ