সিন্ধু পানি চুক্তি কী, ভারত কি এটি বাতিল করতে পারে
Published: 26th, April 2025 GMT
কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ভারত। প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমানোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ভারত এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত বুধবার নয়াদিল্লি সিদ্ধান্তটি নেওয়ার আগ পর্যন্ত এ দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ এবং কূটনৈতিক সম্পর্কে নানা উত্থান-পতনের মধ্যেও চুক্তিটি টিকে ছিল।
সিন্ধু পানি চুক্তি কী
ভারতের উজান থেকে পাকিস্তানের সিন্ধু অববাহিকায় প্রবাহিত নদীগুলোর পানি ব্যবহার নিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের।
সিন্ধু পানি চুক্তি অনুসরণ করেই এসব নদীর পানি ব্যবহার করা হয়। ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় এ চুক্তি হয় এবং ভারত ও পাকিস্তান তাতে স্বাক্ষর করে।
চুক্তিটির মাধ্যমে সিন্ধু ও এর উপনদীগুলোর পানিকে দুই দেশের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয় এবং পানিবণ্টনের নিয়ম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সিন্ধু অববাহিকার পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি নদী ইরাবতী, বিপাশা ও শতদ্রুর পানি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয় ভারতকে। আর পাকিস্তানকে পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি নদ-নদী সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাবের অধিকাংশ পানি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
চুক্তিটি কোনো দেশ একতরফাভাবে স্থগিত বা বাতিল করার বিধান নেই। বরং এতে সুস্পষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
পানি নিয়ে যে উদ্বেগ কাজ করছে
পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী এ দুই দেশ বহু বছর ধরে ভারতীয় ভূখণ্ডে সিন্ধু ও এর উপনদীগুলোর ওপর বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে বিরোধ ও বিতর্কে জড়িয়েছে।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচের জন্য পাকিস্তান এই নদীব্যবস্থার পানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। দেশটি বলছে, ভারত উজানে বাঁধ নির্মাণ করে অন্যায়ভাবে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। তবে ভারত এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ভারতীয় বাঁধগুলো নদীর পানির প্রবাহ কমিয়ে দেবে বলে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান। দেশটির সেচনির্ভর কৃষির ৮০ শতাংশ পানি জোগায় এসব নদী। দেশটি সাম্প্রতিক দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ এবং পরে একটি সালিশি আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়েছে।
ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান অভিযোগ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করছে। দেশটি বলেছে, সিন্ধু চুক্তির আওতায় কিশানগঙ্গা ও রাটলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ বৈধ। অভিযোগ নিষ্পত্তিতে এমন বিলম্ব এড়াতে চুক্তি সংশোধনের দাবিও তুলেছে ভারত।
চেনাব নদীর ওপর ভারতের নির্মিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ‘বাগলিহার হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট’–এর একটি দৃশ্য। কাশ্মীরের পেহেলগামে গত মঙ্গলবার বন্দুকধারীদের হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু আন্তর্জাতিক পানি চুক্তি একতরফা স্থগিত করেছে ভারত.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জলব দ য ৎ প রকল প ব যবহ র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
মেয়র পদ নিয়ে ইশরাকের মামলায় ইসির ভূমিকায় এনসিপির উদ্বেগ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদ নিয়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মামলা, একতরফা রায় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কার্যক্রম ও তৎপরতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়। এতে বলা হয়, বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার বিষয়ে এনসিপি সর্বোচ্চ মনোযোগ দাবি করছে।
বিবৃতিতে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি, উল্লিখিত মামলার প্রথম তিন বছর পাঁচ মাসে ৩২টি তারিখ নির্ধারণ করা হলেও ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে মাত্র চার মাসে ১৭টি তারিখ দিয়ে মামলাটি তড়িঘড়ি করে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। কিন্তু একই সময়ে অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে এত দ্রুততার সঙ্গে তারিখ ধার্য করা হয়নি। ফলে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল শুধু এই মামলার একটি পক্ষকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে অন্যায্য সুবিধা প্রদান করেছেন কি না, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।’
এ মামলায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা রহস্যজনক ছিল দাবি করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এই মামলার বিবাদী হওয়া সত্ত্বেও মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। ফলে একতরফা রায় প্রদান করা হয়েছে। এমনকি রায়ের পরে তারা উচ্চ আদালতে প্রতিকার প্রার্থনা না করে মামলার বাদীকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘কমিশনের এমন তৎপরতা অস্বাভাবিক ও উদ্বেগজনক। এর আগেও আমরা দেখেছি নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষ আচরণ বজায় রাখার পরিবর্তে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে, যা একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দিচ্ছে বলে জনগণ মনে করে।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘এই রায় ঘোষণার আগেই সংশ্লিষ্ট আইনের অধীন গত ১৯ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে পুরো মামলাটিই অকার্যকর হয়ে গেছে। এরপরও রায় ও তড়িঘড়ি করে কমিশন কর্তৃক গেজেট প্রকাশের পেছনে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা জনসাধারণের সামনে পরিষ্কার করতে হবে।’
আরও পড়ুনইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ ইসির২৭ এপ্রিল ২০২৫২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল বাতিল এবং ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন আদালত। ইশরাক ২০২০ সালের ৩ মার্চ নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেছিলেন। রোববার রাতে তাঁকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
আরও পড়ুনঅবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে, মেয়র পদে বসা নিয়ে বললেন উপদেষ্টা২৬ এপ্রিল ২০২৫