দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার বেলা ১১টায় কলেজ ক্যাম্পাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল মঙ্গলবার কলেজ এবং ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পর শিক্ষার্থীরা ওয়ার্ড সেবা ও হাসপাতাল চালু—এই দুই দাবির বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য এবং কিছু ক্ষেত্রে সমাধান পেয়েছেন। যেসব দাবি তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য নয়, সেসবের জন্য রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে। এতে আশ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আরও পড়ুনসুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ: আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বৈঠক, দ্রুত দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস২২ ঘণ্টা আগে

তবে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা সতর্ক করে বলেন, হাসপাতাল চালুর রোডম্যাপ বাস্তবায়নে গড়িমসি বা ওয়ার্ড সেবা নিয়মিত না হলে তাঁরা আবারও আন্দোলনে যাবেন। শিক্ষার্থীরা তাঁদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য সাধারণ জনগণ, মেডিকেল কমিউনিটি ও গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান।

১৫ এপ্রিল থেকে কলেজে হাসপাতালের কার্যক্রম চালু, পর্যাপ্ত ক্লিনিক্যাল ক্লাসের (হাতে–কলমে শিক্ষা) ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদান, এমনকি সুনামগঞ্জ-সিলেট মড়াসড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করেন। সর্বশেষ গত সোমবার তাঁরা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন।

আরও পড়ুনসুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে কেন, কী কারণে আন্দোলন২২ এপ্রিল ২০২৫

গতকাল মঙ্গলবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে। একই দিনে সুনামগঞ্জ ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্য বিভাগ ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পৃথক বৈঠক হয়। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাসের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে সেখানে পদায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাঁরা এক সপ্তাহের মধ্যে যোগ দেবেন। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থাও করা হবে। নতুন হাসপাতাল চালুর বিষয়ে দ্রুত অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করতে গণপূর্ত বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে হাসপাতালের কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়।

কলেজের অধ্যক্ষ মুস্তাক আহমেদ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। তাঁদের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা এখন ক্লাসে ফিরবেন।

আরও পড়ুনসুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা২১ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কল জ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

টানা তিন মাস কমল দেশের পণ্য রপ্তানি

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই উৎসের একটি পণ্য রপ্তানি স্বস্তিতে নেই। টানা তিন মাস ধরে দেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে। গত মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৮২ কোটি ডলারের পণ্য। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তারপরের দুই মাস, অর্থাৎ আগস্টে ২ দশমিক ৯৩ এবং সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। তাতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবরে) সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অথচ বিদায়ী অর্থবছর পণ্য রপ্তানি বেড়েছিল সাড়ে ৮ শতাংশ।

পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান আজ সোমবার প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ১ হাজার ৬১৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত অক্টোবরে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি কমেছে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, চামড়াবিহীন জুতা ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। মূলত তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৮ শতাংশ কমে যাওয়ায় সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে।

দেশের মোট রপ্তানি ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক। টানা তিন মাস ধরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলেও অর্থবছরের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। গত জুলাইয়ে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। পরের মাসে রপ্তানি কমে পৌনে ৫ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে কমেছিল প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ। গত মাসে, অর্থাৎ অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৩০২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এই রপ্তানি গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ৮ শতাংশ কম।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ২৮১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।

দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি খাত বর্তমানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত ইতিবাচক ধারায় আছে এই খাতের রপ্তানি। গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪১ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।

পণ্য রপ্তানিতে তৃতীয় শীর্ষ খাত কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ৩৮ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় পৌনে ২ শতাংশ কম। শুধু গত মাসে ১০ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৯ শতাংশ।

এদিকে চতুর্থ শীর্ষ রপ্তানি খাত হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি গত মাসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ। যদিও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমেছিল দশমিক ৫৪ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ২৮ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৯ শতাংশ বেশি।

দেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি এখনো ইতিবাচক ধারায় আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। শুধু গত মাসে ৮ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