পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় কাশ্মীরের সমৃদ্ধ পর্যটন খাত ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। শ্রীনগর থেকে ৯২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চারপাশের এই মনোরম দৃশ্য মঙ্গলবার বিকেলে নৃশংস হামলায় রক্তাক্তে পরিণত হয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা বন্দুক নিয়ে নেমে আসে এবং সৌন্দর্যের এ স্থানকে সন্ত্রাসে কালিমালিপ্ত করে।

হামলার পরপরই পহেলগাম মরুভূমির চেহারা ধারণ করে। পর্যটকরা এমনভাবে দৌড়াচ্ছিল যেন তারা একটি ডুবন্ত জাহাজ ছেড়ে আসছিল। তারা তাড়াহুড়া করে রাস্তা ত্যাগ করছিল। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ শুরু হয়, যা কয়েক ঘণ্টা আগেও একটি ব্যস্ত পাহাড়ি এলাকা ছিল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া হামলার মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ। এই কেন্দ্র উপত্যকাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর এবং বিশ্বখ্যাত গন্তব্যস্থলগুলোর মধ্যে একটি। এখানেই হামলা হয়েছে, যা কাশ্মীরের ক্রমবর্ধমান পর্যটন খাতের ওপর কালো ছায়া ফেলেছে। পহেলগামে হামলা কাশ্মীরের ভঙ্গুর অর্থনীতিতে এক বিরাট আঘাত হতে পারে। এতে অঞ্চলটির পর্যটন খাতে বছরের পর বছর ধরে কাঙ্ক্ষিত সম্ভাবনা ভেস্তে যেতে পারে। যারা ঋণ নিয়েছিলেন বা গহনা ও জমির মতো ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রি করে এই শিল্পে বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা এখন ব্যাপক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। এক সময়ের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতীক ছিলেন হোটেল মালিক, শিকারা রাইডার ও বিক্রেতারা। তারাই এ অঞ্চলের ব্যাপারে সরকার কর্তৃক প্রচারিত অনুল্লেখযোগ্যের গল্প ভেঙে দিচ্ছেন। পর্যটক হ্রাস এবং ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে তাদের লড়াই করতে হতে পারে। 

জম্মু ও কাশ্মীরের অর্থনীতিতে পর্যটন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ অঞ্চলের জিডিপিতে খাতটির অবদান ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ হামলায় কেবল পর্যটকদের প্রাণহানিই ঘটেনি, বরং ছবির মতো সুন্দর অঞ্চলকে নিরাপদ ও দর্শনীয় গন্তব্য হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বছরের পর বছর ধরে চলা প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হওয়ার হুমকিতে ফেলেছে। হামলার আগে কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্রটির উত্থান পূর্ণরূপে প্রকাশ পেয়েছিল। সরকারি তথ্য অনুসারে, ২৬ মার্চ উদ্বোধনের পর ২৬ দিনে শ্রীনগরের টিউলিপ গার্ডেনে ৮ লাখ ১৪ হাজার দর্শনার্থী ভিড় করেছিলেন।

এখানেই এশিয়ার বৃহত্তম টিউলিপ বাগান। এটি অত্যাশ্চর্য ডাল লেক পটভূমিতে অবস্থিত, যা ৩ হাজারেরও বেশি আন্তর্জাতিক পর্যটককে আকৃষ্ট করেছিল। দর্শনার্থীদের আগমন এ অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান পর্যটনশিল্পকে তুলে ধরে, যা শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে এবং একটি সমৃদ্ধ মৌসুমের জন্য প্রস্তুত ছিল। সরকারি তথ্যমতে, গত বছর প্রায় ৩০ লাখ পর্যটক কাশ্মীরে এসেছিলেন। ২০২৪ সালে মোট পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ৯৫ হাজার, যা ২০২৩ সালে ২০ লাখ ৭১ হাজার এবং ২০২২ সালে ২০ লাখ ৬৭ হাজারের চেয়ে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। একইভাবে ২০২৩ সালে ৩৭ হাজার বিদেশি পর্যটক আসার তুলনায় ২০২৪ সালে তা ৪৩ হাজারে উত্তীর্ণ হয়েছিল।

