নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম পশুর হাট হিসেবে পরিচিতি রয়েছে হাতিয়ার হরনী ইউনিয়নে অবস্থিত হাতিয়া বাজারের। প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার এখানে আশপাশের ব্যাপারী ও কৃষকরা গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন।
বৃহত্তর নোয়াখালীর বাইরেও চট্টগ্রাম-কুমিল্লার ক্রেতারাও আসেন এখানে। সরকারের হাটবাজারের তালিকায় এ হাটের ইজারার বার্ষিক দরও উঠেছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। এরই মধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে মঙ্গলবার থেকে বসানো হয়েছে আরেকটি অনুমোদনহীন হাট। এ নিয়ে স্বার্থের সংঘাতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আশঙ্কা দেখছেন এলাকাবাসী।
নতুন হাটটি বসানো হয়েছে পাশের সুবর্ণচর উপজেলার ভূঁইয়ারহাট বাজারে। মঙ্গলবার হাতিয়া হাটে আসা কিছু পশু ব্যবসায়ীকে ওই বাজারের লোকজন সেখানে বিক্রির জন্য চাপ প্রয়োগ ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। এমন অভিযোগ করেছেন হাতিয়া বাজারের ইজারাদার আমিরুল ইসলাম মতিন। একই রকম তথ্য দিয়েছেন কয়েকজন
পশু ব্যবসায়ীও।
আমিরুল ইসলাম মতিনের ভাষ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকায় হাতিয়া পশুর হাটের ইজারা নিয়েছেন। আশপাশে কোনো পশুর হাট ছিল না। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভূঁইয়ারহাট বাজারের লোকজন সেখানে অনুমোদনহীন হাট বসিয়েছেন। এমনকি হাতিয়া হাটে আসা ব্যাপারীদের সেখানে পশু বিক্রিতেও বাধ্য করছেন। ইজারাদার হিসেবে তিনি বিপুল টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
হাতিয়া বাজারে দীর্ঘদিন ধরে গরু নিয়ে আসা নাসির উদ্দিনের ভাষ্য, তিনি নোয়াখালী সদরের দত্তেরহাট এলাকার বাসিন্দা। মঙ্গলবার হাতিয়া বাজারে আসার সময় রাস্তার ওপর থামিয়ে দেয়। তারা ভূঁইয়ারহাটে গরু বিক্রি করতে চাপ দেন।
এ বিষয়ে ভূঁইয়ারহাট বাজারের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী অলি উদ্দিন সওদাগরের দাবি, এ বছর বাজারটি ইজারা নিয়েছেন রাবিয়া খাতুন রুবি। ২০০৮ থেকে কোরবানির ঈদ ছাড়া এখানে গরু-ছাগল তেমন বিক্রি হয় না। ভূঁইয়ারহাট ও হাতিয়া বাজার একই দিনে বসায় তাদের বাজারে গরু উঠত না। তারা ব্যাপারীদের বুঝিয়ে বাজারে গরু-ছাগল উঠানোর চেষ্টা করছেন।
সুবর্ণচরের ইউএনও রাবেয়া আফসার সায়মা বলেন, ইজারাদার আমিরুল ইসলাম জেলা প্রশাসক বরাবর যে অভিযোগ দিয়েছেন তা পেয়েছেন। বুধবার বিকেলে দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছিলেন। উভয় পক্ষকে বাজারের দিনক্ষণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ দিয়েছেন; সংযম প্রদর্শন করতে বলেছেন।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?