আবারও গরমকাল চলে এসেছে। কয় দিন আগে পত্রিকান্তরে জানতে পারলাম, শুধু ফেনীতেই ১ লাখ ৬৭ হাজার নলকূপে পানি উঠছে না। যদি ঠিকমতো খবর নেওয়া হয়, সারা দেশে এমন করুণ বাস্তবতা পাওয়ার কথা।

পানি নিয়ে আমাদের দুটি সমস্যা। প্রথমত, গরমকালে আমরা পানি একেবারেই পাচ্ছি না। আবার বর্ষায় অতিরিক্ত পানি আমাদের বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে। এটা ঠিক, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। সঙ্গে আছে পাশের দেশ ভারতের নজিরবিহীন অসহযোগিতা; আর আমাদের নিজেদের গাফিলতি তো আছেই। এভাবে যদি দেশ চলতে থাকে, তাহলে বন্যা বা খরার জন্য এই দেশ কখনো দাঁড়াতেই পারবে না।

গত ২৯ আগস্ট প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত ‘বন্যা সমস্যার অনেক সমাধান আমাদের হাতেই’ লেখায় আমি এই পানি সমস্যা কীভাবে আন্তর্জাতিক ও প্রযুক্তিগতভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এ নিয়ে আরও লেখালেখি করেছি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আসলে মেগা প্রকল্প আশা করা যায় না, তাদের থেকে আমাদের আশা আন্তর্জাতিক সমাধানগুলো শুরু করা, যাতে পরবর্তী সরকার এলে সেই ধারাবাহিকতায় কাজ করতে পারে। প্রযুক্তিগত সমাধান নিয়ে আসবে পরবর্তী সরকার।

১৭ এপ্রিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, বাংলাদেশ জাতিসংঘ পানি কনভেনশন ১৯৯২ স্বাক্ষর করার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানও তাঁর বক্তব্যে তিস্তা প্রকল্প ও খাল খনন প্রকল্প গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প নিয়ে এখনো কেউ কথা বলেনি, কিন্তু উত্তর-দক্ষিণবঙ্গকে বাঁচাতে হলে এই প্রকল্প গ্রহণের বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে আশা করি অন্য রাজনৈতিক দলগুলাও নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে আসবে।

কিন্তু কথা হচ্ছে, আমাদের ১৯৯২ সালের কনভেনশনে স্বাক্ষর করে কি লাভ হবে? জাতিসংঘের আন্তদেশীয় পানিপ্রবাহ নিয়ে দুটি কনভেনশন আছে। শুরুতেই ওগুলো সম্পর্কে একটু জেনে নিই।

আরও পড়ুনবন্যার অনেক সমাধান আমাদের হাতেই২৯ আগস্ট ২০২৪দেরিতে হলেও সরকার এবং বিএনপি আমাদের পানি সমস্যা নিয়ে কাজ ও কথা বলা শুরু করেছে। তারা যত এটা নিয়ে কথা বলবে, তত আমরা সমাধানের কাছে পৌঁছাতে পারব। অন্য রাজনৈতিক দলও এগিয়ে আসবে আশা করি। আমাদের সুপেয় পানির প্রাপ্তি কমে আসছে। অন্যের দয়ার ওপর নির্ভর না করে পানির ব্যবস্থা আমাদের নিজেদেরকেই করতে হবে।

১৯৯২ সালের কনভেনশনের পূর্ণ নাম হলো ‘কনভেনশন অন দ্য প্রটেকশন অ্যান্ড ইউজ অব ট্রান্সবাউন্ডারি ওয়াটারকোর্সেস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল লেকস’। এটি ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিশনের (ইউএনইসিই) উদ্যোগে হেলসিঙ্কিতে গৃহীত হয়। মূলত ইউরোপ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে আন্তসীমান্ত পানিপ্রবাহ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশগত সুরক্ষার লক্ষ্যে এ চুক্তি তৈরি হয়। কনভেনশনটি ১৯৯৬ সালে কার্যকর হয় এবং ২০১৬ সাল থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্যও উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে সদস্যদেশগুলোকে যৌথভাবে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, তথ্য বিনিময়, আগাম সতর্কতা এবং দূষণ প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।

