জাতীয় নির্বাচনের বিষয় বিবেচনায় রেখে রাজশাহীতে সুকৌশলে মাঠ গোছাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর বিএনপি চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করছে। তারা নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে লিপ্ত হচ্ছে। অন্যদিকে জামায়াত নিজেদের সততা, নৈতিকতা ও মানবিক কার্যক্রমগুলো ভোটারদের সামনে আনছে। তাই শেষ পর্যন্ত মানুষ জামায়াতকে বেছে নেবে।
রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে পাঁচটিতেই দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। এই প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তারা বলছেন, রাজশাহীর ছয়টি আসনই তারা এবার পেতে চান। এ জন্য গত রমজানে ইফতার ও ঈদে মানবিক নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী ঈদের আগে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে দলটির নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে কাশিয়াডাঙ্গা থানা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য হড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে ডা.
রাজশাহী মহানগর সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল বলেন, তাদের দল প্রায় ৩০০ আসনেই প্রার্থী ঠিক করে ফেলেছে। প্রার্থীরা মাঠে-ময়দানে ভালো কাজ করছেন। ঈদ পুনর্মিলনী করেছেন। জামায়াতের পক্ষে ভোটারদের সমর্থন আদায়ে সারাদেশেই গণসংযোগ চলছে। মানুষ পরিবর্তন চায়। বিএনপি বড় দল কিন্তু ৫ আগস্টের পর বিএনপি নিজেদের মধ্যে হানাহানি, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করছে। এসব কারণে বিএনপিকে ভালোভাবে দেখছেন না ভোটাররা।
সম্ভাব্য প্রার্থী আশরাফুল আলম ইমন বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর পরিকল্পনা আছে। ১৫ বছর পর এবার আমরা ভোট দিতে পারব, নতুন প্রজন্ম ভোট দিতে পারবে বলে আশা করছি। পাঁচটি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে। তারা পাড়া-মহল্লায় মানুষের মাঝে ছুটে যাচ্ছেন। গণসংযোগ করছেন। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কারণে মানুষ তাদের আর দেখতে চায় না। বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। তাদের শাসনও দেখেছে জনগণ।’ ছাত্রদের দল নিয়ে তিনি বলেন, ‘এনসিপিকে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে প্রতিযোগী মনে করছি। জামায়াতে ইসলামী চায়, একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে।’
দলের সাংগঠনিক সেক্রেটারি জসিম উদ্দীন বলেন, আগামী নির্বাচনে রাজশাহীর সব ক’টি আসনকে লক্ষ্য করে প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গেই জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে ছেড়ে মানুষ জামায়াতকে ভোট দেবে। কারণ, জামায়াত নীতি-নৈতিকভাবে ভালো, এটা মানুষ বুঝতে পারছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বিএনপির অনেকেই নানা অপরাধে জড়িয়েছে। এসব জনগণ দেখছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রদের নতুন দলকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। তারা ভালো করুক, এটা চাই। তবে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে তাদের আরও সময়ের প্রয়োজন। তারা যেহেতু একটা বিপ্লবে ছিল, তারা স্বপ্ন দেখতেই পারে, কিন্তু আরও অনেক সময় লাগবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম ইসল ম ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনার পরিবারের ৭ সদস্যের বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের পৃথক ছয়টি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ৭ সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন ও ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম ও সুলতান মাহমুদ।
আগামী ১১ ও ১৩ আগস্ট মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের ঠিক করা হয়েছে।
মামলায় অভিযুক্ত শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যরা হলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক (ববি)।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের পৃথক ছয়টি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ৭ সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে অভিযোগ গঠনের পক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন আদালত।
এর আগে গত ২০ জুলাই পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ৭ সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে করা মামলাটি এই আদালতে বদলি হয়।
দুদকের পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের ছয়টি মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরে মামলাগুলো বিচারের জন্য অন্য আদালতে বদলির আদেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত।
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক তিন মামলায় গত এপ্রিলে শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। তিনটি মামলায় তাঁদের ছাড়াও সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদসহ ১৬ জন অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি।
২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের নামে বরাদ্দ নেওয়া প্লটের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করে দুদক।
পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ছয়টি মামলায় শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গত ১০ মার্চ অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেয় দুদক।