ক্ষমা প্রার্থনা করার শ্রেষ্ঠ ৩ সময়
Published: 24th, April 2025 GMT
মানবজাতির প্রকৃতিতে ভুল করা একটি সাধারণ ব্যাপার। আদমকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাকে তার প্রকৃতির অংশ হিসেবে লোভ-লালসা ও বাসনা দান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা শয়তান সৃষ্টি করেছেন, যারা আদমের সন্তানদের পাপের দিকে আহ্বান করে এবং তাদের পথভ্রষ্ট করে। ফলে, যখন মানুষ সৎ ও ন্যায়পরায়ণ হতে চায়, তখন তারা সর্বোচ্চ মর্যাদা অর্জন করে, হয় ফেরেশতাদের চেয়েও উচ্চতর। তবে তারা কখনো কখনো এতটাই নিচু হতে পারে যে, শয়তানের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
আল্লাহ তাআলার বিরাট অনুগ্রহ হলো যে, তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, মহান এবং আমাদের তাওবা কবুল করেন। তিনি আমাদের পাপ ক্ষমা করেন, যদি সত্যিকারভাবে তাওবা করি এবং পুনরায় তা না করার সংকল্প করি, তবে আমাদের সমস্ত ভুল ও অপরাধ তিনি মাফ করে দেন। ক্ষমা প্রার্থনা করাকে তাই আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য ইবাদত নির্ধারণ করেছেন।
আরও পড়ুননামাজের ভেতরে দরুদ পড়ার নিয়ম০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ক্ষমা প্রার্থনা করার শ্রেষ্ঠ সময়গুলো
কোরআন ও হাদিসের বহু বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলা চান, আমরা তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। এমনকি তিনি নবীজিকেও ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেছেন কোরআনে বহুবার। তিনি বলেছেন, ‘জানো, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং তোমাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো।’ (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৯)
অন্য আয়াতে বলেন, ‘তুমি তোমার পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো (হে মুহাম্মদ), এবং তোমার প্রভুর প্রশংসা করো রাত্রি ও দিনকাল।’ সুরা মু’মিন, আয়াত: ৫৫)
এ ছাড়াও বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অসীম ক্ষমাশীল, খুবই দয়ালু।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৬)
মুগিরাহ ইবনে শুবা থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, একদিন নবীজিকে (সা.
বেশ কয়েকটি সময়ের বিষয়ে জানা যায়, তখন ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি খুশি হন। তেমন তিনটি সময় হলো:
১. ইবাদত সম্পাদনের পর: এটি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের ইবাদতের কমতি পূরণ করতে পারি এবং আমাদের ইবাদতের কারণে অহংকার বা আত্মসন্তুষ্টি থেকে রক্ষা পেতে পারি।
কোরআনের শেষ দিকে নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে অবতারিত হওয়া আয়াত গুলির মধ্যে একটি, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং তুমি মানুষদের আল্লাহর ধর্মে প্রবেশ করতে দেখবে, তখন তোমার প্রভুর প্রশংসা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি তাওবা কবুলকারী।’ (সুরা নাসর, আয়াত: ১-৩)
এই আয়াত মহানবী (সা.)-এর কাছে এসে পৌঁছানোর পর, তিনি প্রতি নামাজের পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। নবীজি (সা.) প্রতিটি ভালো কাজ শেষ করার পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। হজ সম্পন্ন করার পর, তিনি মদিনার দিকে রওনা হওয়া শুরু করতেন এই বলে: ‘আমরা ফিরে যাচ্ছি তাওবা করে, ইবাদত করে এবং আমাদের প্রভুর প্রশংসা করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮১৫।
২. পাপ করার পর: আল্লাহ বলেছেন, ‘এবং যারা কোনো খারাপ কাজ করলে বা নিজেদের প্রতি অবিচার করলে, আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে—আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ মাফ করবে—তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করেন, যদি তারা সে পাপের দিকে ফিরে না যায়।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৫)
নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: ‘যদি আল্লাহর কোনো বান্দা পাপ করে, তারপর সঠিকভাবে অজু করে, দুই রাকাত নামাজ পড়ে, এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।’ এরপর তিনি কোরআনের এই আয়াতটি পাঠ করেন, ‘যারা খারাপ কাজ করে বা নিজেদের প্রতি অবিচার করে…’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৭১৫)
৩. গাফিলতিতে থাকার পর: সব মানুষই ভুল করে, এবং অধিকাংশই তারা যা করছে তার প্রতি গাফিল থাকে এবং গাফিলতিতে থেকে তারা আরও পথভ্রষ্ট হয়। যদি আমরা মহানবী (সা.)-এর উদাহরণ দেখি, তবে দেখতে পাব তিনি কখনোই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে গাফিল হতে দেননি। তিনি বলেছেন, ‘কখনো কখনো আমার মনে একটি পর্দা অনুভব করি এবং আমি একদিনে একশত বার আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭০২)
আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেন যারা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি তাদের ক্ষমা করবেন। অবশ্যই, এতে অন্তর্ভুক্ত হল পাপ থেকে বিরত থাকা।
আমাদের পূর্ববর্তী পুণ্যবান মনীষীদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছিলেন, ‘যদি কেউ ক্ষমা প্রার্থনা করে কিন্তু তার পাপ থেকে বিরত না থাকে, তবে সে ক্ষমা প্রার্থনাতে মিথ্যা বলছে।’
পাপ থেকে বিরত থেকে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে, আমরা সত্যিই আশা করতে পারি যে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন। তবে যদি আমরা ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি’ বলি কিন্তু আমাদের অন্তরে পাপ ত্যাগ না করি, তবুও ক্ষমা প্রার্থনা থেকে যেন কিছুতেই বিমুখ না থাকি। আশা করা যায়, আল্লাহ আমাদের অন্তর বদলে দেবেন এবং পাপ থেকে ফিরে থাকার আগ্রহও তৈরি করে দেবেন।
সূত্র: ইসলাম টুডে ডট কম
অনুবাদ: মনযূরুল হক
আরও পড়ুনপ্রতিবেশীকে কষ্ট দিলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না১৪ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ ত আল আম দ র বল ছ ন র জন য ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?