অন্যদিকে ১৯৯৭ সালের কনভেনশনটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয় এবং এর পূর্ণ নাম হলো ‘কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য নন-নেভিগেশনাল ইউজেস অব ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটারকোর্সেস’। এই চুক্তির লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহের নৌযান ব্যতীত অন্যান্য ব্যবহার (যেমন কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পানি সরবরাহ ইত্যাদি) সংক্রান্ত আইন নির্ধারণ এবং এসব ব্যবহারে ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতার ভিত্তিতে বণ্টন নিশ্চিত করা। এই চুক্তি ২০১৪ সালে কার্যকর হয়, যখন প্রয়োজনীয় ৩৫টি দেশ এটিকে অনুমোদন করে। এতে ন্যায্য ও যৌক্তিক ব্যবহার এবং অন্য দেশকে গুরুতর ক্ষতি না করার নীতি অন্যতম মূল দিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

১৯৯২ সালের চুক্তি পরিবেশগত সুরক্ষা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে অধিক গুরুত্ব দেয়, যেখানে ১৯৯৭ সালের চুক্তি আইনগত কাঠামোর মাধ্যমে পানির যৌক্তিক ও ন্যায্য ব্যবহারে জোর দেয়। ১৯৯৭ সালের কনভেনশনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার নিয়ম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেখানে ১৯৯২ সালের চুক্তিতে মূলত আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে জোর দেওয়া হয়েছে।

আমাদের তাহলে কোনটি দরকার? হ্যাঁ! ভারতের পানি প্রত্যাহারের জন্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রতিবছর খরায় ক্ষতি গড়ে ২ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা (কালের কণ্ঠ, ১৬ নভেম্বর ২০২২) এবং বন্যায় প্রতিবছর গড়ে ক্ষতি হয় ৩০ হাজার কোটি টাকা (জাগোনিউজ২৪, ২৮ জুন ২০২২)। প্রাণহানির কথা তো বাদই দিলাম। ১৯৯২ সালের চুক্তির মাধ্যমে কি আমরা আলোচনা করে এই ক্ষতিপূরণ আনতে পারব? এটা অসম্ভব এবং অবাস্তব চিন্তা। তবে গত বছরের মতো নোটিশ ছাড়া ভারত পানি ছেড়ে দিলে আমরা সেই ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারব।

আমাদের দরকার ১৯৯৭ সালের কনভেনশনের স্বাক্ষর করে পানির ন্যায্য হিস্যা আনা। যদি আমরা ঠিকমতো পানি পাই, আমাদের অনেক পরিবেশগত সমস্যাই কমে যাবে। ভারতের অভিন্ন ৫৪টি নদীর ৫৩টিতেই দেওয়া বাঁধ দিয়ে যে পানি প্রত্যাহার করছে, আমরা তার প্রতিবাদ করার অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে পাব। ইতিমধ্যে ভারতের ২২টি রাজ্যের নদী অববাহিকায় নির্মাণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ টি বাঁধ। আরও অনেকগুলো বাঁধ পাইপলাইনে আছে। (ইন্টারন্যাশনাল রিভার্স ডট ওআরজি) জিবিএম অববাহিকার দেশগুলোর পরিকল্পনাধীন বাঁধের সংখ্যা ৪১৪। এর মধ্যে নেপালে ২৮৫টি, ভারতে ১০৮টি, ভুটানে ১২টি, চীনে ৮টি ও বাংলাদেশে ১টি। (বণিক বার্তা, ২৯ এপ্রিল ২০২৩)

ব্রহ্মপুত্র নদের চীনা অংশ ইয়ারলুং স্যাংপো থেকে পীত নদীতে বছরে ২০ হাজার কোটি ঘনফুট পানি সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে চীনের। অন্য দিকে ন্যাশনাল রিভার লিংকিং প্রজেক্টের (এনআরএলপি) আওতায় ৯ হাজার ৬০০ কিলোমিটার খাল খননের মাধ্যমে নিজ সীমানার ৪৪টি নদীকে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। তারা এই বাঁধের ফলে যে আয় করছে, তার ভাগও আইনমতো আমাদের প্রাপ্য।

