সাভারে রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পূর্ণ হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। ক্ষোভ আর কান্নায় নিহতদের স্মরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার বিচার, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন চেয়েছেন নিহতের স্বজন, আহত ব্যক্তি ও বিশিষ্টজন।
সকাল থেকে রানা প্লাজার সামনে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। সকাল ৭টায় বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে এসে শেষ হয়। পরে সংগঠনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার শ্রমিক আন্দোলন, গার্মেন্টস টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ও গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র শ্রদ্ধা জানায়।
এ সময় টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির আয়োজনে রানা প্লাজার সামনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিদেশি সংস্থাগুলো উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে চাইলে শেখ হাসিনা রাজি হননি। এ সময় তিনি এই দিনটিকে জাতীয় শ্রমিক দিবস ঘোষণার দাবি জানান।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের আইনবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘ভবন মালিক এক যুগ ধরে জেলে আছেন, বিচারকাজ শেষ হয়নি। কারখানা মালিকরা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’
সাভারের রানা প্লাজা ধসের এক যুগেও জড়িতদের শাস্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারী শ্রমিক শিলা বেগম। তিনি জানান, সেদিন তার ডান হাতের রগ কেটে যায়। পেটে ভিম পড়ে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। ভেঙে যায় মেরুদণ্ড। এখন অন্যের সহায়তায় বেঁচে আছেন। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে পারছেন না। তাদের পুনর্বাসন করা না হলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশনে বসবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
দোষীদের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক শ্রমিক ইয়ানুর বলেন, ‘আমরা আর্থিক সহযোগিতা, সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন চাই।’
বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম ইসমাইল বলেন, রানার জায়গা ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে আহত এবং নিহত শ্রমিক পরিবারকে পুনর্বাসন করতে হবে।
ক্ষতিপূরণ পাওয়া শ্রমিকের অধিকার
ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের আজীবন আয়ের মানদণ্ডে ক্ষতিপূরণ পাওয়াকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজন। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা কনভেনশন ২০২৫’ অনুষ্ঠানে তারা এ দাবি জানান। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের উদ্যোগে এ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়।
শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুলের পরিচালনায় কনভেনশনে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ডা.
দ্রুত বিচার চায় আইবিসি
দায়ীদের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানসহ আট দফা দাবি তুলে ধরেছে ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)। নেতারা বলেছেন, রানা প্লাজা নিছক ভবনধস নয়, এটি ব্যর্থ রাষ্ট্রীয় শিল্প কাঠামোর প্রতীক। এই ভবন ধসের ১২ বছর পরও শ্রমিকদের নিরাপত্তা, কণ্ঠস্বর এবং সংগঠিত হওয়ার অধিকার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
গতকাল ডিআরইউ মিলনায়তনে আইবিসি আয়োজিত ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১২ বছর, শ্রদ্ধা, উপলব্ধি ও করণীয়’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইবিসির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাউদ্দিন স্বপন। উপস্থিত ছিলেন আইবিসির সভাপতি তৌহিদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ভবন ধসে ১ হাজার ১৩৮ শ্রমিক মারা যায় এবং আহত হয় প্রায় ২ হাজার শ্রমিক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র ম ন টস র স মন আইব স
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।