কেবল অব্যাহতি দিলেই দায়িত্ব শেষ হয় না
Published: 25th, April 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের সাড়ে আট মাসের মাথায় এসে দুজন উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সচিবের অপসারণের ঘটনা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এই দুই কর্মকর্তা হলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেন ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহাম্মদ তুহিন ফারাবী।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে মোয়াজ্জেম হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলা হয়। কয়েক দিন ধরে বিষয়টি নানা মহলে আলোচিত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে সোমবারই (২১ এপ্রিল ২০২৫) জানানো হলো।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৪ আগস্ট যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস হিসেবে মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, আসিফ মাহমুদ যত দিন এ পদ অলংকৃত করবেন অথবা এপিএস পদে বহাল রাখার অভিপ্রায় পোষণ করবেন, তত দিন এ নিয়োগ আদেশ কার্যকর থাকবে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহাম্মদ তুহিন ফারাবীকেও উপদেষ্টার দপ্তর থেকে তাঁকে অফিসে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২ অক্টোবর তুহিন ফারাবীকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর নিয়োগের অফিস আদেশে বলা হয়েছিল, তুহিন ফারাবীর এ নিয়োগ হবে অস্থায়ী। উপদেষ্টা যত দিন এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন অথবা যত দিন তাঁকে এ পদে রাখার ইচ্ছা পোষণ করবেন, তত দিন তিনি এ পদে বহাল থাকবেন। তুহিন ফারাবী কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মেডিকেল দলের সদস্য।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাবেক পিএস তুহিন ফারাবীর বিরুদ্ধে প্রকল্প অনুমোদন ও মন্ত্রণালয়ের অধীন কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নে অন্যায্য আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও আছে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব অপসারিত হওয়ার পরও তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সোমবার দিনের বেলায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রজ্ঞাপন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকলেও রাতে সেটি প্রত্যাহার করা হয়। তাঁর দাবি, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।
বিলম্বে হলেও অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তাকে অপসারণ করে তাঁদের অপকর্মের দায় থেকে সরকার নিজেকে মুক্ত করেছে। কিন্তু জনগণের জানার অধিকার আছে এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী কী গুরুতর অভিযোগ ছিল। সরকারকে মনে রাখতে হবে, জনগণের করের অর্থেই তঁারা বেতন–ভাতা নিতেন। দুই সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রমাণ সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এখানে বলা প্রয়োজন যে কেবল উল্লিখিত দুই সাবেক একান্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, তা নয়। একটি দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে পাঠ্যবই ছাপাসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে। অব্যাহতিপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তার সুবিধাভোগীদের বিষয়েও সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য উপদ ষ ট স থ ন য় সরক র দ ই কর মকর ত ত কর মকর ত কর মকর ত র উপদ ষ ট র র উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।