রেজিস্ট্রারের অপসারণ দাবিতে কক্ষে তালা, কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ
Published: 27th, April 2025 GMT
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণের দাবিতে তাঁর কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনরত একদল শিক্ষার্থী। আজ রোববার দুপুরে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ’–এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের কুশপুত্তলিকা দাহ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাঁরা জানান, রেজিস্ট্রারের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর কক্ষের তালা খোলা হবে না। তালা লাগানোর সময় রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম অফিসকক্ষে উপস্থিত ছিলেন না। কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দিয়ে তালা লাগানো হয় বলে ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীরা আরও দাবি করেন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের পদে পুনর্বহাল করতে হবে। পাশাপাশি ‘স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর’ হিসেবে চিহ্নিত শিক্ষকদের লাভজনক কমিটি থেকে অপসারণ করতে হবে। এই শিক্ষকদের পুনর্বাসনের জন্য উপাচার্য শুচিতা শরমিনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত ১৩ এপ্রিল উপাচার্যের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় আইন ভেঙে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও মনপুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে নানা অনিয়মের পরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে বহাল রাখা হয়েছে। অবিলম্বে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার করে তাঁকে পুনর্বহাল করতে হবে। তা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন তাঁরা।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসরেরা অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছে এবং তাঁকে একাডেমিক ও সিন্ডিকেট থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। আমরা কিছুদিন যাবৎ আন্দোলন করে এলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো পাত্তা দিচ্ছে না। তার পরিপ্রেক্ষিতে আজকে রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা দিয়েছি। যতক্ষণ পর্যন্ত এর সুষ্ঠু সমাধান না হবে আমরা এই তালা খুলব না এবং খুলতেও দেব না।’
আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী রাকিন খান বলেন, ‘রেজিস্ট্রারকে দাপ্তরিকভাবে অপসারণ করা না হলে তালা খুলব না। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিরোধীতাকারীদের মধ্যে অন্যতম।’
এর আগে ২৪ এপ্রিল রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণসহ চার দফা দাবিতে দুই দিনের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে অধ্যাপক মো.
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম রোববার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে উপাচার্যের নির্দেশে অপসারণের চিঠিতে আমার স্বাক্ষর ছিল। এরপর অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিন উচ্চ আদালতে এই অপসারণ আদেশ চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। রিটটি আদালত গ্রহণ করেননি। এরপর কতিপয় শিক্ষার্থীকে উসকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব আন্দোলন করানো হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের চার বছরের চাকরির মেয়াদ গত ৩০ জানুয়ারি পূর্ণ হয়। এরপর উপাচার্য চিঠি দিয়ে তাঁকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন এবং একই চিঠিতে আগামী সিন্ডিকেট সভায় তাঁর বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
ব্যক্তিগত সম্পদ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম এবিসির এক সাংবাদিকের ওপর ভীষণ চটে যান। ওই সাংবাদিকের কারণে ‘অস্ট্রেলিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে’ বলে সতর্ক করেন তিনি। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে ওই সাংবাদিকের ব্যাপারে নালিশ করারও হুমকি দেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের লনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। এবিসির সাংবাদিক জন লায়ন্সও তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন। লায়ন্স এবিসিতে প্রচারিত ফোর কর্নারস অনুষ্ঠানের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।
গতকাল লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কতটা ধনী হয়েছেন? তিনি আরও উল্লেখ করেন, ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে অবস্থান করা সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি না।’ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ট্রাম্প অর্গানাইজেশন নামে তাঁর যে পারিবারিক ব্যবসাটি আছে, সেটি এখন তাঁর সন্তানেরা পরিচালনা করেন।
ট্রাম্পের দাবি, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বেশির ভাগ ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন যে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।এরপর লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’
এরপর লায়ন্সকে ট্রাম্প জিজ্ঞাসা করেন, তিনি (লায়ন্স) কোথা থেকে এসেছেন।
এরপর ট্রাম্প চটে গিয়ে বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে লায়ন্স ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতি’ করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলতে থাকেন, ‘আমার মতে, আপনি এ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার অনেক ক্ষতি করছেন। আর তারা আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। আপনি জানেন, আপনার নেতা (অ্যান্থনি আলবানিজ) শিগগিরই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। আমি তাঁকে আপনার ব্যাপারে বলব। আপনি খুব খারাপ ভঙ্গিতে কথা বলছেন। আপনি আরও ভালোভাবে কথা বলুন।’
সাংবাদিক লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’এরপর লায়ন্স আবারও কিছু বলতে গেলে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘চুপ করুন’।
গত জুনে কানাডায় জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে প্রথমবারের মতো ট্রাম্প ও আলবানিজের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে হঠাৎই তা বাতিল হয়ে যায়। এর পর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করছেন আলবানিজ।
আরও পড়ুনট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডার পর কী বললেন স্টারমার ও আলবানিজ০১ মার্চ ২০২৫সম্প্রতি আলবানিজ বলেছেন, নিউইয়র্কে বিশ্বনেতাদের সম্মেলন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানকালে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দেখা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিউইয়র্কে আমাদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হবে। আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার রাতে তিনি একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। এ ছাড়া চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিভিন্ন ফোরামে আমাদের দেখা হবে। এটা সম্মেলনের মৌসুম।’
ট্রাম্পের সঙ্গে আলবানিজের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে পেন্টাগনের অকাস পারমাণবিক সাবমেরিন চুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় বাড়াতে ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার কাছে যে দাবি জানিয়েছেন, তা নিয়ে পর্যালোচনা।