উল্লেখ্য, কাশ্মীর উপত্যকাকে ‘পৃথিবীর স্বর্গ’ বলা হয়।  এই হামলা এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন সরকার যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর নাগরিকদের জম্মু ও কাশ্মীরে ‘সব ধরনের ভ্রমণ এড়িয়ে চলা’র দীর্ঘদিনের নেতিবাচক পরামর্শ তুলে নিতে জোরালো আহ্বান জানিয়েছিল। কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, এ পরামর্শ দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে; বিদেশি পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করছে এবং ভ্রমণ বীমা না থাকার কারণে প্রায়ই ভ্রমণ বাতিলের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে কেন্দ্র এবং জম্মু ও কাশ্মীর সরকার উভয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার ইঙ্গিত দিতে এ অঞ্চলকে পর্যটনবান্ধব কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। যেমন এ বছরের জানুয়ারিতে লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা সন্ত্রাসবাদ থেকে পর্যটনের দিকে পরিবর্তনে গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তিনি বিশ্বজুড়ে ভ্রমণকারীদের জন্য কাশ্মীরের অপার সম্ভাবনা তুলে ধরেন। 

২০২৩ সালের মে মাসে পর্যটন বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে ভারত কড়া নিরাপত্তায় শ্রীনগরে জি২০ পর্যটন সভাও আয়োজন করেছিল। ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারার অধীনে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর সরকার কাশ্মীরে প্রথম এ ধরনের  অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ সময় সরকার এ অঞ্চলে ‘স্বাভাবিকতা ও শান্তি’ ফিরিয়ে আনার কথা বলে এবং আয়োজনটি তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়েছিল।

জি২০ ইভেন্টের পর জম্মু ও কাশ্মীর সরকার এ বৈঠককে এ অঞ্চলের পর্যটন খাতের জন্য একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে। শীর্ষ সম্মেলনের পর থেকে বিদেশি পর্যটকের আগমন ৫৯ শতাংশ বেড়েছে, যাকে কাশ্মীরের প্রতি নতুন করে বিশ্বব্যাপী আগ্রহের অনুঘটক হিসেবে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। এখন স্বাভাবিকভাবেই এ হামলাকে স্থানীয় অর্থনীতিতে বিশেষত সমৃদ্ধ পর্যটনশিল্পের ওপর সরাসরি আক্রমণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইরফান আমিন মালিক: জম্মু ও কাশ্মীরের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক; মানি কন্ট্রোল থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য র র পর কর ছ ল সরক র ভ রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতি বরখাস্

বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় অসদাচরণের  অভিযোগে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বরখাস্তকৃতরা হ‌লেন: গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মনি, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী  আবদুল্লা আল মামুন, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোছাঃ রাহানুমা তাজনীন, নির্বাহী প্রকৌশলী ফারহানা আহমেদ, সহকারী প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী স্থপতি শিরাজী তারিকুল ইসলাম। 

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় জানায়, কর্মস্থলে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকায় অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশের মাধ্যমে এ সকল কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

জানা গে‌ছে, মনিরুজ্জামান মনি টরেন্টো ইউনিভার্সিটিতে ডক্টোরাল প্রোগ্রামে অংশ নিতে ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি কাটানোর পর পরবর্তী সময়ে অনুমতি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী তাকে ২১ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে বরখাস্ত করা হয়। 

আবদুল্লা আল মামুন পিএইচ.ডি করতে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে  ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। এরপর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা মোতাবেক তাকে ১৫ মে ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।    

মোছাঃ রাহানুমা তাজনীন ২০২১ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের জুলাইয়ের ৭ তারিখ পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে অননুমোদিতভাবে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ২ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।   

ফারহানা আহমেদ ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর  থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ৮ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

মফিজুল ইসলাম ২০২৩ এর ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি কাটালেও পরে ছুটি না নিয়ে অফিসে  অনুপস্থিত। তাকে ২৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

শিরাজী তারিকুল ইসলামও ২০২২ সালের ১২ মে থেকে ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ২১ মে ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন// 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কলকাতায় বাংলাদেশি অভিনেত্রী গ্রেপ্তার , দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমের
  • কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
  • ওভালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত, একাদশে চার পরিবর্তন
  • কর্মস্থলে অনুপস্থিত, পাঁচ প্রকৌশলী ও এক স্থপতি বরখাস্ত
  • গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতি বরখাস্
  • দলবদলের বাজারে চেলসিই রাজা, শীর্ষ দশে আর কারা
  • কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে ডুবে গেছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু
  • গাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়ালো
  • ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত ৩ জন পেহেলগামের হামলাকারী: পার্লামেন্টে অমিত শাহ