তাবুক যুদ্ধে যাওয়ার পথে এক ঘণ্টা পথ চলে রাসুলুল্লাহ (সা.) জুআওয়ান নামক স্থানে থামলেন। কোবা মহল্লায় নতুন একটি মসজিদ হয়েছে। নির্মাণকারীরা নবীজির (সা.) কাছে এসে বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, কোবার বর্তমান মসজিদটি আমাদের থেকে বেশ দূরে। দুর্বলদের জন্য কিংবা বৃষ্টির রাতে নামাজ পড়ার জন্য আমরা একটি মসজিদ নির্মাণ করেছি। আপনি আসবেন এবং নামাজ পড়ে মসজিদটি উদ্বোধন করে দেবেন। এতে আমাদের কল্যাণ হবে।’ নবীজি (সা.

) বললেন, ‘আমি সফরে যাচ্ছি। ফেরার পথে ওখানে যাব, ইনশাআল্লাহ।’ (তাফসিরে মারেফুল কোরআন, মুফতি মুহাম্মাদ শফি, অনুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, পৃ. ৫৯২)

তাবুক থেকে ফেরার পথে নবীজি (সা.)কে সতর্ক করে আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা মসজিদ তৈরি করেছে ক্ষতিসাধন, কুফুরি এবং মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, আর যে ব্যক্তি আগে থেকেই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের নিমিত্তে, তারা অবশ্যই শপথ করবে যে আমাদের উদ্দেশ্য সৎ ছাড়া নয়। আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তারা নিশ্চিত মিথ্যাবাদী। তুমি ওর ভেতরে কখনো দাঁড়াবে না। প্রথম দিন থেকেই যে মসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার (খোদাভীতি) ওপর প্রতিষ্ঠিত, তোমার দাঁড়ানোর জন্য সেটাই অধিক উপযুক্ত, সেখানে এমন সব লোক আছে যারা পবিত্রতা লাভ করতে ভালোবাসে, আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।

আরও পড়ুনকুরাইশ নেতার সঙ্গে মহানবীর (সা.) ঐতিহাসিক সংলাপ১৯ এপ্রিল ২০২৫

কে উত্তম? যে তার ভিত্তি আল্লাহ ভীরুতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপর স্থাপন করে সে, নাকি ওই ব্যক্তি যে তার ভিত্তি স্থাপন করে পতনোন্মুখ একটি ধসের কিনারায় যা তাকে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে ধসে পড়বে? আল্লাহ অত্যাচারীদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন না। তাদের তৈরি ঘরটি তাদের অন্তরে সব সময় সন্দেহের উদ্রেক করে যাবে, যে পর্যন্ত না তাদের হৃদয়গুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, মহা প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১০৭-১১০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন একদল সাহাবিকে এই কথিত মসজিদটি ভাঙতে পাঠালেন। তিনি মদিনায় পৌঁছার আগেই স্থাপনাটি একেবারে ধ্বংস করে দেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির, ৫/৪৪)

তাফসিরুল মুনিরে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মালিক বিন দুখশুম, মাআন বিন আদি, আমের বিন সাকান ও ওহশিকে ডেকে এই মসজিদ জ্বালিয়ে ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে তাঁরা সেটি জ্বালিয়ে দেন এবং ধ্বংস করে ফেলেন। অবিশ্বাসের বিস্তার ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ব্যক্তিদের ঘাঁটি হিসেবে এ মসজিদ বানানো হয়েছিল। সেখানে তারা লোক দেখানো নামাজ পড়ত আর অশান্তি সৃষ্টি এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে বহিঃশত্রুর আক্রমণের সুযোগ তৈরিসহ নানা রকম ষড়যন্ত্র করত। খ্রিষ্টান পাদরি আবু আমেরের উসকানিতে এটি গড়ে তোলা হয়েছিল। আবু আমের ছিল পথভ্রষ্ট ও অবিশ্বাসী। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার পর আবু আমের একবার তাঁর কাছে এসে ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করল। নবীজি (সা.) উত্তর দিলেন। কিন্তু সে সন্তুষ্ট হলো না। বলল, ‘আমাদের মধ্যে যে মিথ্যুক, সে যেন অভিশপ্ত ও আত্মীয়স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মারা যায়। আর আমি আপনার প্রতিপক্ষের সাহায্য করব।’ সে প্রতিটি যুদ্ধে মুসলমানদের বিরোধিতা করে চলল। হাওয়াজেনরা মুসলমানদের কাছে পরাজিত হলে সে সিরিয়ায় চলে যায়। সিরিয়া ছিল সেসময় খ্রিষ্টানদের কেন্দ্র। সেখানে আত্মীয়স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুনকীভাবে জিন জাতির সৃষ্টি হলো১৮ এপ্রিল ২০২৫

এর আগে রোম সম্রাটকে মদিনায় আক্রমণের প্ররোচনা দিয়েছিল আবু আমের। তখন সে মদিনার মুনাফিকদের কাছে চিঠি লিখেছিল, ‘রোম সম্রাটকে দিয়ে মদিনায় আক্রমণের চেষ্টা আমি করছি। সম্রাটের সাহায্যের জন্য সম্মিলিত শক্তি গড়ে তোল। সে জন্য মসজিদের নাম দিয়ে তোমরা একটি ঘর বানাও। সে ঘরে সংগঠিত হও, যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জাম রাখো। পরস্পরে কর্মপন্থা ঠিক করো।’ মদিনার ১২ জন মুনাফিক তাই করল। মদিনার অদূরে কোবা এলাকায় একটি মসজিদ করল। এটি ‘মসজিদে জিরার’ নামে পরিচিত। (তাফসিরে মারেফুল কোরআন, মুফতি মুহাম্মাদ শফি, অনুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, পৃষ্ঠা: ৫৯২-৫৯৩)

আল্লাহ মানুষকে মসজিদ নির্মাণে উৎসাহিত করেছেন। নবীজি (সা.) তাগিদ করেছেন। জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তবে মসজিদ নির্মাণ হতে হবে তাকওয়ার ওপর ভিত্তি করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। মুসলমানদের কল্যাণের জন্য। লোক দেখানো, লৌকিকতা প্রদর্শন, আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে বা ইসলামের ক্ষতিসাধন হয়—এমন মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না।

লেখক: আলেম

আরও পড়ুনউত্তম ব্যবহার হৃদয়ের জান্নাত১৮ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মসজ দ ন র ম ণ ধ ব স কর মদ ন য় র জন য আম দ র ম নদ র আল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি

‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে ‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।

এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’

‎বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন

‎জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।

‎তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।

‎কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।

‎পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”

‎গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”

‎অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, ‎যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”

ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