যেহেতু ১৯৯৭ সালের কনভেনশনে স্বাক্ষর করলে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারব। যৌথ নদী কমিশনের সভাগুলোতে আমরা ভালো দেনদরবার করার অবস্থানে থাকব। আমাদের আমলা ও কূটনীতিকেরা যে দেনদরবারে খুব একটা দক্ষ নন, অতীতে বিভিন্ন চুক্তির ক্ষেত্রে আমরা তা দেখেছি। এখন পর্যন্ত যৌথ নদী কমিশন থেকে আমাদের প্রাপ্য খুব নগণ্য।

দেরিতে হলেও সরকার এবং বিএনপি আমাদের পানি সমস্যা নিয়ে কাজ ও কথা বলা শুরু করেছে। তারা যত এটা নিয়ে কথা বলবে, তত আমরা সমাধানের কাছে পৌঁছাতে পারব। অন্য রাজনৈতিক দলও এগিয়ে আসবে আশা করি। আমাদের সুপেয় পানির প্রাপ্তি কমে আসছে। অন্যের দয়ার ওপর নির্ভর না করে পানির ব্যবস্থা আমাদের নিজেদেরকেই করতে হবে। সেই সামর্থ্য আমাদের আছে। শুধু দরকার সঠিক পরিকল্পনা এবং আমলাতন্ত্র ভেঙে দ্রুত বাস্তবায়ন।

সুবাইল বিন আলম টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট।

ই–মেইল: [email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র প প রকল প ব যবহ র ব যবস থ পর ব শ অন য র র জন য সরক র সমস য ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

অক্সিডেন্টাল টাকা নিয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণ পায়নি স্থানীয়রা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া বিস্ফোরণের ২৮ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ শনিবার। ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মধ্যরাতে মাগুরছড়ার ফুলবাড়ী চা বাগানের সম্মুখভাগে অবস্থিত ১ নম্বর গ্যাস অনুসন্ধান কূপে খননকালে ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল আশপাশের এলাকা। বিস্ফোরণের ধাক্কায় আগুনের লেলিহান শিখা ৬০০ ফুট উচ্চতায় উঠে যায়। পুড়ে কয়লা হয়ে যায় লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনের আশপাশের গাছপালা, মারা যায় বহু পশুপাখি। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় চা বাগান, বিদ্যুৎ লাইন, রেলপথ, গ্যাস পাইপলাইন, গ্যাসকূপ, রিজার্ভ গ্যাস, পরিবেশ প্রতিবেশ ও ভূমিস্থ পানিসম্পদ। ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য আজও ভাসে মৌলভীবাজার জেলাবাসীর মনে। অথচ সেই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কূপ খননকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান অক্সিডেন্টালের কাছ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারেনি সরকার। উল্টো নিজেদের যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার বীমার টাকা তুলে ভেগেছে অক্সিডেন্টাল। 

