পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পালন করা হবে যেসব আচার
Published: 25th, April 2025 GMT
রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন শনিবার। নিজের ভালোবাসার স্থান ব্যাসিলিকা অব সেন্ট মেরি মেজরে সমাহিত করা হবে তাঁকে। গির্জাটি ভ্যাটিকানের বাইরে রোমে অবস্থিত। এক শতাব্দীর বেশি সময়ের মধ্যে ফ্রান্সিসই প্রথম পোপ, যাঁর শেষ ঠিকানা ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় হচ্ছে না।
ভ্যাটিকানে নিজ বাসভবন কাসা সান্তা মার্তায় সোমবার মৃত্যু হয় ৮৮ বছর বয়সী পোপ ফ্রান্সিসের। পোপ হিসেবে প্রায় ১২ বছর দায়িত্ব পালনের সময় সেখানেই অবস্থান করেছেন তিনি। মৃত্যুর পর উন্মুক্ত কফিনে শোয়ানো লাল পোশাকে পোপের মরদেহ রাখা হয় সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায়। তিন দিন পর শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত আটটায় ধর্মীয় আচারের মধ্য দিয়ে বন্ধ করা হয় কফিন।
পোপের কফিন বন্ধ করার একটি বিশেষ রীতি রয়েছে। এই কর্মযজ্ঞে অংশ নেন আটজন কার্ডিনাল। কফিন বন্ধ করার আগে পোপের মুখ ঢেকে দেওয়া হয় সাদা রেশমের কাপড়ে। শরীরে দেওয়া হয় পবিত্র পানি। কফিনের ভেতরে দেওয়া হয় পোপের দায়িত্বকালে তাঁর জন্য তৈরি বিভিন্ন মুদ্রা ও স্মারক। এ ছাড়া তাঁর ১২ বছরের দায়িত্বকালের বিভিন্ন অর্জনের কথাযুক্ত একটি দলিলও কফিনে রাখা হয়।
কফিন বন্ধ করার আগের তিন দিনে ধর্মীয় নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভ্যাটিকানে ছুটে যান হাজার হাজার মানুষ। ভ্যাটিকানের হিসাবে, গতকাল দিনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ পোপের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তাঁদের একজন ফিলিপাইন থেকে আসা মিশেল অ্যালকেইড। তিনি বলেন, ‘আমরা পোপকে ভালোবাসি। শেষবারের মতো তাঁকে দেখতে পেয়ে ধন্য বোধ করছি।’
আরও পড়ুনঅন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার যে প্রথা ভাঙছেন পোপ ফ্রান্সিস১৪ ঘণ্টা আগেপোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আচারেও বিপুলসংখ্যক ভক্তের অংশ নেওয়ার কথা। শনিবার পোপের মরদেহ সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা থেকে বের করার পর স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় এ আচার শুরু হবে। তাতে অংশ নেবেন ২২০ জন কার্ডিনাল এবং ৭৫০ জন বিশপ ও ধর্মযাজক। ধর্মীয় এ আচারের নেতৃত্বে দেবেন ইতালির কার্ডিনাল জিওভান্নি বাতিস্তা রে।
এরপর পোপের কফিন সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা থেকে রোমের ব্যাসিলিকা অব সেন্ট মেরি মেজরে নিয়ে যাওয়া হবে। প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারের এই পথ পাড়ি দেওয়া হবে হাঁটার গতিতে। পথে পড়বে কলোসিয়ামসহ রোমের বিখ্যাত সব পুরাকীর্তি। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কফিনের সঙ্গে থাকবে দরিদ্র মানুষদের একটি দল। দরিদ্রদের প্রতি পোপের ভালোবাসা তুলে ধরতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনপোপের মৃত্যুতে দেওয়া শোকবার্তা মুছে ফেলল ইসরায়েল২৪ এপ্রিল ২০২৫সবশেষ ১৯০৩ সালে পোপ লিও ত্রয়োদশকে ভ্যাটিকানের বাইরে সমাহিত করা হয়েছিল। আর এবার পোপ ফ্রান্সিস ব্যাসিলিকা অব সেন্ট মেরি মেজরে সমাহিত হচ্ছেন। তাঁর এ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের খ্রিষ্টান ধর্মীয় নেতা ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন অন্তত ৫০টি দেশের প্রধানেরা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প।
এদিকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে আসবে নতুন পোপ বেছে নেওয়ার পালা। জটিল এ প্রক্রিয়া ‘কনক্লেভ’ নামে পরিচিত। পোপ ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা জ্যঁ–ক্লাউদি হোলেরিচের ভাষ্যমতে, ৫ অথবা ৬ মে থেকে নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। নতুন পোপ হিসেবে সবচেয়ে জোরালোভাবে যাঁর নাম সামনে আসছে, তিনি হলেন ইতালির কার্ডিনাল পিয়েত্রো পারোলিন।
আরও পড়ুনপ্রেমিকাকে না পেয়ে যেভাবে পোপ হয়েছিলেন ফ্রান্সিস ২১ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ত য ষ ট ক র য়
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।