Samakal:
2025-04-30@22:22:52 GMT

আকাশপথে বেড়েছে ইয়াবা পাচার

Published: 24th, April 2025 GMT

আকাশপথে বেড়েছে ইয়াবা পাচার

আবারও বেড়েছে আকাশপথে ইয়াবা পাচার। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় ২৯ হাজার ৮৮৩ পিস ইয়াবা জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। এর অর্ধেকই এসেছে এপ্রিলের দুটি চালানে। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে হঠাৎ করে আকাশপথে মাদক পাচার বেড়ে যায়। তখন এক মাসেই ২১ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, যে কোনো চোরাচালানের ক্ষেত্রে খণ্ডিত একটি অংশই সাধারণত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জব্দ করতে সক্ষম হয়। সেই হিসাব অনুযায়ী, জব্দ পরিমাণের চেয়ে কয়েক গুণ মাদক কৌশলে দায়িত্বশীলদের নজরদারি এড়িয়ে কারবারিদের হাতে পৌঁছে যায়। 

ডিএনসির পরিসংখ্যান বলছে, অক্টোবরে ছয়টি অভিযানে বিপুল মাদক জব্দের পর বিমানে চালান আনার ঘটনা অনেকটা কমে যায়। ফলে নভেম্বরে দুটি অভিযানে শুধু ২ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবা জব্দ হয়। ডিসেম্বরে মদ-বিয়ার জব্দ হলেও ইয়াবা পাওয়া যায়নি। জানুয়ারিতে আবার ইয়াবা চোরাচালান কিছুটা বেড়ে যায়। দুটি অভিযানে মেলে ১০ হাজার পিস। অবশ্য ফেব্রুয়ারিতে একটি অভিযানে ২ হাজার পিস উদ্ধার হয়। মার্চে জব্দের পরিমাণ আরও কমে ১ হাজার ৩৮৩ পিসে নেমে আসে। তবে এপ্রিলে আবারও হঠাৎ করেই বেড়ে যায় আকাশপথে ইয়াবা পাচার। 
ডিএনসির কর্মকর্তারা জানান, মাদকসহ গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সবাই মূলত অর্থের বিনিময়ে বাহক হিসেবে কাজ করেন। প্রতি পিস ইয়াবা কক্সবাজার থেকে এনে ঢাকায় নির্দিষ্ট কারবারির কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১৫ থেকে ২০ টাকা পান তারা। অর্থাৎ, কোনো চালানে ১০ হাজার ইয়াবা থাকলে বহনকারীরা পাবেন অন্তত দেড় লাখ টাকা। বাহকরা সাধারণত প্রতি সপ্তাহেই একবার চালান নিয়ে ঢাকায় আসেন। প্রতি চালানে গড়ে ৫ হাজার পিস ইয়াবা থাকলেও বাহক মাসে পান ৩ লাখ টাকা। এই বিপুল অর্থের লোভেই কক্সবাজার অঞ্চলের বহু মানুষ মাদক কারবারিদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। তাদের বিমান বা বাসে যাতায়াতের টাকাও কারবারিরাই বহন করেন। এমনকি তারা ধরা পড়লে জামিনের ব্যবস্থাও করেন কারবারিরাই। বিনিময়ে হোতারা থেকে যান আড়ালে। বেশির ভাগ ঘটনায় মাদক বহনকারী জানেনই না যে কার চালান বহন করছেন। ফলে ধরা পড়লেও তাদের কাছ থেকে মাদক কারবারের হোতাদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কমই পাওয়া যায়।  

এপ্রিলে তিনটি মাদকের চালান জব্দ করে ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের অধীন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইউনিট। এই ইউনিটের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক তুষার কুমার ব্যানার্জী সমকালকে বলেন, মহাপরিচালকের কিছু নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায় এপ্রিলে মাদক জব্দের পরিমাণ বেড়েছে। তবে জনবল সংকটে এই ইউনিট পুরোদমে কাজ করতে পারছে না। এখানকার ২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১৬ জনকেই ডিএনসির অন্যান্য বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে আটজনকে নিয়ে সব কাজ সামলাতে হচ্ছে। 

ডিএনসি সূত্র জানায়, ১৪ এপ্রিল বিমানবন্দর এলাকা থেকে তিনজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন– ইমরান হোসেন, তার স্ত্রী পারুল আক্তার ও পারুলের চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী রাবিয়া আক্তার। তাদের কাছে ১০ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অর্থের বিনিময়ে ইয়াবার চালান পৌঁছে দিতেই তারা বিমানে ঢাকায় আসেন। তারা তিনজনই কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা। এর তিন দিন আগে ১১ এপ্রিল বিমানবন্দর এলাকায় কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে আসা বিমানযাত্রী শাহামদ আলীকে আটক করা হয়। তল্লাশি করে তার কাছে পাওয়া যায় ৪ হাজার ইয়াবা। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইয়াবার মূল মালিক মোজাম্মেল হক নিজেই বিমানের টিকিট কেটে দিয়েছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী এর আগেও বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পৌঁছে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন শাহামদ। এবারের চালানটি পটুয়াখালীর রাসেল ও রাব্বীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। 

এর আগে ৩ এপ্রিল বিমানবন্দরে কাউছার মিয়াকে এক কেজি ৯০০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করা হয়। তিনি চালানটি ব্রুনাই নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার দাবি, ব্রুনাইপ্রবাসী ওয়াদুতের স্বজন তাকে রান্না করা খাবার ও শুঁটকি মাছের কথা বলে প্যাকেটটি দিয়েছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক রব র র ড এনস

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