১৯৯৫ সালে বৃহত্তর সিলেটের ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয় মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টাল অব বাংলাদেশ লিমিটেডের। অনুসন্ধান শুরুর পর তেল-গ্যাসে সমৃদ্ধ হবে এলাকা– এই ভেবে কমলগঞ্জ তথা মৌলভীবাজারের মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত হয়। তেল-গ্যাসের সন্ধানে ৩ হাজার ৭০০ মিটার কূপ খননের লক্ষ্য নিয়ে কাজও শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ৮৪০ মিটার খননের পরই ঘটে দুর্ঘটনা। টানা ১৫ দিন আগুন জ্বলার পর যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের ইন্টারন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির বিশেষজ্ঞ রিচার্ড চাইল্ড রিসহ চার সদস্যের একটি দল আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে পুরো কূপের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে প্রায় ছয় মাস। 
বিভিন্ন সময় তেল-গ্যাস বিশেষজ্ঞরা মাগুরছড়া বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনুমান করতে চেষ্টা করেছেন। তাদের মতে, মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্রে  ভূগর্ভস্থ উত্তোলনযোগ্য ২৪৫ দশমিক ৮৬ বিসিএফ গ্যাস পুড়ে যায়; যার দাম ছিল প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষতি ছিল আরও ১১ হাজার কোটি টাকার। বর্তমান বাজারমূল্য হিসাব করলে মোট ক্ষতির পরিমাণ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অগ্নিকাণ্ডে মাগুরছড়া ও আশপাশের ৮৭ দশমিক ৫০ একর এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের গবেষণায় দেখা গেছে, মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের কারণে ২৯টি চা বাগানের ৪৬ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৮৩০ টাকার ক্ষতি হয়। লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৬৯ দশমিক ৫ হেক্টর এলাকার ২৫ হাজার ৬৫০টি পূর্ণবয়স্ক গাছ পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতি হয় প্রায় ৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকার। ওই ঘটনার সরকারি তদন্তে ক্ষতি বাবদ ধরা হয় ৫০৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ ছাড়া বনাঞ্চলের সম্ভাব্য ক্ষতি হয়েছে ৪০ হেক্টর ভূমি এবং ১৫ হাজার ৪৫০টি বৃক্ষ। ধারণা করা হয়, আগুনের কারণে ১০ বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৮৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ, বনাঞ্চলের মোট ক্ষতি ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৫৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বিস্ফোরণের ফলে ২ হাজার ফুট রেলপথও ধ্বংস হয়। এতে রাজস্ব ছাড়া ক্ষতি হয়েছে ৮১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯৫ টাকা। সড়কপথের ক্ষতি ২১ কোটি টাকা। গ্যাস পাইপলাইনের ক্ষতি ১৩ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষতি ১ কোটি ৩৫ লাখ ৯ হাজার ১৮৬ টাকা। মাগুরছড়া খাসিয়া পানপুঞ্জির অধিবাসীদের পানের বরজগুলোতে প্রতিদিন ৪৭ হাজার ৭৫০ টাকা হারে মোট ক্ষতি হয় ১২ লাখ টাকা।

১৯৯৭ সালের ১৪ জুন বিস্ফোরণের পর জ্বলতে থাকা কূপের উৎস মুখ বন্ধ করার কাজ সম্পন্ন হয় পরের বছর ৯ জানুয়ারি। তার আগেই ১৯৯৭ সালের ২০ ডিসেম্বর অক্সিডেন্টাল মাগুরছড়া থেকে বিদায় নেয়। এতে দেশজুড়ে দেখা দেয় তীব্র প্রতিক্রিয়া।
মাগুরছড়া তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতা সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, মাগুরছড়া অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারি যে তদন্ত কমিটি হয়েছিল, তারা এক মাসের মধ্যেই তাদের প্রতিবেদন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। ওই প্রতিবেদন বীমা কোম্পানিতে জমা দিয়ে সেই সময়ই অক্সিডেন্টাল তাদের বীমাকৃত যন্ত্রাংশ, রিগ ইত্যাদির ক্ষতিপূরণ আদায় করে নেয়। অথচ যে অক্সিডেন্টালের কারণে এত বড় ক্ষতি হলো, তাদের কাছ থেকে সরকার বা এলাকাবাসী এখনও কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বনের ক্ষতি নিরূপণ করা হলেও এ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিক বনের ক্ষতি কখনও পুষিয়ে ওঠার নয়। পরিবেশ বিপর্যয়ের ব্যাপারে আগের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
এদিকে মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ কমলগঞ্জে মানববন্ধন করবে পাহাড় রক্ষা উন্নয়ন সোসাইটি, জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি, কমলগঞ্জ উন্নয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। মাগুরছড়া বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও কমলগঞ্জের ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের দাবি জানিয়েছে তারা। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইমরানের রাজনীতির ‘শিকার’ মিয়াঁদাদ, পাকিস্তান ক্রিকেটের ধ্বংসের শুরু
  • ২৮ বছরেও মাগুরছড়া বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ পায়নি বাংলাদেশ
  • অক্সিডেন্টাল টাকা নিয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণ পায়নি স্থানীয়রা